ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ

পাবনা প্রতিনিধি : বিগত বছরগুলোতে পাবনায় কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কম সময়ে গরু মোটাতাজা করার অবৈধ পন্থায় ক্ষতিকারক ভারতীয় ওষুধ প্রয়োগে ঝুঁকেছিলেন একশ্রেণির অসাধু খামারি। কিন্তু গণমাধ্যমে বিষাক্ত ওষুধে মোটাতাজা করা গরুর মাংসের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরায় এবং প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে পাল্টে গেছে সেই চিত্র। এ বছর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে জেলার খামারিরা ঝুঁকেছেন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করার দিকে। দেশে গরুর সংকট আর ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ থাকায় ভালো দাম পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছেন জেলার খামারিরা।

 

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, পাবনা জেলার ৯টি উপজেলায় গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজাকরণের মোট খামারি আছেন ১৬ হাজার ২৭৫ জন। আর এ বছর গরু মোটাতাজা করা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার। খামারিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কোরবানির ঈদে ভালো দাম পাওয়ার আশায় গরু মোটাতাজা করেন খামারিরা। বিগত বছরে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে গরু মোটাতাজা করতে তারা ব্যবহার করেছিলেন ভারতীয় বিষাক্ত ট্যাবলেট বা ইনজেকশনসহ উচ্চমাত্রার ক্ষতিকার ওষুধ। যা ছিল জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। কিন্তু গণমাধ্যমগুলোতে ওই সব মোটাতাজা গরুর মাংসের ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরায় টনক নড়ে সরকারের। তাই এ বছর ঈদ সামনে রেখে নিষিদ্ধ ওষুধ প্রয়োগে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। প্রাণিসম্পদ বিভাগের নজরদারিতে জনসচেতনতা বাড়ে খামারি পর্যায়ে। তাই এবার পাবনার খামারিরা অসাধু পন্থা ছেড়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ার দিকে ঝুঁকেছেন।

 

চাটমোহর উপজেলার ইছাখালী গ্রামের খামারি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘গত বছর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভারতীয় ওষুধের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরায় আমাদের মাঝে সচেতনতা বেড়েছে। এ ছাড়া প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে খামারগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ফলে আমরা এখন আর ভারতীয় ওষুধ দিয়ে গরু মোটাতাজা করি না।’

 

উথুলী গ্রামের খামারি শামসুল ইসলাম বলেন, গরু কিনে প্রথমে কৃমিমুক্ত করে নিই। এরপর আমরা কাঁচা ঘাস, খড়, ভূষি, গমের ছাল, খৈল, খুদের ভাত, লালি গুড়সহ নানারকম খাদ্য উপাদান দিয়ে সুষম খাদ্য তৈরি করে গরুকে খাওয়াই। এতে গরু ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে মোটাতাজা হয়ে ওঠে। বনগ্রামের খামারি গোলাম কিবরিয়াসহ কয়েকজন খামারি বলেন, এবার ভারতীয় গরু না এলে আমার ৭টি মোটাতাজা গরু বিক্রি করে অন্তত দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা মুনাফা ঘরে তুলতে পারব। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যদি ভারতীয় গরু আসে তাহলে লোকসান দিতে হবে। আমরা চাই সরকার দেশীয় খামারিদের কথা চিন্তা করে ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ রাখবে।

 

অপরদিকে সচেতনতা বাড়ছে মাঠপর্যায়ের পশু চিকিৎসক ও ওষুধ ব্যবসায়ীদেরও। বনগ্রামের গবাদিপশুর ওষুধ ব্যবসায়ী মনোয়ার জাহিদ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের স্বেচ্ছাসেবক পশু চিকিৎসক সোহেল রানা বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে আমাদের কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে ভারতীয় ক্ষতিকর কোনো ওষুধ যেন আমরা বিক্রি না করি। যার কারণে এখন আর ভারতীয় ওষুধ বাজারে পাওয়া যায় না। আমরা খামারিদের সুষম খাদ্য ও দেশি কোম্পানির ভিটামিন ওষুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিই।’

 

এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, ‘কৃষক বা খামারি পর্যায়ে আমরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে কোনো খামারি অবৈধ পন্থায় অসাধু প্রক্রিয়ায় গরু মোটাতাজা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে হাটে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদারকরণের লক্ষ্যে ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছি। এই টিম জেলার বড় বড় পশুর হাটে নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।’

 

 

 


রাইজিংবিডি/পাবনা/১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫/শাহীন রহমান/দিলারা/এএন

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়