ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আপনি মৃত্যুর সময় কী বলবেন?

মুুম রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৬, ২০ জানুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আপনি মৃত্যুর সময় কী বলবেন?

মুুম রহমান : সম্ভবত এই একটি প্রশ্নের উত্তর দেয়া খুবই কঠিন। জন্ম’র সাথে সাথে একমাত্র মৃত্যুরই গ্যারান্টি পাওয়া যায়। চান বা না চান মরতে আপনাকে হবেই। অথচ মানুষ সবচেয়ে বেশি মানতে চায় না মৃত্যুকে। আবার এই মৃত্যু ভয়ই মানুষের বড় ভয়।

 

মৃত্যু নিশ্চিত, কিন্তু কখন কীভাবে আসবে তা বলা প্রায় অসম্ভব। কখনো কি আমরা ভাবতে পেরেছি ঠিক সম্মুখে যখন মৃত্যু দাঁড়িয়ে থাকবে কী বলবো আমরা? অথবা কী করবো? মৃত্যুর সময় মানুষের আচরণ সত্যিই বিস্ময়কর, কখনোবা কল্পনাতীত। আসুন কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির কথা জানা যাক যারা মৃত্যুর সময়ও অদ্ভুত আচরণ করেছিলেন।

 

যে একবার রানী সে সব সময়ই রানী। কুইন মারির মৃত্যু হয়েছিলো গিলোটিনে। তার মৃত্যুদণ্ড  কার্যকর করার জন্য জল্লাদ তাকে গিলোটিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই জল্লাদের পায়ে তার পা লেগে গিয়েছিলো। রানী মারী বলেছিলেন, ‘ক্ষমা করবেন জনাব, এটা আমি ইচ্ছা করে করিনি।’ এটিই ছিলো তার জীবনের শেষ সংলাপ। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তিনি তার আভিজাত্য আর ভদ্রতাবোধ হারাননি। প্র্রুসিয়ার রানী লুইসে অবশ্য নিজের মৃত্যু সামনে দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি রানী কিন্তু নিজের হাতটা নাড়ানোর ক্ষমতাও আমার নেই!’

 

মৃত্যু মানে তো অনন্ত ঘুম। কারো যদি ঘুমের ব্যাঘাত হয় সে কি মৃত্যু কামনা করবে? যথাবিহিত বলা মুশকিল, বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক জে এমন বেরি পিটার প্যান লিখে বিশ্বে অমর হয়ে আছেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ঘুমাতে পারছি না।’ ইংরেজ রোমান্টিক কবি বায়রন অবশ্য চিরঘুমে তলিয়ে যান শান্তভাবেই। তিনি শেষ শয্যায় বলেন, ‘এখন আমার ঘুমাতে যাওয়া উচিত। শুভ রাত্রি।’

 

হলিউডের চির সবুজ নায়ক হামফ্রে বোগার্ট জীবনের শেষ সংলাপ হিসাবে বলেছিলেন, ‘আমার কখনোই স্কচ থেকে মার্টিনিতে আসা উচিত হয়নি।’ স্কচ হুইস্কি থেকে মার্টিনিতে আসক্ত এই নায়ক মদ্য পানকেই কি মৃত্যুর কারণ মনে করেছিলেন? সুরা আসক্তি অবশ্য আরো অনেকেরই ছিলো। রুশ সাহিত্যিক আন্তন শেখভ মারা গেছেন যক্ষায় ভুগে। তিনি মরার আগে শ্যাম্পেনের অভাব বোধ করেছিলেন। ‘আমি মারা যাচ্ছি। অনেকক্ষণ হলো আমি শ্যাম্পেন পান করি না।’ মৃত্যু উদযাপন করে শ্যাম্পেনে চুমুক দেয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।

 

জেমস ফ্রেঞ্চ কোন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন না, বরং কুখ্যাত বলা যায়। খুনের এই আসামিকে ইলেকট্রিক চেয়ারে বিদ্যুৎ প্রবাহ দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিলো। মৃত্যুদণ্ড-র জন্য বৈদ্যুতিক চেয়ারে তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি তিনি জীবনের শেষ কথাটি চিৎকার করে বলেন, ‘‘ওহে বন্ধুগণ! কালকের সংবাদপত্রের জন্য এই শিরোনামটি কেমন- ‘ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস!’’

 

আরেক সিরিয়াল কিলার কার্ল পাঞ্জরাম ফাঁসি কাষ্ঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘তাড়াতাড়ি কর, হারামি হোসিয়ার [জল্লাদের নাম], তুই যতোক্ষণ ধরে গাধামি করছিস ততক্ষণে আমি দশটা খুন করতে পারতাম।’

 

জোসেফ হেনরি গ্রিন নিজের পালস দেখে বলেছিলেন, ‘এটা বন্ধ হয়ে গেছে।’ এরপরই তার মৃত্যু হয়।

 

চীনা ভাষায় ‘ডাক্তার আসিবার আগেই রুগিটি মারা গেলো’ প্রবাদটি কীভাবে বলে আমি তা জানি না। তবে মহান চীনের স্বপ্নদ্রষ্টা ডাক্তার আসিবার পূর্বেই মারা গিয়েছিলেন এটা জানি। ‘আমি অসুস্থ বোধ করছি। ডাক্তার ডাকো’ স্রেফ এইটুকু বলেই চীনের মহা নায়ক মাও সে তুং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। কমিউনিস্ট বিপ্লবের আরেকজন বিশ্বখ্যাত নেতা চে গুয়েভারা মনে হয় মৃত্যুকে একটুও ভয় পেতেন না। কিউবান এই বিপ্লবী নেতা আততায়ী মারিও তেরানকে বলেছিলেন, ‘গুলি করো কাপুরুষ, তুমি স্রেফ একটা ব্যক্তিকে হত্যা করতে পারবে।’

 

ভবিষ্যত বক্তা হিসাবে নস্ট্রাডামাস সারা বিশ্বে পরিচিত। তাকে নিয়ে বই লেখা, সিনেমা বানানোর সংখ্যা কম নয়। তার বলা অনেক ঘটনাই পরে ঠিক ঠিকই ঘটেছে। ভবিষ্যত বক্তা নস্ট্রাডামাস নিজের মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তিনি বলেছিলেন, ‘আগামীকাল, আমি আর এখানে থাকবো না।’

 

মৃত্যুর সময় ভগবান-খোদার নাম নেয়াটাই রেয়াজ। সবাই তখন দূর্বল হয়ে যায়। শেষ সময়ে পরম সৃষ্টিকর্তাই হয় মানুষের আশা-ভরসা। কিন্তু বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক ভলতেয়ার মোটেও ঈশ্বরের নাম নেননি। মৃত্যু শয্যায় শায়িত নাস্তিক ভলতেয়ারকে পার্দ্রী বলেছিলেন, শয়তানকে অস্বীকার করে ঈশ্বরে বিশ্বাস আনতে। ভলতেয়ার বলেছিলেন, ‘এখন, ওগো ভাল মানুষ, এখন শত্রু বানানোর সময় নয়।’ জার্মান কবি হাইনরিশ হাইন অবশ্য মৃত্যুর সময় ঈশ্বরকে স্বরণ করেছিলেন। যদিও তার ধরনটা আলাদা ছিলো। তিনি বলেছিলেন, ‘ঈশ্বর আমাকে ক্ষমা করবেন, ওটাই তার কাজের ধরন।’

 

বিশ্বখ্যাত ছোটগল্পকার ও’ হেনরি অবশ্য মৃত্যুর সময় বলেছিলেন, ‘বাতিগুলো জ্বালাও, আমি অন্ধকারে বাড়ি যেতে চাই না।’ মার্কিন নাট্যকার ইউজিন ও’ নীল জন্মেছিলেন হোটেলে। তার বাবা-মাও নাটকে জড়িত ছিলেন। তিনি মৃত্যুর সময় যথার্থই বলেছিলেন, ‘আমি জানতাম, আমি জানতাম। হোটেলের ঘরে জন্মেছিলাম, শালার হোটেলের ঘরেই আমার মৃত্যু হবে।’

 

মৃত্যু ভয় সবার মধ্যেই কাজ করে। তবে বিবর্তনবাদের প্রবক্তা চার্লস ডারউইন মৃত্যুর সময় বলেছিলেন, ‘আমি মৃত্যু নিয়ে একটুও ভীত নই।’ অনেকেই মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে দেখেছেন। ফরাসী নৃত্যশিল্পী ইসাডোরা ডানকান তার মৃত্যুর সময় বলেন ‘বিদায় বন্ধুগণ! আমি গৌরবের দিকে যাচ্ছি।’ ঈশ্বরে বিশ্বাস কিংবা মৃত্যুকে মেনে নেয়ার প্রস্তুতি থাকলেই মৃত্যুর সময় শান্ত সমাহিত আচরণ করা যায় হয়তো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এন্ড্রূ জ্যাকসন তার মৃত্যুর সময় বলেছিলেন, ‘ওহ, কেঁদো না, শিশুরা লক্ষ্মী হয়ে থেকো। আমরা আবার স্বর্গে মিলিত হবো।’ আরেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্র উইলসন বলেছিলেন, ‘আমি তৈরি।’ আর মহান যিশু খ্রিস্ট বলেছিলেন, ‘পিতা, তোমার হাতে আমার আত্মাকে তুলে দিলাম।’

 

এখন আপনি ভাবতে বসুন, মৃত্যুর সময় আপনি কী বলতে চান বা বলতে পারেন।



 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জানুয়ারি ২০১৬/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়