ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

হাত খরচের ৫০০ টাকাই ছিল আরিফার ব্যবসার পুঁজি 

মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া   || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৯:৩৬, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আরিফা খাতুন, জন্মস্থান ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায়। আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন তিনি। সংসারের পাশাপাশি বর্তমানে তিনি একজন দেশি পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তা। তার উদ্যোগের নাম আফাফ কালেকশন। 

তিনি একজন অনলাইন উদ্যোক্তা। অনলাইনে তার ফেসবুক পেজের পণ্যের মধ্যে রয়েছে বাচ্চাদের ও বড়দের ম্যাচিং পোশাক। সম্প্রতি জামদানি নিয়েও কাজ শুরু করেছেন তিনি। আরিফা তার উদ্যোগের গল্প বলেছেন রাইজিংবিডিতে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার উদ্যোক্তা পাতার সহ-সম্পাদক মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া।  

রাইজিংবিডি: আপনার ব্যবসার শুরুর গল্পটা শুনতে চাই। 

আরিফা: ব্যবসার শুরুর দিকটা সত্যিই সহজ ছিল না। আমি ব্যবসা শুরু করি ২০১৮ সালে বাচ্চাদের ড্রেস নিয়ে। তখন কারিগর ছিল না। ডেলিভারি দিতে সমস্যা হতো, এমনকি ঢাকার বাইরে হওয়ায় অনেক কাঁচামাল কিনতে পেতাম না। নিজের হাতখরচের ৫০০ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম নিজের ব্যবসা। পরিবারের সবাই চাইতো আমি যাতে এই কাজগুলো না করি, যাতে বিসিএসের জন্য আবার প্রিপারেশন নেই। কিন্তু ব্যবসাটা আমার নেশা হয়ে যায়। আমি চাইতাম, আমি উদ্যোক্তা হলে ১০ জন নয় বরং ১০০ জন আমার নাম বলবে। 

রাইজিংবিডি: কি কি পণ্য নিয়ে কাজ করছেন? 

আরিফা: শুরুটা হয়েছিল বাচ্চাদের ড্রেস দিয়ে। এখন আমি কাজ করি ফ্যামেলি মেচিং ড্রেস ও বাচ্চাদের ড্রেস নিয়ে। নতুন করে জামদানি নিয়ে আমার পথচলা শুরু করছি খুব তাড়াতাড়িই। 

রাইজিংবিডি: ঠিক কোন ধরনের চিন্তা ভাবনা থেকে জামদানি পণ্য নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করেছিলেন? 

আরিফা: গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই পরিকল্পনা ছিল জামদানি নিয়ে কাজ করবো। কিছু দিন আগে ই-ক্যাবের (ই- কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সাবেক সভাপতি ও ফেসবুক গ্রুপ সার্চ ইংলিশের প্রতিষ্ঠাতা রাজিব আহমেদ স্যার যখন আমাকে পরামর্শ দিলেন জামদানি নিয়ে কাজ করতে, তখন থেকে আমার পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। 

জামদানি আমদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে। এটি আমাদের দেশের প্রথম স্বীকৃতি পাওয়া জিআই পণ্য (ভৌগলিক অবস্থার উপর নির্ভর করে কোনো নির্দিষ্ট এলাকার পণ্য)। তাই জামদানির ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশের যেমন উন্নতি হবে, তেমনি বিশ্বের কাছে আমাদের এই মূল্যবান সম্পদ পরিচিতি পাবে। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই জামদানি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আমার। 

রাইজিংবিডি: ব্যবসার শুরুটা কি অনলাইন কেন্দ্রিক, নাকি অন্য কোনো উপায়ে ছিল? 

আরিফা: আমার বিজনেসের শুরু অনলাইন কেন্দ্রিক ছিল এবং এখনো অনলাইন কেন্দ্রিক। 

রাইজিংবিডি:  কাজ করতে গিয়ে কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন?

আরিফা: জেলা পর্যায়ে থাকার কারণে কাঁচামাল সংগ্রহ করা ও ডেলিভারি দিতে গিয়ে অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি। আবার অনেকে অনেক কিছুই বলতো যে পড়াশোনা করেছি, চাকরি না করে অনলাইনে কাপড় বিক্রি করে। আমি এসব কথাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো করে চেষ্টা করে গেছি। 

রাইজিংবিডি: উদ্যোক্তা জীবনে সফল হতে কাদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি? 

আরিফা: আমার উদ্যোক্তা জীবনে সফল হওয়ার পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি, তিনি হলেন রাজিব আহমেদ স্যার। যার সঠিক গাইডলাইন পেয়ে আমি সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এরপর বলবো, আমার পরিবারের প্রতিটা মানুষের ভূমিকা অপরিসীম। 

রাইজিংবিডি: ব্যবসা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

আরিফা: আমার ইচ্ছা আমি আমার নিজের সফল কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আর্থিকভাবে অসচ্ছল নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। দেশীয় ঐতিহ্য জামদানিকে সবার সামনে তোলে ধরা। সেই সঙ্গে জামদানি নিয়ে শক্তিশালী একটি ব্র্যান্ডিং তৈরি করায় এখন ভবিষ্যত পরিকল্পনার অংশ। 

রাইজিংবিডি: আপনার উদ্যোগের সফলতার কথা জানতে চাই।   

আরিফা: আমার বর্তমান উদ্যোগ “Afaf creations”- এর পথচলা শুরু হয় উই থেকে রাজিব আহমেদ স্যারের পরমার্শে। উই থেকে আমি স্যারকে পাই ও আগের সব কিছু ভুলে নিজের উদ্যোগ শুরু করি। এখন আমার প্রতিদিন অর্ডার আসে। বর্তমান ৪ জন কারিগর নিয়ে চলছে আমার ব্যবসা। আমার সবচেয়ে বড় সফলতা হলো, আমার স্বামীকে রাজি করানো। ফলে আমার উদ্যোগের অনেক কাজেই সে হেল্প করে।

আমার ৫০০ টাকায় শুরু করা বিজনেসের এখন পর্যন্ত বিক্রি ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বিজনেস শুরু করার ১ বছর পর থেকে ২/৩ ধাপে অর্থ বিনিয়োগ করেছি। 

রাইজিংবিডি: নতুন উদ্যোক্তা এই পেশায় আসতে চাইলে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী? 

আরিফা: নতুন উদ্যোক্তা এই পেশায় আসতে চাইলে প্রথমে বলবো নিজে আগে সার্চ করে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি কী, অনলাইনে বিজনেসের বেসিকটা জানা জরুরি। তারপর নিজের পণ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা নিতে হবে। সর্বোপরি পড়ালেখা করতে হবে। 

রাইজিংবিডি: ধন্যবাদ আপনাকে। 

আরিফা: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আমার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য। রাইজিংবিডির জন্য শুভকামনা রইলো।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়