ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

সংশোধিত বাজেট বাস্তবায়নের হার ৮৭ শতাংশ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ৩ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ০৯:৫৫, ৩ মার্চ ২০২৪
সংশোধিত বাজেট বাস্তবায়নের হার ৮৭ শতাংশ

মূল বাজেট থেকে ৮৪ হাজার ৬১৫ কোটি কমানোর পরেও গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ পুরো বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি সরকার।

গেলো ডিসেম্বরে সমাপ্ত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। পরবর্তীতে তা সংশোধনের পর নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটের বিপরীতে মোট ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। সে হিসাবে গত অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মূল বাজেটের ৮৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের ৮৭ দশমিক ১৯ শতাংশ।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বাজেট বাস্তবায়নের এ চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করেছে এবং অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সংসদে পেশ করা হয়েছে।

বাজেট দলিল পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাধারণভাবে কোনো অর্থবছরেই পুরো বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। এমনকি সংশোধিত বাজেটও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনা মন্ত্রণালয় গুলো। গত ৬ বছরে মূল বাজেটের গড়ে ৮১ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের গড়ে প্রায় ৮৭ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে মোট ব্যয় হয়েছে ৫ লাখ ১৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল মূল বাজেটের ৮৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের ৮৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সে হিসাবে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার কমেছে। এর আগের অর্থবছর তথা ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল মূল বাজেটের ৮১ শতাংশ। আলোচ্য অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে মোট ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার ১৬০ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২২-মার্চ ২০২৩) মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা (বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল মূল বাজেটের প্রায় ৪৩ শতাংশ)। এর মধ্যে প্রথম (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২২) প্রান্তিকে ৮২ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা (বাজেট বাস্তবায়নের হার ১২শতাংশ); দ্বিতীয় (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২২) প্রান্তিকে ১ লাখ ১ হাজার ৯০২ কোটি টাকা (বাজেট বাস্তবায়নের হার ১৫.২৯ শতাংশ) এবং তৃতীয় (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৩) প্রান্তিকে ১ লাখ ৯ হাজার ৫২২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে (বাজেট বাস্তবায়নের হার ১৬.১৫শতাংশ)। অন্যদিকে শুধু চতুর্থ (মার্চ-জুন ২০২৩) প্রান্তিকে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা (বাজেট বাস্তবায়নের হার ৪১.৬১শতাংশ)। পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত অর্থবছরের শেষ তিন মাসে (এপ্রিল-জুন ২০২৩) পূর্ববর্তী ৯ মাসের প্রায় সমান বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজেট বাস্তবায়ন সাধারণত অর্থবছরের প্রথমদিকে ধীরগতিতে চলে। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা ছাড়া অন্যান্য সব আইটেমের বিপরীতে ব্যয়ের পরিমাণও কম থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মেরামত সংরক্ষণ, নির্মাণ ও পূর্ত কাজ এবং মালামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষদিকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এসব কারণে অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে ব্যয় বেড়ে যায়।

অর্থ বিভাগের হিসাবে, গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের মূল ও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা (আদায়ের হার ৮৬শতাংশ)। অন্যদিকে এনবিআর-বহির্ভূত কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৮ হাজার ১৪৯ কোটি কোটি টাকা (আদায়ের হার ৪৫ শতাংশ)। এ ছাড়া কর ব্যতীত প্রাপ্তির পরিমাণ ধরা হয়েছিল ৪৫ হাজার কোটি টাকা এবং এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩৯ হাজার ৩৯ কোটি টাকা (আদায়ের হার ৮৬ শতাংশ)।

অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার ২৫ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে নিট ৭৯ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র খাতে সার্বিকভাবে ৩ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, সময় মতো ও সুষ্ঠু বাজেট বাস্তবায়ন এখনো একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। বাজেট বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। উপরন্তু বছরের শেষে এসে সরকারকে অপরিকল্পিত ঋণের দায়ভার গ্রহণ করতে হয়। ফলে আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায় না। বাজেট সুষ্ঠুভাবে ও সময় মতো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে অপরিকল্পিত সরকারি ঋণ এড়ানো এবং সরকারের ঋণজনিত ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা সম্ভব।

/হাসনাত/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ