বেগমের সঙ্গে আসিফের ২৯ বছর
স্ত্রীর সঙ্গে আসিফ আকবর
শ্রোতাপ্রিয় সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর। ১৯৯২ সালের ১০ জুলাই ভালোবেসে সালমা আসিফ মিতুর সঙ্গে সংসার বাঁধেন তিনি। এই দম্পতির প্রেম-বিয়ে নিয়ে রয়েছে মজার অনেক ঘটনা। প্রায় সপ্তাহ খানেক আগেও প্রেমের অম্লমধুর ঘটনা ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন আসিফের স্ত্রী মিতু।
এদিকে আসিফ শুক্রবার (৯ জুলাই) সকালে দীর্ঘ একটি পোস্ট দিয়েছেন তার ফেসবুকে। তার ‘বেগম’-এর সঙ্গে কাটানো দীর্ঘ ২৯ বছরের নানা স্মৃতি তোলে ধরেছেন। আসিফ লিখেন, ‘ঊনিশ বছর তিন মাস বয়সে ডেসপারেড ভালোবাসার ফলশ্রুতি হিসেবে বেগমের সঙ্গে এক ছাদের নিচে থাকা শুরু। আমি সবসময়ই ক্যাজুয়াল যেকোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে। শুধু রাগের উপর নিয়ন্ত্রণটা রাখার চেষ্টায় থাকি। বিয়ের পর কঠিন সময়গুলো পার করেছি—কখনো হেরে, কখনো জিতে। একজন সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে আমার কাছে স্পোর্টসম্যানশীপটাই আসল। দেখতে দেখতে আমাদের দাম্পত্য জীবন ত্রিশ বছরে মাথা ঢুকিয়েছে। অথচ মনে হচ্ছে, সেদিনকার কথা। তিনিও ছোট ছিলেন আমিও ছোট ছিলাম। ছোট বয়সেই আমরা বাবা-মা হয়েছি। ঘোরের মধ্যেই ঘটে গেছে সব।’
আসিফের কাছে সংসার আর কাজ এক সুতায় গাঁথা। তা জানিয়ে তিনি লিখেন, ‘অপমান আর তুচ্ছতাচ্ছিল্যের মগজে কামড় দিয়ে এখনো একই কাঁথার নিচে থাকি। ঝড়ের প্রকারভেদ নিয়ে মাথা ঘামাই না, জোর বাতাসে পাল হাওয়ার পক্ষে মেলে দিয়ে আমরা এখনো একসঙ্গে ভেসে আছি। বেহিসাবি জীবনে আমার নিয়ন্ত্রণ একটা জায়গায় আটকে রেখেছি, সেটা হচ্ছে পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ। চেষ্টা করেছি নিজের মতো, হয়তো ভাই-বোনসহ কাউকেই হ্যাপী রাখতে পারিনি। অন্তর থেকে আন্তরিক ছিলাম সবসময়, বোঝাতে পারিনি। বিশেষ করে শোবিজের পেশাদারকর্মী হিসেবে যেভাবে নিজেকে পরিচালিত করেছি, তাতেও অনেকেই কষ্ট পেয়েছেন। আমি ক্ষমা চাচ্ছি না কারো কাছে, কারণ আমাকে ভুল বোঝার কারণগুলো নিয়ে নিত্যই ভাবি। সংসার আর কাজ আমার হিসেবে একসুতায় গাঁথা, সক্ষমতাই আসল আনন্দ।’
আসিফ-মিতু দম্পতির দুই পুত্রসন্তান। তারাও যথেষ্ট বড় হয়ে গেছে। আসিফ মনে করেন—তাদের আর বোঝানোর কিছু নেই। আবার তারা আসিফকে বোঝাবে সেই ম্যাচিউরিটি আসতে দেবেন না তিনি। বাবা-মা সন্তানের মধ্যে বোঝাপড়া হয় না কখনোই, শুধুই দায়িত্ববোধ কাজ করে। এখানে উভয়পক্ষের স্মার্টনেস প্রয়োজন যেন ভবিষ্যতে আক্ষেপ করতে না হয়।
আসিফ তার কাজ বরাবরই আয়োজন করে করেন। আবার নিজের সিদ্ধান্তে এক সুতাও ছাড় দেন না। অকপট কথা বলতেও দ্বিধা করেন না তিনি। এসব স্মরণ করে আসিফ লিখেন, ‘সফলতার সঙ্গে উশৃঙ্খলতাও আমার জীবনে এসেছে। বারবার সংযত হয়ে প্রতিবারই নিজের ইচ্ছায় ব্যারিকেড ভেঙেছি। অভ্যাস বদলাতে পারবো না, আমার সরল চলার পথটা মেজাজি হাইওয়েতে গিয়ে মিশেছে। কেউ মানুক আর না মানুক, বেগম ঠিকই মেনে নেয়। নিতেই হবে কারণ আমি এরকমই। ত্রিশ বছরের দাম্পত্য জীবনটা আমার কাছে স্নেহের মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কামব্যাক শতরানের মতোই। নিজেকে চিনি রগে রগে, আমি যে খুব ভালো মানুষ সেটা কখনোই দাবি করিনি।’
প্রেম শেষে বিয়ে আর সংসার কোনো ঘানি টানা নয়। এটা জীবনের নিয়মিত একটা রুটিন মাত্র। মৃত্যু ছাড়া এই খেলা সাঙ্গ হবার নয় বলে জানান আসিফ। তিনি লিখেন, ‘বেগম যতই বুদ্ধিমতি বা স্মার্ট হউক, সিদ্ধান্ত আমার। আমার টেরিটোরিতে আমি স্বৈরাচার, বেগম পছন্দ না করলেও বিরোধিতা করে না। বাকি জীবনও একসঙ্গে কাটাবো ইনশাআল্লাহ, জীবনযুদ্ধে সফল আমরা। ব্যর্থতাগুলো থাকুক সংসদীয় মহিলা আসনের মতো অলংকার হয়ে।’
আসিফ তার বেগমকে ধন্যবাদ দিতে চান না, কারণ তিনি এটা নিতে চান না। তাই প্রার্থনায় রেখেছেন প্রিয় মানুষটিকে। আসিফের ভাষায়—‘শুধু দোয়া করি সুস্থ থাকো আর আমার উপর নজরদারি চালু রাখো। তোমার মতো ভালবাসাবাসির এক্সপ্রেশন আমার আসে না, তবু ভালোবাসি এটাই সত্য! মৃত্যু ঘুরছে চারপাশে, এটাই হয়তো শেষ বর্ষাবসন্ত উদযাপন আমাদের। ভালো থেকো নিজের মতো। বিয়েবার্ষিকীর শুভেচ্ছা। ভালোবাসা অবিরাম!’
ঢাকা/শান্ত