ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রিং সাইন অধিগ্রহণে বেপজার অসহযোগিতায় বিএসইসির হস্তক্ষেপ কামনা

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৭, ১৯ অক্টোবর ২০২২   আপডেট: ২০:৩৪, ১৯ অক্টোবর ২০২২
রিং সাইন অধিগ্রহণে বেপজার অসহযোগিতায় বিএসইসির হস্তক্ষেপ কামনা

পুঁজিবাজারের বস্ত্রখাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রিং সাইন টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণ করতে আগ্রহী ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলস। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), রিং শাইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ব্যাংক, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষসহ (বেপজা) সকল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এ অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অন্যান্যরা এগিয়ে আসার কথা জানালেও বেপজার পক্ষ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলস।

সম্প্রতি বেপজার সঙ্গে বৈঠক করেও সহযোগিতা না করার বিষয় উল্লেখ করে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়া-উল-ইসলামের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে ওয়াইজ স্টার।

এর আগে, গত ১৭ মে ইউনিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিং সাইন টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণে আগ্রহী বলে বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠায়। তবে ইউনিয়ন গ্রুপ কোম্পানিটির অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসায় ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলস এ কাজে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওয়াং জেমির ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।

বিএসইসির অধিগ্রহণের অনুমতি ও সহায়তা পেলে প্রথম ৬ মাসের মধ্যে রিংসাইন টেক্সটাইলের সকল মেশিন রিমডেলিং এবং মেরামত করা হবে বলে জানিয়েছে ওয়াইজ স্টার। আর আগামী ২০২৩ সালের মার্চ/এপ্রিলের মধ্যে প্রতি মাসে ৬ থেকে ৮ মিলিয়ন (৬০-৮০ লাখ টাকা) ব্যবসায় থেকে আয় করা সম্ভব হবে। এতে কোম্পানিটির প্রতি হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করে ওয়াইজ স্টার।

বর্তমান পরিস্থিতিতে‌ উল্লেখ করে ওয়াইজ স্টার চিঠিতে জানিয়েছে, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধের কারণে মন্দা চলছে। ফলে গার্মেন্টসের অর্ডার কমে গেছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অর্থনীতিবিদরাও উদ্বিগ্ন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেপজা, সুদের সাথে ব্যাংকের বকেয়া, কাস্টমস বকেয়া এবং অন্যান্য সবমিলিয়ে রিং সাইনের মোট দায় প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। যেখানে কোম্পানিটির সম্পদ তার তুলনায় কম। কারখানাটিকে প্রতি মাসে প্রায় ১০-১২ মিলিয়ন সক্ষমতার সর্বোত্তম উৎপাদনের জন্য আরও ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এদিকে, স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিএসইসি ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সফলভাবে চুক্তি করার জন্য সহযোগিতা করছে। বাংলাদেশের বস্ত্র ও গার্মেন্টস শিল্পকে সহায়তা করতে সরকার আগ্রহী। ফলে টেকসই এবং অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন করার জন্য শর্তাবলীর মাধ্যমে এ শিল্পের অনুকূলে ব্যাংক ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি সার্কুলার জারি করেছে। যাতে ব্যাংক ন্যূনতম ডাউন পেমেন্টসহ ৭ বছর পর্যন্ত ঋণ পুনঃনির্ধারণ করতে পারে৷

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এরই প্রেক্ষিতে সকল ব্যাংক যুক্তিসঙ্গত ভাবে সুদ মওকুফ করতে এগিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক সার্কুলার অনুযায়ী ঋণ পুনঃনির্ধারণে কোম্পানিগুলোকে সাহায্য করছে৷ এ ছাড়া রিং সাইনের দায় পর্যালোচনার জন্য এনবিআরের (কাস্টমস, এক্সাইজ এবং ভ্যাট) সঙ্গে ওয়াইজ স্টার কাজ করেছে। কিন্তু বেপজা বিভিন্ন সারচার্জ মওকুফ করে কোম্পানিটির কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করার জন্য কোনো অনুকূল পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ বিষয়টি ওয়াইজ স্টারের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে না। বেপজার প্রতি মাসে ২ শতাংশ সারচার্জ খুব বেশি, যা প্রতি মাসে প্রায় ১.৫০ লাখ ডলার আসে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ পরিমাণ সারচার্জ কাটা ঠিক নয়। এদিকে রিং সাইনের সঙ্গে সাম্প্রতিক বেপজার বৈঠকে জানানো হয় যে, ৩০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দুই মাসের মধ্যে দিতে হবে। কিন্তু ওয়াইজ স্টার ডাউন পেমেন্টের কিছু অংশ এখন এবং ৫ বছরের কিস্তিতে বকেয়া টাকা সমন্বয় করতে প্রস্তুত। তাই এ বিষয়টি নিয়ে বেপজা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করার জন্য বিএসইসির হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কারণ আমরা রিং সাইনের কারখানায় কাজ শুরু করতে প্রস্তুত আছি। আশা করছি রিং শাইনের সাথে ওয়াইজ স্টারের এমওইউ স্বাক্ষর করতে সমর্থন দেবে বিএসইসি।

এদিকে রিং সাইনকে অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ওয়াইজ স্টার যেসব সুবিধা চেয়েছে সেগুলো হলো- রিং সাইনকে সর্বশেষ ব্যালেন্স শিট প্রকাশ করতে হবে এবং বিগত ৩ বছরের অনুষ্ঠিত না হওয়া বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) সম্পন্ন করতে হবে। ইউটিলিটি, জমি ভাড়া, সুদ এবং জরিমানা বাবদ বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) থেকে সর্বমোট ৭০ কোটি টাকা মওকুফ করতে হবে। বন্ড, কাস্টমস এবং আয়কর রিটার্ন অফিস পরিচালনার সহায়তা। বন্ড, শুল্ক, এবং আয়কর রিটার্ন পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রয়োজন। স্থানীয় সরবরাহকারী বা বিক্রেতাদের পাওনা পরিশোধ করতে হবে। শ্রমিকের দায় রয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা, যা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া শ্রমিকদের দায় মুক্তি এবং মেশিন মেরামত ও রিমডেলিংয়ের জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অবিশিষ্ট তহবিল ব্যবহারের অনুমোদন দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১২ মার্চ বিএসইসি রিং সাইন টেক্সটাইলসকে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তোলার অনুমোদন দেওয়া হয়। কোম্পানিটি যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা ক্রয়, ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করতে শেয়ারবাজারে ১৫ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। কোম্পানিটি ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তবে লোকসানের কারণে এক বছরের মধ্যে ২০২০ সালের শেষদিকে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে কোম্পানিকে উৎপাদনে ফেরাতে কয়েক দফায় পদক্ষেপ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।  প্রথম দফায় কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করে। দ্বিতীয় দফায় আইপিওর ফান্ড ব্যবহারে অনুমোদন এবং ভুয়া প্লেসমেন্ট শেয়ার বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

এছাড়া দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকার পর রিং সাইন টেক্সটাইলস মিলস গত বছরের ১৩ জুন থেকে ২৫ শতাংশ উৎপাদনে ফিরে। বর্তমানে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি ৩১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫০ কোটি ৩ লাখ ১৩ হাজার ৪৩টি। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ২১.৩২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১২.০৭ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ১০.২৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৬.৩৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৯.৮০ টাকায়।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়