ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জীবনীশক্তি ‘উদ্যোক্তা’

মো. আরাফাত হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৮, ১০ নভেম্বর ২০২০  
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জীবনীশক্তি ‘উদ্যোক্তা’

একটি দেশের অর্থনীতিতে উদ্যোক্তাদের দেখা হয় প্রাণ হিসেবে আর এই উদ্যোক্তা মহল পরিপূর্ণ যে খাত নিয়ে, তা হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে টিকে থাকে নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের আগমন ও পুরাতনদের স্থায়িত্বের উপর। এ খাতের উন্নয়নে সরকারের সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান ‘এসএমই ফাউন্ডেশন’ এই উদ্যোক্তাদের নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে।

কোভিড-১৯ এর প্রভাব শিল্প খাতে যে সংকটপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করেছে, তার বেশির ভাগই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে। কেননা পরিসংখ্যান অনুযায়ী শিল্প খাতের মোট শ্রমশক্তির ৮০-৮৫ শতাংশ ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে, এসএমই খাত যে দেশের অর্থনীতিতে শিল্প খাতের চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 

আরো পড়ুন:

বিগত এক দশক ধরে এই খাতে উদ্যোক্তাদের আগমন ও পুরাতনদের টিকে থাকার পেছনে সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা প্রশংসনীয়। এর প্রমাণস্বরূপ এসএমই খাতে ২০১০ সালে অর্থায়নের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৩৫ বিলিয়ন (টাকা) ও ২০১৭ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১৬০০-১৭০০ বিলিয়নে। অর্থাৎ ৭ বছরে প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মহামারির এই সময়ে এসএমই কিন্তু সব চেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যখন মাসব্যাপী দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এই খাতে যেহেতু অর্থের নগদ প্রবাহের উপর বেশি নির্ভর করতে হয়, তাই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানতম উৎসব পবিত্র ঈদ ও নববর্ষ উপলক্ষে বাজারের যে চাহিদা থাকার কথা পোশাক ও হস্তশিল্পে উৎপাদিত পণ্যের, সেটাও ছিল না। ফলে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

সাময়িকভাবে সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবার জন্য সরকার প্রদত্ত আর্থিক প্রণোদনাও এই বিশাল শ্রমশক্তির তেমন একটা কাজে আসেনি, যা এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারাও স্বীকার করে। বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে আর্থিক সহায়তা না পৌঁছানোর কারণ উদ্যোক্তাদের সহায়তা নেওয়ার পদ্ধতিগত জ্ঞানের অভাব ও আনুষ্ঠানিকতা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে অর্থায়নের প্রায় ৮০ শতাংশ হয়ে থাকে অনানুষ্ঠানিক, যার কারণে আনুষ্ঠানিক অর্থায়নের পলিসির সঙ্গে উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ততা কম। এতে করে সরকারি সহায়তার বিষয়ে তারা পর্যাপ্ত তথ্য পায়নি ও যখন পেয়েছে, তখন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সহায়তা গ্রহণও সম্ভব হয়নি।

এসএমই ফাউন্ডেশনের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ঋণ বিতরণের জন্য প্রত্যেক জেলা পর্যায়ে একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেখানে এসএমই ফাউন্ডেশনের অন্তর্ভুক্তি রয়েছে। জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সৃষ্ঠ কমিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ঋণ গ্রহীতাদের সংযোগ করে দিচ্ছে ও ঋণ গ্রহণে যেসব বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে, উদ্যোক্তারা তার সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। 

তাছাড়া, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের বর্তমানে প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া বেশ ইতিবাচক। ফাউন্ডেশনের দেয়া তথ্যমতে বর্তমানে প্রায় ১০-১৫ শতাংশ উদ্যোক্তা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যা ক্রমবর্ধমান। তাছাড়া আইসিটির সঙ্গে উদ্যোক্তাদের পরিচিত করানোর জন্য ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।

করোনাকালে আমরা প্রচুর নতুন উদ্যোক্তার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, যেটা করোনার আশীর্বাদ বলা চলে ‘মন্দের ভালো’। এই নতুন উদ্যোক্তা ও পুরনোদের বাজারে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আবার শীত মৌসুমে ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ’ বলে যা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া, বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা ও উৎপাদন গতিশীল রাখতে এসএমই ফাউন্ডেশন উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা ও যে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাগুলো দিচ্ছে, তা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। 

মহামারীতে সৃষ্ট নতুন উদ্যোক্তারা মূলত শহরে অনলাইন ভিত্তিক ও গ্রামাঞ্চলে উৎপাদন ভিত্তিক। এখানে উদ্যোক্তা ও অনুকরণকারী দুটোই সৃষ্টি হয়েছে। নতুন কোনো উদ্যোক্তার আগমনের পরপরই দেখা যাচ্ছে অনেকেই আবার সেটার অনুকরণে ব্যস্ত। ফলে, প্রকৃত উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ও যথাযথ প্রাপ্য পাচ্ছে না। যা পরবর্তী সময়ে উদ্যোগ গ্রহণে বাঁধা সৃষ্টি করবে। 

অনুকরণে অনুপ্রাণিত না হয়ে উদ্ভাবনী শক্তির ব্যবহারে সবাইকে সচেতন করতে হবে। তাই সঠিক উদ্যোক্তা চিহ্নিত করে তাদের উদ্ভাবনের যথাযথ সংরক্ষণ ও সম্মান দিতে হবে ও প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সংশ্লিষ্ট পক্ষের এগিয়ে আশা উচিত। সৃষ্টিশীলতাকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্বও কিন্তু কর্তৃপক্ষের।

লেখক: শিক্ষার্থী, ডিপার্টমেন্ট অব মার্কেটিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়