ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

এমবিবিএস ভর্তিতে পূর্বের নিয়ম চায় বিপিএমসিএ

নিউজ ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ২৬ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ১৬:১৪, ২৮ মার্চ ২০২৩
এমবিবিএস ভর্তিতে পূর্বের নিয়ম চায় বিপিএমসিএ

ছবি: সংগৃহীত

এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির যোগ্যতার ক্ষেত্রে পূর্বের নিয়ম বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)। একইসঙ্গে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম জিপিএ-৪ এর পরিবর্তে পূর্বের জিপিএ-৩.৫০ বহাল রাখারও আবেদন জানিয়েছে সংগঠনটি। 

গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি এম এ মুবিন খান এবং সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ার হোসেন খান।

আবেদনে যা বলা হয়েছে

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে দেশি শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় সরকারি নিয়মে উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীদের সাংবিধানিকভাবে তাদের মৌলিক অধিকার বহাল রেখে ভর্তির সুযোগ দেওয়া এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের জীববিজ্ঞানে হঠাৎ করে এককভাবে ন্যূনতম জিপিএ-৪ এর পরিবর্তে পূর্বের মতো জিপিএ-৩.৫০ বহাল রাখতে হবে।

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে বিপিএমসিএ তাদের আবেদনে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় ১ লাখ ৪০ হাজার পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে সরকার নির্ধারিত নিয়ম প্রতিপালন করে নির্ধারিত পাস মার্ক ৪০ নম্বর পেয়ে প্রায় ৪৯ হাজার শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তাদের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের শূন্য আসনে ভর্তি হতে আইনগত ও মৌলিক অধিকার রয়েছে।

সরকার নির্ধারিত ভর্তির যোগ্য ঘোষিত নির্ধারিত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ না দিয়ে হঠাৎ নিয়ম পরিবর্তন করে ৩৫ হাজার পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে করে একজন উত্তীর্ণ ও সরকার কর্তৃক যোগ্য ঘোষিত প্রার্থীর সাংবিধানিকভাবে তাদের মৌলিক অধিকার বহাল রাখা সরকারের দায়িত্ব। নতুবা এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে অনেকে বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে এবং আইনি জটিলতা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মেডিক্যাল শিক্ষার কর্ণধার ও সংশ্লিষ্ট অনেকে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। 

মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষাই দেশে প্রথমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়নি। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেলে বেসরকারি মেডিক্যালে ভর্তি হবে না এবং অনেকের আর্থিক সচ্ছলতা নেই।

উল্লেখিত পরিস্থিতিতে সরকার কর্তৃক গত ১০/১২ বছরের চলমান নিয়ম হঠাৎ পরিবর্তন করলে অনেক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের আসন ফাঁকা থাকবে। তাই বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

দেখা যাবে যারা ভর্তির যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মেডিক্যালে ভর্তি হতে সুযোগ না পায়, তাদের মধ্যে অনেকে বিদেশে চলে যাবে। যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্থাৎ ডলার সংকটের সময়ে দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতির কারণ হবে। আবার বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে যে, অনেক দেশের মেডিক্যাল শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন হয়। রাশিয়া, চীন-সহ আরও অনেক দেশের রোগী ও রোগের প্যাটার্ন আমাদের চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতির- তাই দেশে এসে ঐ সব চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতে সমস্যায় পড়তে হয়।

বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রায় ১০ বছরের চলমান নিয়ম হঠাৎ পরিবর্তন করে জীববিজ্ঞানে এককভাবে জিপিএ-৫ এর মধ্যে জিপিএ-৪ নির্ধারণ করা হয়। দেশের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে এ মুহূর্তে প্রায় ১২ হাজারের মত বিদেশি শিক্ষার্থী এমবিবিএস পড়ছে। যার ফলে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হচ্ছে। ভারত ও নেপালে এমবিবিএস ভর্তির যোগ্যতায় জীববিজ্ঞানে জিপিএ-৩ পয়েন্ট রয়েছে। এখানে জীববিজ্ঞানে জিপিএ-৪ করাতে যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী আসতো তারা অন্য দেশে পড়তে চলে যাবে। যার বিরূপ প্রভাব পড়বে দেশের চলমান সামগ্রিক অর্থনীতিতে এবং সেই সাথে দেশ প্রায় ১০ (দশ) মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের সুযোগ হতে বঞ্চিত হবে। এছাড়া আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাস হতে একটি প্রতিনিধি দল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির সাথে সাক্ষাৎ করে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভর্তি জটিলতা নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন এবং তারাও জীববিজ্ঞানে এককভাবে জিপিএ-৩.৫০ পূর্বের মত বহাল রাখার কথা জানিয়েছে।

এ অবস্থায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে দেশি শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় সরকারি নিয়মে যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন সাংবিধানিকভাবে তাদের মৌলিক অধিকার বহাল রাখার জন্য এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের জীববিজ্ঞানে আগের মতো জিপিএ-৩.৫০ নির্ধারণের জন্য বিশেষ অনুরোধ জানায় বিপিএমসিএ।

এ প্রসঙ্গে বিপিএমসিএ সভাপতি মুবিন খান বলেন, দেশের স্বাস্থ্যসেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকল্পে মেডিক্যালে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার সমাধান জরুরি।

তিনি বলেন, নির্বাচনের বছরে এসব কৃত্রিম সমস্যা সৃষ্টি করে বিশেষ মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র করছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সরকারের অভ্যন্তরে এখনও ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা কো‌নও চক্র সেটেল্ড ইস্যুকে পরিবর্তনের নামে প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক নষ্ট করছে কি না, তাও খতিয়ে দেখতে হবে।

ঢাকা/মেয়া/নাজমুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়