কারাভোগ ও ডিবি হেফাজতে ছিলেন যেসব তারকা
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার ঢেউ শোবিজ অঙ্গনেও আছড়ে পড়েছে—এ দৃশ্য নতুন নয়। যেমনটি দেখা গেছে ২০২৪ সালে, তেমনই ২০২৫ সালেও সংগীত ও অভিনয় জগতের একাধিক পরিচিত মুখকে জেল, ডিবি কার্যালয় কিংবা মামলার বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কেউ এখনো কারাগারে, কেউ জামিনে মুক্ত, আবার কেউ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফিরে গেছেন স্বাভাবিক জীবনে। চলুন দেখে নিই, শোবিজ তারকাদের সেই অস্থির সময়ের চিত্র—
মমতাজ বেগম: আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় লোকসংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম এই তালিকার অন্যতম আলোচিত নাম। গত ১৩ মে রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে গ্রেপ্তার করে। ধানমন্ডির স্টার কাবাবের পেছনের একটি বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে খুনের মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। মানিকগঞ্জ–২ আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এই শিল্পী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
নুসরাত ফারিয়া: চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। গত ১৮ মে থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। রাজধানীর ভাটারা থানায় দায়ের করা একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় দায়ের হওয়া ওই মামলায় তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আসামি করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর রাতে তাকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে রাখা হয়। পরের দিন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে তাকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও পুলিশের হেলমেট পরা অবস্থায় কড়া নিরাপত্তায় এজলাসে তোলা হয়। আদালতে নুসরাত ফারিয়াকে বিমর্ষ দেখা যায়। কাঠগড়ায় প্রায় ৩০ মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন, কোনো বক্তব্য দেননি। ২০ মে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান এই চিত্রনায়িকা।
মেহের আফরোজ শাওন: সংগীতশিল্পী, অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওনকেও ২০২৫ সালে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে তাকে আটক করা হয়। রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হলেও পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে শাওনের জামালপুরে অবস্থিত গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে, যা পরিস্থিতিকে আরো সংবেদনশীল করে তোলে।
সোহানা সাবা: অভিনয়শিল্পী সোহানা সাবাকে গত ৭ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কোনো মামলা ছাড়াই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এই ঘটনাও শোবিজ অঙ্গনে উদ্বেগের আবহ তৈরি করে।
অন্যান্য ঘটনা: এর আগের বছর অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান গ্রেপ্তার হন। পাশাপাশি প্রায় তিন ডজন শিল্পীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে দু-একটি বাদে বেশিরভাগই ছিল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে করা মামলা। ২০২৫ সাল শোবিজ অঙ্গনের জন্য ছিল অস্বস্তি, আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার বছর। অভিনয় কিংবা সংগীত-পরিচিত পরিচয়ের বাইরে গিয়ে অনেক তারকাকেই মুখোমুখি হতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আদালত ও কারাগারের বাস্তবতার। রাজনীতি ও সংস্কৃতির এই জটিল সংযোগ আবারো মনে করিয়ে দেয়, দেশের অস্থিরতা কখনোই কোনো একটি গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকে না।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত