ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আইসিবির ঋণ নিয়ে সংসদীয় কমিটির প্রশ্ন, বিএসইসির ব্যাখ্যা তলব

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৯, ৩ নভেম্বর ২০২২   আপডেট: ২১:২০, ৩ নভেম্বর ২০২২
আইসিবির ঋণ নিয়ে সংসদীয় কমিটির প্রশ্ন, বিএসইসির ব্যাখ্যা তলব

নীতিমালা লঙ্ঘন করে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ অনুমোদন করেছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। ফলে ওসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ঋণ অনাদায়ের ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এ প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে।

এ বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরের ২০ অক্টোবর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণ অনুমোদনে জড়িত আইসিবির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে তারা। এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আইসিবির কাছে দলিলসহ ব্যাখ্যা চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সম্প্রতি এ বিষয়ে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। এ চিঠি জারির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে আইসিবিকে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পুঁজিবাজারকে সুসংহত করতে আইসিবিকে সংসদীয় কমিটির নির্দেশ প্রসঙ্গে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে উপযুক্ত বিষয়ে আইসিবিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ১১(২) এর অধীনে সাত কার্যদিবসের মধ্যে উল্লেখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় দলিলসহ ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হলো।

এর আগে ২০ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণ অনুমোদনে জড়িত আইসিবির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, মো. মাহবুব উল আলম হানিফ, মুহিবুর রহমান মানিক ও নাহিদ ইজাহার খান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ সাংবাদিকদের জানান, সরকারের সদিচ্ছা সত্ত্বেও বিনিয়োগের ক্ষেত্র সমপ্রসারণে ব্যর্থ হচ্ছে আইসিবি। আইসিবির ঋণ আদায়ের হার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, অনেক অস্তিত্বহীন ও নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেওয়া হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি জানান, অডিট আপত্তির সংখ্যাও বেশি। এসব বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। কমিটির পক্ষ থেকে ওসব ঋণ অনুমোদনে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ঋণ আদায়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সূত্র জনা গেছে, বৈঠকে আইসিবির গৃহীত পদক্ষেপ, পুঁজিবাজারকে সুসংহত ও সক্রিয় রাখতে আইসিবির ভূমিকা, বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়াতে আইসিবির গৃহীত কার্যক্রম, শিল্প খাতে আইসিবির বিনিয়োগ তথা দেশের শিল্পায়নে আইসিবির ভূমিকা, দেশের স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে আইসিবির প্রয়াস, আইসিবির বিগত ১০ বছরের লাভ-লোকসানের হিসাবসহ আর্থিক বিবরণী এবং অনিষ্পন্ন অডিট আপত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আলোচনা শেষে পুঁজিবাজারকে সুসংহত ও সক্রিয় রাখতে আইসিবিকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, আইসিবি হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সরকারি মালিকানাধীন বিনিয়োগ কোম্পানি, যা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ ১৯৭৬ (১৯৭৬ সালের ৪০ নং অধ্যাদেশ)-এর অধীনে ১ অক্টোবর ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। এটি একাধারে একটি বিনিয়োগ ও মার্চেন্ট ব্যাংক। পুঁজিবাজারে আইসিবি তালিকাভুক্ত হয় ১৯৭৭ সালে। ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ৮০৫ কোটি ৮১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৮০ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৫২৭টি। এর মধ্যে উদ্যোক্ত ও পরিচালকদের হাতে ৬৯.৪৯ শতাংশ, সরকারের হয়ে ২৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১.৯২ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ১.৫৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) আইসিবির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৯২ টাকায়।

/তানিম/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়