খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

ফাইল ফটো
দেশের ব্যাংক-আর্থিক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে চলতি বছরের মার্চ শেষে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। ৩ মাস আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।
রবিবার (১৫ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এ সময় বিতরণ করা ঋণের ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা বা ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০১ কোটি টাকা।
আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩০ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। তার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে খেলাপি ঋণ। ৩ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।
তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। সরকার পরিবর্তনের পর খেলাপির প্রকৃত তখ্য বেরিয়ে আসে। সেই হিসেবে চলতি মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা।
চলতি মার্চ শেষে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপির পরিমাণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ ৬ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপির মধ্যে ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বা ৯০ দশমিক শূণ্য ৭ শতাংশই মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে, যা আদায় করার সম্ভবনা নেই।
এদিকে, মার্চ শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ১০ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপির মধ্যে ২ লাখ ২ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশই মন্দ ঋণ, যা আদায় করার সম্ভাবনা নেই। এ সময় বিদেশি ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ করা হযেছে ৬৭ হাজার কোটি টাকা, খেলাপির পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা।
এর আগে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাদের কাছে যতই নতুন তথ্য আসছে, ততই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। আমরা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পুনর্গঠন করতে চাই। যেসব ব্যাংক একীভূত করার দরকার সেগুলো একীভূত করব।”
আর রবিবার গভর্নর বলেছেন, “পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক শিগগিরই একীভূত করবে। তবে একীভূত করা ব্যাংকগুলোর কর্মীদের চাকরি ঠিক থাকবে।”
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে প্রভাবশালীরা নামে বেনামে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কাগজে-কলমে কম দেখানো হয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের পর খেলাপির প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে এসেছে।
ঢাকা/এনএফ/মেহেদী