বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ইমাম বাটনে সচিব নিয়োগের সুপারিশ
পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজে একজন সচিব নিয়োগ দেওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। আর এ সুপারিশ করেছেন কোম্পানিটির খোদ স্বতন্ত্র পরিচালক এবং ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অ্যান্ড এন্টারপ্রেইনারশিপ বিভাগের অধ্যাপক ও ডিন মোহাম্মদ মাসুম ইকবাল।
এজন্য এক জনকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য তিনি কমিশনের কাছে সুপারিশ করেছেন বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে তিনি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন এবং কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিএসইসির কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
সম্প্রতি বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়ে আবেদন জানানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিএসইসির চলমান সহযোগিতার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। চলতি বছরের গত ৭ নভেম্বর থেকে আমাকে ও মাহমুদ সবুজ অ্যান্ড কোং এর ব্যবস্থাপনা অংশীদার ও আইসিএবি’র কাউন্সিল মেম্বার মো. মাহমুদুল হোসেইনকে ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ এখনও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। পরে আমরা ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি, কিন্তু আমরা কোম্পানিটির ঠিকানা সন্ধান করতে পারিনি। এই পরিস্থিতিতে এক জন কোম্পানি সচিব নিয়োগ করা প্রয়োজন বলে মনে করছি। কারণ কোম্পানিটিতে সচিব ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব না।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এ পরিস্থিতিতে আমি ওহিদুজ্জামান সাহিন নামে এক জনকে ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজের সচিব পদে নিয়োগের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি বিএসইসিকে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন এবং কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
তথ্য মতে, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। গত ১২ বছর ধরে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিচ্ছে না। এমনকি, গত ৪ বছর ধরে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভাও (এজিএম) করছে না। তাই কোম্পানিটিকে সক্ষমতা ফেরাতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের গত ৭ নভেম্বর কোম্পানিটিতে দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় বিএসইসি।
এ সংক্রান্ত চিঠিতে বিএসইসি জানায়, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তালিকাভুক্ত কোম্পানি, যা ১৯৯৬ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানি ২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বার্ষিক সাধারণ সভা করেনি এবং ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। কোম্পানিটি ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ আর্থিক বছরে কমিশনে নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন এবং ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। একইভাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (তালিকাকরণ) প্রবিধান-২০১৫ এর ১৭ এবং ১৮ নং ধারা লঙ্ঘন করেছে।
অপরদিকে, কোম্পানিটিকে ২০১১ সালে স্টক এক্সচেঞ্জে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছিল। সেই সঙ্গে কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থাপনের প্রথম দিন থেকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তার পরিচালনা পর্ষদের পুনর্গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তাই, গত ২৪ আগস্ট বিএসইসি ও ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে দুজন নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই, কমিশন ২০২১ সালের ২২ মার্চের নির্দেশনার অধীনে প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে কোম্পানিতে দুই ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী। তিনি চট্টগ্রাম ভিত্তিক ইমাম গ্রুপের মালিক। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ৮০০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা ৫৫টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যান। এদিকে, ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মোহাম্মদ আলীকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানায় বিএসইসি। পরে ২২ ডিসেম্বর মোহাম্মদ আলী হঠাৎ ঘোষণা করেন যে, তিনি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ডিএসইর মাধ্যমে কোম্পানির ৬৫ হাজার শেয়ার কিনবেন। খবরটি প্রকাশের পর, ইমাম বাটনের শেয়ারের দাম সেদিন ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে যায়। পরবর্তীতে ডিএসইর পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি তার ঘোষণা অনুযায়ী শেয়ার ক্রয় করেননি। তিনি একসময় ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এনসিসি) পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। এই পদ ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। পরে তাকে এনসিসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ তিনি পরিশোধ করতে না পারায়, তা খেলাপি হয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, ইমাম বাটন ২০১১ সাল থেকে লোকসান করে আসছে। বর্তমানে ডিএসইতে ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি হিসেবে আছে। কোম্পানিটি ১৯৯৬ সালে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। এর পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কোম্পানির উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের কাছে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কাছে ৬০ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার আছে। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারের ক্লোজিং প্রাইস ছিল ১২৬.৬০ টাকায়।
ঢাকা/এনএইচ
আরো পড়ুন