ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ধানুয়া কামালপুর মুক্ত দিবস আজ

মাহফুজুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৪ ডিসেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ধানুয়া কামালপুর মুক্ত দিবস আজ

জামালপুর সংবাদদাতা : আজ ৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে শত্রু মুক্ত হয় মুক্তিযুদ্ধের ১১নং সেক্টরের ধানুয়া কামালপুর রণাঙ্গন। স্বাধীন বাংলার আকাশে উড়ে বিজয়ের পতাকা।

১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর রণাঙ্গনের একটি চিত্র। ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জ ছিল ১১ নম্বর সেক্টরের হেড কোয়ার্টার। এই সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর প্রবেশ ছিল কামালপুর। আর এ কারণে পাকহানাদার বাহিনী শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল কামালপুরে।
 
১৯৭১ এর ১২ জুন থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পাকবাহিনীর ক্যাম্পে মোট আটবার আক্রমণ করে। সবচেয়ে বড় এবং রক্তাক্ত যুদ্ধ হয় ৩১ জুলাই রাতে। এই সেক্টরের সার্বিক নেতৃত্বে থাকে ভারতীয় ১০১ কমিউনিকেশন জোনের কমান্ডার মেজর জেনারেল গুরুবক্স সিং গিল। কামালপুর-জামালপুর এলাকা দখলের দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্রিগেডিয়ার এইচএস ক্লের নেতৃত্বাধীন ৯৫ মাউন্টেন ব্রিগেডকে। এই ব্রিগেডের দুইটি ব্যাটালিয়নকে পাকহানাদার বাহিনীর কামালপুর বিওপি আক্রমণের নির্দেশ দেন মেজর গিল। ৩ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর হানাদার বাহিনীর কামালপুর বিওপিতে আঘাত হানে। মাত্রাতিরিক্ত আর্টিলারি গোলা বর্ষণ করেও তেমন কোনো ক্ষতি করা সম্ভব হয়নি। এরপর বিমান হামলার মাধ্যমে পাকিস্তান সেনা বাহিনীর বিওপি ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত হয়। শুরু হয় বিমান আক্রমণ। প্রতিটি মিশনের পর মেজর জেনারেল গিল পাক বিওপি কমান্ডার ক্যাপ্টেন আহসানকে আত্মসমর্পণ করার জন্য একটি করে চিঠি পাঠান। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও ৪ ডিসেম্বর শত্রু সেনা বিওপিতে প্রথম চিঠি নিয়ে যান বীর মুক্তিযোদ্ধা বশীর আহমদ বীর প্রতীক। চিঠিতে লেখা ছিল- ‘তোমাদের চারদিকে যৌথবাহিনী ঘেরাও করে রেখেছে। বাঁচতে চাইলে আত্মসমর্পণ কর, তা না হলে মৃত্যু অবধারিত।’ এই চিঠি পেয়ে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে পাকসেনা কমান্ডার আহসান মালিক। বশিরের ফিরতে বিলম্ব হওয়ায় আরেকটি চিঠি দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা সনজুকে পাঠানো হয় পাকসেনা ক্যাম্পে। চিঠির জবাব না পাওয়ায় শুরু হয় চূড়ান্ত বিমান হামলা। অবস্থা বেগতিক দেখে অস্ত্রসহ পাকবাহিনীর ১৬২ জনের একটি দল আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। হানাদার মুক্ত হয় কামালপুর রণাঙ্গণ। মুক্তিযোদ্ধারা প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন কামালপুর মাঠে।

১১নং সেক্টরের ধানুয়া কামালপুর হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যাকা-ের চি‎হ্ন অনেক গণকবর আর বধ্যভূমি এখন নিশ্চিহ্নের পথে। ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করা হলেও বেশিরভাগ গণকবর আর বধ্যভূমি এখনো অরক্ষিত।

কামালপুর মুক্ত দিবস আজ বর্ণাঢ্য অয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতারা।

ধানুয়া কামালপুরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ, গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো সরকারিভাবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/জামালপুর/৪ ডিসেম্বর ২০১৫/মাহফুজুর রহমান/দিলারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়