ঢাকা     বুধবার   ০১ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

চলতি দশকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে অগ্রগতি ‘অতি সামান্য’

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ১৬ নভেম্বর ২০২৩  
চলতি দশকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে অগ্রগতি ‘অতি সামান্য’

ছবি: প্রতীকী

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের অন্যতম প্যারিস চুক্তি। এই জলবায়ু চুক্তির বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও দেশগুলো এখনও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। চলতি দশকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে ‘অতি সামান্যই’ অগ্রগতি হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের লাগাম হাতের মুঠোয় ধরে রাখতে বিশ্ব ব্যর্থ হচ্ছে। 

১৯৫ দেশের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়েছে। 

চলতি বছর জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক সর্ববৃহৎ বার্ষিক আয়োজন তথা কনফারেন্স অব পার্টিজের (কপ) ২৮তম সম্মেলন সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ৩০ নভেম্বর থেকে আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিতব্য জলবায়ু-সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের এ সম্মেলনের আগে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করল জাতিসংঘ। জলবায়ু-সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনাগুলোর বিশ্লেষণের আলোকে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফসিসিসি। বিশ্ব সংস্থাটির জলবায়ু পরিবর্তন সংগঠন বলেছে, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে জরুরি ভিত্তিতে যথার্থ কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে বিশ্ব।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। ২০২৩ সাল এ পর্যন্ত মানব ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে বিশ্বনেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা আগে কখনোই এতো বেশি জরুরি ছিল না। 

জাতিসংঘ বলছে, দেশগুলোর এখনকার পরিকল্পনা অনুযায়ী সামনে এগিয়ে যেতে থাকলে ২০১০ সাল নাগাদ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের যে হার ছিল, ২০২৩ সালে তার তুলনায় ৯ শতাংশ বাড়বে। অথচ চলতি দশকের শেষ নাগাদ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে ২০১০ সালের মাত্রার তুলনায় এ নির্গমন হার ৪৫ শতাংশ কমানো দরকার। 

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা সিমন স্টেইল বলেন, ১ ডিগ্রির প্রতিটি ভগ্নাংশ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা মারাত্মকভাবে লাইনচ্যুত হয়ে পড়েছি। কপ২৮ সম্মেলনই হলো আমাদের এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর সময়।

বন্যা, ঝড়, তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত এই পৃথিবীর জন্য আসন্ন দুবাই সম্মেলনে ‘পরিষ্কার মোড় ঘোরানো পয়েন্ট’ চিহ্নিত করতে আহ্বান জানান সিমন স্টেইল।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, বিশ্ব জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ইউএনএফসিসিসি’র সর্বশেষ এ প্রতিবেদনের একটি বার্তার মাধ্যমে আরও প্রমাণিত হলো, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে এবং জলবায়ু বিপর্যয়ের সবচেয়ে খারাপ অভিঘাত এড়াতে বিশ্ব ব্যাপকভাবে পেছনে পড়ে রয়েছে।

ইউএনএফসিসিসির এই প্রতিবেদনটির ভিত্তি ছিল প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ১৯৫টি দেশের জাতীয়ভাবে গৃহীত অবদানগুলোর (এনডিসি) নথিপত্র। সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সিমন স্টেইল বলেন, সরকারগুলো সংকট এড়াতে বেবি স্টেপস বা শিশুদের মতো করে পা ফেলছে। 

কপ২৮ সম্মেলনের সভাপতি যিনি ইউএইর তেল কোম্পানির প্রধান সুলতান আল জাবের বলেন, ‘জাতীয় পরিকল্পনার যে সার-সংক্ষেপ প্রতিবেদন প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণে আমাদের অধিকতর উচ্চাভিলাষ ও জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাকে নির্দেশ করেছে। সোজা কথা, দেরি করার মতো সময় হাতে নেই।’ 

তিনি আরও বলেন, কপ২৮ গুরুত্বপূর্ণ এই দশকের বাঁক বদলকারী ঐতিহাসিক সম্মেলন হবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট ‘স্টেট অব ক্লাইমেট অ্যাকশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছে, বর্তমানে যে গতিতে কয়লার ব্যবহার হ্রাস করা হচ্ছে; তার তুলনায় সাত গুণ বেশি দ্রুত এই জীবাশ্মের ব্যবহার কমাতে হবে। বন উজাড় কমাতে হবে চার গুণ দ্রুতগতিতে। প্রত্যাশিত মাত্রায় গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাসের ক্ষেত্রে দেশগুলো প্রতিটি প্রায় সূচকেই পিছিয়ে রয়েছে। দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে বৈশ্বিক তাপমাত্রা আটকে রাখার লক্ষ্য অনেক দূরে। তবে প্রতিবেদনটিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ার প্রশংসা করা হয়।

ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের গবেষক এবং প্রকাশিত গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক সোফি বোয়েহম বলেন, ‘দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে লক্ষ্যমাত্রায় যেতে আমরা নিষ্প্রভ। কয়েক দশক ধরে সতর্কবার্তা এবং জেগে ওঠার আহ্বান সত্ত্বেও আমাদের নেতারা প্রয়োজন অনুযায়ী কাছাকাছি গতি ও মাত্রায় জলবায়ু পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।’

প্রতিবেদনটিতে চলতি দশক শেষ হওয়ার মধ্যেই জলবায়ু লক্ষ্য স্পর্শ করতে বেশ কিছু সুপারিশ করেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গড় আকারের ২৪০টি কয়লাভিত্তিক ২৪০টির মতো বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বন্ধ করতে হবে প্রতিবছর। ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই তা করতে হবে। চলতি বছর প্রতি মিনিটে যেখানে ১৫টি ফুটবল মাঠের সমান বন উজাড় হয়েছে এবং এই কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রের হার বর্তমানে বছরে ১৪ শতাংশ হারে বাড়ছে এবং একে বছরে ২৪ শতাংশে নিতে হবে। 

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়