বিপন্ন ব্যাঙ, প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব
তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম
দেশিয় প্রজাতির কুনো ব্যাঙ
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : সারাবিশ্বে এখনো পর্যন্ত চার হাজার ৭৪০ প্রজাতির ব্যাঙের দেখা মিলেছে। এর মধ্যে ১৯৮০ সালের পরই হারিয়ে গেছে ২০০ প্রজাতির ব্যাঙ। বাংলাদেশে ব্যাঙের প্রজাতি মাত্র ৬৩টি। দু’দশক আগেও সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চলে এই ৬৩ প্রজাতির মধ্যে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ প্রজাতির ব্যাঙের দেখা মিলতো। কিন্তু দিন দিন বরেন্দ্রের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অসহায় এ প্রাণিটি। দাবি ব্যাঙ গবেষকদের।
ব্যাঙ গবেষকরা বলছেন, এ অঞ্চলে দিন দিন বনভূমি ও জলাশয় কমে যাওয়া, পানি দূষণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, অকারণে এদের হত্যা করা, অতি উৎসাহী মানুষের দ্বারা ব্যাঙের মাংস ভক্ষণ এবং ফসলের খেতে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগের কারণে বিপন্ন হয়ে উঠেছে ব্যাঙ। বরেন্দ্রের প্রকৃতিতে এখন বড়জোর ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির ব্যাঙের দেখা মেলে।
এ অবস্থায় আজ শনিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ব্যাঙ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে এবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত ‘ন্যাচার আই’ নামের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন গোদাগাড়ীতে এই কর্মসূচির আয়োজক।
গোদাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আয়োজনের মধ্যে রয়েছে- র্যালি, ব্যাঙের উপকারিতা তুলে ধরে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, আলোচনাসভা, উপস্থিত বক্তৃতা, চিত্রাঙ্কন, উন্মুক্ত কুইজ ও রচনা প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণ।
ন্যাচার আই’র প্রতিষ্ঠাতা জায়িদুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবেশের জন্য খাদ্যচক্রের অন্যতম নির্দেশক ব্যাঙ। এ ছাড়া সম্প্রতি এক ব্রিটিশ গবেষকের গবেষণায় ভূকম্পন পূর্বাভাস হিসেবে ব্যাঙ ভূমিকা পালন করে বলেও উঠে এসেছে। কিন্তু বরেন্দ্র অঞ্চলের সবচেয়ে দ্রুত হারিয়ে যাওয়া প্রাণি হতে যাচ্ছে ব্যাঙ। অথচ ব্যাঙ ডেঙ্গু, গোদ রোগ, কলেরা, টাইফয়েড, এনথ্রাক্স ও ম্যালেরিয়ার মতো শত শত ভয়ঙ্কর রোগবাহী কীটপতঙ্গ খেয়ে এসব রোগকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ব্যাঙ আমাদের পরম বন্ধু।’
তিনি বলেন, ‘১৯৮৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সোনা ব্যাঙ রফতানি করে বাংলাদেশ প্রায় দুই কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার অর্জন করেছে। কিন্তু এ সময়গুলোতে ফসলে বিভিন্ন পোকার আক্রমণে আমরা হারিয়েছি কোটি কোটি ডলার। তাই পরিবেশ রক্ষায় আজ আমরা ব্যাঙ সংরক্ষণের দাবি তুলেছি। এ জন্যই ব্যাঙ রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরিতে আমাদের এই প্রচেষ্টা।’
পরিবেশ অধিদফতর রাজশাহীর উপপরিচালক নূর আলম বলেন, ‘দিন দিন এসব অঞ্চলে জলাভূমি বিলুপ্ত হওয়ায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ব্যাঙ। তা ছাড়া প্রখর খরার কবলে পড়ে বিরল প্রজাতির অনেক ব্যাঙই মারা গেছে। এভাবে দিন দিন এ অঞ্চলে ব্যাঙের প্রজাতি কমে গেছে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসমত আরা আলী জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাঙের শুধু উপকারিতাই আছে, এর কোনো অপকারিতা নেই।’
রাজশাহী ফরেস্ট্রি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইন্সটিটিউটের পরিচালক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘আমরা এখন বিভিন্ন রাসায়নিক কীটনাশক বা বিভিন্ন মশা-মাছি মারার কয়েল কিংবা অ্যারোসল স্প্রের প্রতি নির্ভর হয়ে পড়েছি। এতে পরিবেশের পাশাপাশি আমাদের শরীরও ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে ব্যাঙের মতো উভচর প্রাণীগুলোকে সংরক্ষণ করে প্রাকৃতিক উপায়ে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে রাখা।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাঙ মানুষের কাছের বন্ধু। শত শত ভয়ঙ্কর রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ছোট্ট এই প্রাণিটি। ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার মতো আশ্চর্য ধরনের এক ক্ষমতা আছে ব্যাঙের। অথচ পরিবেশ দুষণ, আবাসস্থল ধ্বংস, রোড কিলিং, শিশুদের ইট-পাটকেল ছোড়া, কীটনাশক ব্যবহার, খাবার হিসেবে ব্যাঙের পা রফতানি কিংবা পরীক্ষাগারে পরীক্ষার নামে নির্বিচারে মেরে ফেলা হচ্ছে লাখ লাখ ব্যাঙ। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ।’
রাইজিংবিডি/রাজশাহী/৩০ এপ্রিল, ২০১৬/তানজিমুল হক/টিপু
রাইজিংবিডি.কম