ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

দেশি পণ্য জামদানি শাল ও এর যত্ন

সৈয়দা লুৎফুন নাহার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ৫ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১১:৫১, ৫ জানুয়ারি ২০২১
দেশি পণ্য জামদানি শাল ও এর যত্ন

বাংলাদেশে ৪৫টি আদি জনগোষ্ঠীর বাস। নানা উপজাতির মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ চাকমা উপজাতি। জামদানি শাড়ি বলতে যেমন রূপগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের কথা আসে, তেমনি জামদানি শাল বলতে পার্বত্য জেলাগুলোর নাম চলে আসে। বাংলাদেশের আদিবাসী চাকমা জনগোষ্ঠী জামদানি শাল বুননের সঙ্গে জড়িত। রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ছাড়াও যেসব অঞ্চলে চাকমা সম্প্রদায়ের বাস, সেখানে এই জামদানি শালের বুনন হয়।

আদিবাসীরা জামদানি শাল কোমর তাঁতে বুনে থাকে। কোমর তাঁতকে তারা তাদের ভাষায় ‘বেইন’ বলেন। এই বেইনে মাটিতে বসে তারা শাল বুনে থাকেন।

জামদানি শাড়ির মতো এই শাল বোনার কিছু স্বকীয় বৈশিষ্ট্য আছে। জামদানি সুতার কাউন্টের মতো এই শালের বুননে সুতার জোড়ের একটা নির্দিষ্ট হিসাব রয়েছে। ১৪০ জোড়া + ৩০০ জোড়া = জামদানি শাল।

জামদানি শালের পাড়ে (শালের চারপাশ) সুতার জোড় থাকে ১৪০। জোড়া সুতার মাধ্যমে শালের পাড় তৈরি হয়। আর জমিনে ৩০০ জোড়া সুতার মাধ্যমে শালের জমিন তৈরি হয়। এর বেশি জোড়া বা কম জোড়া হলে শাল দেখতে ভালো লাগে না।

শীত মৌসুমের কিছু আগে এই শাল বোনা শুরু হয়। বাজার থেকে সুতা কিনে এনে মাড় দেওয়া হয়। এরপর বাড়ির মেয়েরা কোমর তাঁতে এই শাল বুনে থাকেন। সুতার একপ্রান্ত বাইনে আর এক প্রান্ত কোমরে জড়ানো থাকে। মাটিতে বসে এই শাল বোনা হয়। ঘরের কাজের পাশাপাশি এই শাল বোনা হয়। তাই সাধারণত সাত-আট দিন প্রয়োজন একটি শাল বুনতে। কিন্তু টানা বুনে গেলে দুই দিনে বোনা শেষ করা সম্ভব।

এই শালের মাপ ৪.৫ বাই ২.৫ হাত। শালের দুই পাড়ে জামদানির ডিজাইন লক্ষ করা যায়। জমিনের বুননে দুই রঙের সুতার কাজ পরপর থাকে। এই শাল ততটা ভারী না। আর সাধারণ শ্যাম্পু বা লিকুইড ডিটারজেন্ট দিয়ে সহজেই পরিষ্কার করা যায়।

জামদানি শাল বোনার উল বাজারে উল পাওয়া যায়। এছাড়া পুরান সোয়েটার থেকে উল খুলে নেওয়া হয়। কয়েক বছর আগে আলাদা করে জামদানি শালের সুতা রঙ করা হতো। এখন রঙ্গিন সুতা/উল পাওয়া যায়। আলাদা করে উল বা সুতা রঙ করতে হয় না। উল সংগ্রহ করার পর তা ধুয়ে মাড় দেওয়া হয়। তারপর তা থেকে কোমর তাঁত বা বাইন ব্যবহার করে জামদানি শাল বোনা হয়।

দেশি শালের মাপ সাধারণত হাতে মেপে বলা হয়। যেমন- জামদানি শালের মাপ বলা হয়, সাড়ে চার হাত বাই আড়াই হাত। তবে কিছু শালের মাপ সাড়ে চার হাত বাই আড়াই হাতের কিছু কম হয়। আর জামদানি শালের পাড়ের মাপ হয় ৭ ইঞ্চি।

জামদানি শালের জমিনে হালকা ফুলের মতো ছিটা ছিটা ফুলের ডিজাইন আর পাড়ে অনেকটা জামদানি মোটিফের মতো বুনন আর শেষে খোলা উলের সুতার পাড় থাকে।

বেশ কয়েক বছর যাবত এই শাল নানাভাবে ক্রেতার চোখে পড়লেও এই শাল সুলভ ছিল না। অনেক ক্ষেত্রেই কেউ এসব এলাকায় ঘুরতে গেলে সেখান থেকে তা কিনে নিয়ে আসতেন। কিন্তু এ বছর চিত্র বেশ ভিন্ন। রাঙামাটির টেক্সটাইল মার্কেটে না গিয়েও অনলাইন থেকে এই শাল কেনা যাচ্ছে।

এই শাল অন্যান্য উলের শালের মতোই। যেহেতু উলের তৈরি তাই মাইল্ড লিকুইড ডিটারজেন্ট বা শ্যাম্পু দিয়ে এই শাল ধোয়া উচিৎ। পানি ঝরিয়ে হালকা রোদে শুকানো উচিৎ।

লেখক: স্বত্বাধিকারী, আনান'স ক্যারাভান।

ঢাকা/সিনথিয়া/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়