ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সাকিবের মোনার্কের পরিচালক ঋণখেলাপি, মার্কেট মেকারের কাজ স্থবির

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১০, ১৭ নভেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৬:৪২, ১৭ নভেম্বর ২০২২
সাকিবের মোনার্কের পরিচালক ঋণখেলাপি, মার্কেট মেকারের কাজ স্থবির

পুঁজিবাজারে মার্কেট মেকার হিসেবে কাজ করতে চায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংস। সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ বা ট্রেকহোল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কাছে এ বিষয়ে আবেদন জানিয়েছে। আর প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা যাচাই করে নিবন্ধন সনদ দিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) সুপারিশ করেছে ডিএসই। তবে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জাভেদ এ মতিন ঋণখেলাপি হওয়ায় সাকিবের মোনার্ক হোল্ডিংসের মার্কেট মেকারের নিবন্ধন সনদ প্রদানের কাজ স্থবির হয়ে গেছে।

সম্প্রতি ডিএসইর কাছে বিএসইসি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। একইসঙ্গে মোনার্ক হোল্ডিংসের পরিচালক জাভেদ এ মতিনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।

তথ্য মতে, মার্কেট মেকার হিসেবে কাজ করার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মোনার্ক হোল্ডিংসের পরিচালকদের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) ক্লিয়ারেন্স পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয় বিএসইসি। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি থেকে মোনার্ক হোল্ডিংসের পরিচালক জাভেদ এ মতিনের ঋণখেলাপির বিষয়টি নিশ্চিত করে। এরপরই প্রতিষ্ঠানটির মার্কেট মেকারের নিবন্ধন সনদ প্রদানের কাজ আটকে দিয়েছে বিএসইসি।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মোনার্ক হোল্ডিংসের মার্কেট মেকার রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেওয়ার বিষয়ে ডিএসইর কাছ থেকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর পাঠানো একটি চিঠি ১৫ নভেম্বর বিএসইসির কাছে এসেছে। এ বিষয়ে গত ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্ট হাতে পেয়েছে বিএসইসি। রিপোর্ট অনুসারে জানা গেছে, মোনার্ক হোল্ডিংসের পরিচালক জাভেদ এ মতিন একজন ঋণখেলাপি।

এর আগে, গত ১৪ নভেম্বর বিএসইসিতে পাঠানো ডিএসইর চিঠিতে জানানো হয়, মোনার্ক হোল্ডিংস ডিএসইর সদস‌্যভুক্ত ট্রেকহোল্ডার (ট্রেক নম্বর- ২৫২)। গত ৮ মে প্রতিষ্ঠানটি ডিএসইতে মার্কেট মেকারের নিবন্ধনের জন‌্য আবেদন জানিয়েছে। ওই আবেদনের ভিত্তিতে ডিএসই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্কেট মেকার) বিধিমালা, ২০১৭ এর প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করেছে কি-না তা যাচাই করে দেখেছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানটি মার্কেট মেকার হিসেবে কাজ করার জন্য সক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করে ডিএসই। তাই প্রতিষ্ঠানটির মার্কেট মেকারের আবেদন বিবেচনা করা যেতে পারে।

এদিকে, গত ৮ মে মোনার্ক হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাদিয়া হাসান স্বাক্ষরিত আবেদনে জানানো হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ সভায় সর্বসম্মতিতে মার্কেট মেকার হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্কেট মেকার) বিধিমালা, ২০১৭ এর সকল শর্ত পরিচালন করে নিবন্ধন সনদ নেওয়ার জন‌্য একটি রেজোলিউশন তৈরি করা হয়েছে। মার্কেট মেকারের নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তির জন‌্য নির্ধারিত ফরম্যাট (শিডিউল-ফর্ম-ক) অনুযায়ী মোনার্ক হোল্ডিংসের পক্ষ থেকে ডিএসইর কাছে আবেদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিএসইর সুপারিশ প্রার্থনা করছি। এজন‌্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাঠানো হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে মোনার্ক হোল্ডিংসকে মার্কেট মেকারের নিবন্ধন সনদ দিতে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে মোনার্ক হোল্ডিংসের ব‌্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাদিয়া হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, যেকোনও প্রতিষ্ঠানকে ট্রেক, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ও মার্কেট মেকার হিসেবে নিবন্ধন সনদ প্রদানের আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ঋণখেলাপি কিনা তা যাচাই করে দেখা হয়। কোন প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা ঋণখেলাপি হলো, তাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়। সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক প্রতিষ্ঠানটির আবেদন বাতিল করা না হলেও, অন্যান্য কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা হয়। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে কমিশন সরাসরি জানিয়ে দেয়, এ পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট বিষয়টি অনুমোদন প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।

মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর। কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসেবে সাকিব আল হাসান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাদিয়া হাসান (সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক ও বিনিয়োগকারী মো. আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী), পরিচালক জাভেদ এ মতিন ও পরিচালক আবুল কালাম মাতবর (মো. আবুল খায়ের হিরুর বাবা) রয়েছেন। কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকা। কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ১০ লাখ, যার প্রতিটির মূল্য ১০০ টাকা করে।

অভিযোগ উঠেছে, জাভেদ এ মতিন আন্তর্জাতিক প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘ ৪০ বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী এই ব্যক্তি দুই বছর আগে বাংলাদেশে ফিরেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে শেয়ারবাজারে নিজ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে তিনি ধরা পড়েন। এর জন্য তাকে হাজার কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ২০২০ সালে এক অস্ট্রেলীয় নাগরিকের মালিকানাধীন হংকংয়ের একটি কোম্পানি থেকে প্রতারণা করে ১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর ওই টাকাগুলোই তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাচার করে বাংলাদেশে এনেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে আসার পর জাভেদ শেয়ারবাজারসহ অন্যান্য খাতে অর্থ বিনিয়োগ করেন। আর তার সঙ্গে এ কাজে অংশীদার হন আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরো ও সাকিব আল হাসান। দেশের এই বিশিষ্ট দু’জনকে সামনে রেখে জাভেদ মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি খুলেন। একইসঙ্গে বাগিয়ে নিয়েছেন স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারেজ হাউস লাইসেন্স। পাশাপাশি গড়ে তোলেন ই-কমার্স সাইট মোনার্ক মার্ট, মুন্সীগঞ্জে মোনার্ক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসহ আরও বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মার্কেট মেকার হিসেবে নিবন্ধন সনদ পেয়েছে ডিএসই ও সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ বি রিচ লিমিটেড। এরপর দ্বিতীয় মার্কেট মেকার হিসেবে নিবন্ধন সনদ পায় ডিএসই ও সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ গ্রিন ডেল্টা সিকিউরিটিজ। বর্তমানে বিএসইসিতে মোনার্ক হোল্ডিংস ছাড়াও আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড (আইএসটিসিএল) ও সোহেল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের মার্কেট মেকারের আবেদন জমা রয়েছে। বিএসইসি প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন যাচাই-বাছাই করে দেখছে বলে জানা গেছে।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়