ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘মৃত্যুসংবাদ শুনে চোখের পানি সংবরণ করতে পারিনি’

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ৯ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘মৃত্যুসংবাদ শুনে চোখের পানি সংবরণ করতে পারিনি’

জাফর ইকবাল, নিজামূল কবীর

সত্তর দশকের ঢাকাই চলচ্চিত্রের স্টাইলিশ নায়ক জাফর ইকবাল। তিনি একাধারে মুক্তিযোদ্ধা, অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী ছিলেন। শহুরে রোমান্টিক ও রাগী তরুণের ভূমিকায় দারুণ মানালেও সব ধরনের চরিত্রে ছিল তার স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ।

অভিনয়ের পাশাপাশি চমৎকার গান গাইতে পারা এ অভিনেতা বেশকিছু সিনেমায় গায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনয়, স্টাইল দেখে অনেকেই তার ভক্ত হয়েছেন। এই ভক্তের তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের বর্তমান মহাপরিচালক মো. নিজামূল কবীরের।

এর আগে সেন্সর বোর্ড, জাতীয় চলচ্চিত্র জুড়ি বোর্ডে থাকার সুবাদে অনেক সুপারস্টারের সঙ্গে তার সখ্যতা হয়েছে, কিন্তু স্বপ্নের নায়কের জন্য এখনো তার মন পোড়ে। না দেখার আক্ষেপও কম নয়। মো. নিজামূল কবীর তার ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তা প্রকাশ করেছেন। রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালেও জানান, তার স্বপ্নের নায়ক জাফর ইকবাল।

নিজামূল কবীর তার ফেসবুকে লিখেন—সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা প্রজন্মের প্রতিনিধি আমি। ঢাকা কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়া অবস্থায় মুক্তিপ্রাপ্ত সকল ছবি দেখা ছিল আমাদের অভ্যাস। আমাদের কাছে খুব প্রিয় বাক্য ছিল ‘ফার্স্ট ডে, ফার্স্ট শো’। প্রসঙ্গক্রমে বন্ধু খোকনের কথা বলতে হয়। নিজের কাছে সিনেমা দেখার টাকা না থাকলে ওর কাছ থেকে ধার নিতাম, যা কখনোই ফেরত দেওয়া হতো না। যাইহোক, আজকে লিখবো আমার প্রিয় নায়কের কথা। আমার প্রিয় নায়ক ছিলেন প্রয়াত জাফর ইকবাল। আমার কাছে মনে হতো—হি ইজ আইকনিক হিরো। ভাবতাম একটা মানুষ এতটা সুন্দর বা এতটা স্মার্ট হয় কি করে? তার অভিনীত প্রতিটি চলচ্চিত্র বেশ কয়েকবার করে দেখতাম। তাকে এক নজর দেখার জন্য কতবার এফডিসি গেটে গিয়েছি। এ প্রজন্মের অনেকেই জানেন না তিনি অনেক বড় মাপের একজন কণ্ঠশিল্পীও ছিলেন। তার গাওয়া ‘হয় যদি বদনাম হোক আরো’, ‘সুখে থাকো ও আমার নন্দীনি’ বা ‘যেভাবেই আছি বেঁচেতো আছি, জীবন আর মরণের মাঝামাঝি’ গানগুলো তুমুল জনপ্রিয় ছিল।

প্রিয় নায়ক আজ বেঁচে থাকলে হয়তো কর্মসূত্রের কারণেও নিজামূল কবীরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হতো। এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি লিখেন, জাফর ইকবাল জন্মগ্রহণ করেন ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৫০ সালে এবং ২৭ এপ্রিল ১৯৯১ সালে মারা যান। তার সমসাময়িক নায়করা অনেকেই বেঁচে আছেন এবং ভালো আছেন। নায়ক রাজ রাজ্জাকের সঙ্গে আমার সেন্সর বোর্ডে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। নায়ক এম এ আলমগীর সাহেবের সঙ্গে কাজ করেছি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রদানের লক্ষ্যে গঠিত জুরি বোর্ডে। আমার উপলব্ধি তিনিও আমাকে পছন্দ করেন। এ ছাড়া নায়ক ফারুক (মাননীয় সংসদ সদস্য), নায়ক সোহেল রানা বা নায়ক উজ্জ্বলের সঙ্গে দেখা, কথা বা যোগাযোগ হয়েছে। মাঝে মাঝে ভাবি, জাফর ইকবাল বেঁচে থাকলে হয়তো আমার স্বপ্নের নায়ক হিসেবেই তার সঙ্গে দেখা হতো, কথা হতো বা ঘনিষ্ঠতাও হতে পারতো।

১৯৯১ সালের ২৭ এপ্রিল মারা যান জাফর ইকবাল। সেদিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি লিখেন, জাফর ইকবাল আমার আত্মীয় বা কাছের কেউ নন। কিন্তু তার মৃত্যু সংবাদ শুনে আমি চোখের পানি সংবরণ করতে পারিনি। ওপারে ভালো থাকবেন হে নায়ক।

 

ঢাকা/রাহাত সাইফুল/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়