ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ইউএফএস ইকুইটির অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে ২৩ তথ্য চায় বিএসইসি

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ৩ জানুয়ারি ২০২৩  
ইউএফএস ইকুইটির অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে ২৩ তথ্য চায় বিএসইসি

অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশন (ইউএফএস) ইকুইটি পার্টনারসের বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি মিউচুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। জাল ব্যাংকের প্রতিবেদন এবং ভুয়া এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমগীর দুবাইতে গা ঢাকা দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটি ও তার ফান্ড সংশ্লিষ্টদের কাছে ২৩টি তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগামী ৮ জানুয়ারির মধ্যে এসব তথ্য দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি ইউএফএস ইকুইটি পার্টনারসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিষয়টি মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কার্যক্রম এখনো চলছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

বিএসইসির চিঠিতে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো—ইউএফএসের ব্যবস্থাপনার ইউএফএসইপিএল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং ইউএফএসইপিএল প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ডের পূর্বের ও বর্তমানের সব আর্থিক প্রতিবেদন, ফান্ড দুটির সব ব্যাংক স্টেটমেন্টের তথ্য, ফান্ড দুটিতে উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ ও তাদের ব্যাংক হিসাবের স্টেটমেন্ট, ফান্ডগুলোর গ্রাহক ও তাদের টাকার পরিমাণের তথ্য, ফান্ড দুটিতে বিনিয়োগ কমিটির সদস্যদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ফান্ড দুটির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যেসব ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়েছে, সেগুলো ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ জমা দিতে বলা হয়েছে।

ফান্ডগুলোর পোর্টফোলিওতে থাকা কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। ফান্ড দুটির বিনিয়োগের অবস্থা এবং নির্দিষ্ট সীমার বিষয়ে প্রকাশ করা তথ্য, অতালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ফান্ড দুটির বিনিয়োগের বিষয়ে ট্রাস্টি থেকে প্রাপ্ত কনসেন্ট লেটার, ফান্ডগুলোর সম্পদ মূল্য ও শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ব্যবস্থপনা ফি এবং সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য আগামী ৮ জানুয়ারির মধ্যে কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।

অপরদিকে, ১৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশন (ইউএফএস) ও তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীরসহ ১৫ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত বা জব্দ করা হয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এ কথা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঠানো চিঠিতে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনসহ ১৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের অ্যাকাউন্ট স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিএফআইইউ।

চিঠিতে প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও টিআইএন নম্বর (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা দেওয়া হয়েছে প্যারামাউন্ট হাইটস, লেভেল-১১, ৬৫/২/১, বক্স কালভার্ট রোড, পুরানা পল্টন, ঢাকা।

এছাড়া নাম রয়েছে ইশরাত আলমগীর ও সৈয়দা মেহরীন রহমানের। তাদের ঠিকানা দেওয়া আছে—এপার্টমেন্ট-৩০১, বাড়ি-১৬, রোড-১০১, গুলশান-২, ঢাকা। একই ঠিকানায় নাম রয়েছে সৈয়দ আলমগীর ফারুক চৌধুরী ও সৈয়দা শেহরীন হুসাইনের এপার্টমেন্ট-ডি ৫, বাড়ি ৩২, রোড-৫, ধানমন্ডি, ঢাকা।

ইউএফএসের এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর, আলিয়া হক আলমগীর ও মাহিদ হক। তাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে এপার্টমেন্ট-১০৩, বাড়ি ১৮, রোড-১০১, গুলশান-২, ঢাকা।

চিঠিতে নাম রয়েছে তারেক মাসুদ খানের। তার ঠিকানা বাড়ি-৩০১, রোড-১৯/বি, নতুন ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা। মোহাম্মাদ জাকির হোসেনের ঠিকানা ৫৩৫, পশ্চিম নাখালপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা। মোসা. উম্মে ইসলাম সোহানার ঠিকানা বাড়ি-১৩, রোড-১, ব্লক-আই, বনানী, ঢাকা।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত রাখার তালিকায় আরও আছে ইউএফএস-আইবিবিএল শরিয়াহ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড এবং ইউএফএস-পদ্মা লাইফ ইসলামিক ফান্ড।

এদিকে, সোমবার এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বিএসইসি ও আইসিবিকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে আদেশ দিয়েছেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমগীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে বলেন, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক পর্যায়ে বিএসইসি তদন্ত করে। ওই তদন্তে বেশকিছু অনিয়ম পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে দাখিল করা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের বিপরীতে কমিশন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। যেখানে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়ে কোনো ছাড় দেবে না কমিশন।

অর্থ ফেরতের বিষয়ে তিনি বলেন, ফান্ডের সবকিছু বিধিমালা অনুযায়ী হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের যদি ক্ষতি হয়, তার বিপরীতে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, সে বিষয়ে বলা আছে। সে ক্ষেত্রে ট্রাস্ট ডিড অনেক বড় বিষয়। বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ কিভাবে হবে, সেটা ট্রাস্ট ডিড দেখে কমিশন ব্যবস্থা নেবে। সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ যেন না হারায়, তারা যেন ফেরত পায়, সে বিষয়ে চেষ্টা করবে কমিশন।

এনটি/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়