ঢাকা     শুক্রবার   ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২৮ ১৪৩১

জানুয়ারিতে ব্যাংক ঋণের সুদহার ১২ শতাংশ 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩  
জানুয়ারিতে ব্যাংক ঋণের সুদহার ১২ শতাংশ 

ছবি: সংগৃহীত

ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সুদহার। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ঋণের সুদহার ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং ভোক্তা ঋণের হবে ১৩ শতাংশ। যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এখন ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, তা হলো ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ তথা– সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে পরিচিত। 

প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের জুলাইয়ে ১৮২ দিন মেয়াদী ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, আগস্টে ৭ দশমিক ১৪ ও সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২০ এবং অক্টোবরে ৭ দশমিক ৪৩, নভেম্বরে ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ, সবশেষ ডিসেম্বরে স্মার্ট রেট বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ১৪ শতাংশে।   

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসের ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে এখন সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে জানুয়ারি মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে, ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন যোগ করতে পারে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। অবশ্য, একবার সুদহার কার্যকর করা হলে পরবর্তী ছয় মাসে তা আর পরিবর্তন করা যায় না।

ব্যাংকের সুদহার কত হবে?

ডিসেম্বর মাসের ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে জানুয়ারি মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। সেই হিসেবে, নতুন ২০২৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বড় অংকের ঋণে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ সুদ নিতে পারবে। প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের সুদহার হবে ১০ দশমিক ৮৯ এবং কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ সুদ।

তবে, জানুয়ারিতে ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে ব্যাংক নিতে পারবে ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ সুদ। কারণ, সিএমএসএমই, ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে অতিরিক্ত ১ শতাংশ তদারকি বা সুপারভিশন চার্জ নেওয়া সুযোগ রয়েছে। যা ডিসেম্বরে ছিল ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ ছাড়া, ডিসেম্বরে বড় অংকের ঋণে সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্ষেত্রে ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদহার

ব্যাংকের ক্ষেত্রে শুধু ঋণে সর্বোচ্চ সীমা থাকলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত সংগ্রহেও সুদহারের একটা সর্বোচ্চ সীমা দেওয়া আছে। এসব প্রতিষ্ঠান স্মার্টের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ যোগ করে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। ‘স্মার্ট’ রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে ঋণের বিপরীতে সুদ নিতে পারবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এনবিএফআই। সেই হিসেবে ডিসেম্বর মাসে তাদের সর্বোচ্চ ঋণের সুদহার হবে ১৩ দশমিক ৮৯ এবং আমানতে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তবে, জানুয়ারিকে ঠিক করা ঋণের এই সুদহার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ১৮২ দিন মেয়াদী ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে স্মার্ট ছিল ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এরপর প্রতি মাসে একটু করে বেড়ে গত মে মাসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। জুন ও জুলাইয়ে সামান্য কমে ৭ দশমিক ১০ শতাংশে নামে। এরপর আগস্ট থেকে ধারাবাহিক সুদহার বাড়ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর পরামর্শে ৯০ দশক থেকে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে, ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা আরোপ করা হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ডলারের বাজার স্থিতিশীল করতে বিভিন্ন পর্যায় থেকে সীমা তুলে নেওয়ার জন্য বলা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনেও সুদহারের সীমা প্রত্যাহার অথবা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সরকারের ইতিবাচক সায় না পাওয়ায় নীরব ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফ’র ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত সুদহার বাজারভিত্তিক করা। সেই শর্তের আলোকে নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়।

এনএফ/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়