ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ননসেন্স ছড়ার সুকুমার

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ননসেন্স ছড়ার সুকুমার

শাহ মতিন টিপু :  তার ছড়া পড়া হয়নি, এমন মানুষ বাংলাদেশে নেই। মজা এবং উপমা হিসাবে তার ছড়াগুলোর দু-চার লাইন অনেকেরই আয়ত্বে। শিশুতোষ পাঠ্যে তার কোন না কোন ছড়া আছেই। যার কথা বলছি তিনি সুকুমার রায়।

বলা হয়, সুকুমার রায় ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক বিস্ময় । শুধু জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিকই নন, বাংলা ভাষায় ননসেন্স এরও প্রবর্তক। সুকুমার রায়ের ৯৫তম প্রয়াণ দিবস আজ। ১৯২৩ সালে ১০ সেপ্টেম্বর তিনি মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে একমাত্র পুত্র সত্যজিৎ রায় এবং স্ত্রীকে রেখে প্রয়াত হন । সুকুমার রায়ের জন্ম ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর, কলকাতার এক ব্রাহ্ম পরিবারে।

সুকুমার রায়ের প্রচুর ছড়া আজো সাহিত্য রস যুগিয়ে যাচ্ছে। আজো মোহিত করছে আমাদের। তার ‘রামগরুড়ের ছানা  হাসতে তাদের মানা/হাসির কথা শুনলে বলে/হাসব না-না, না-না!’ কিংবা ‘মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার/সবাই বলে, মিথ্যে বাজে বকিসনে আর খবরদার!/ অমন ধারা ধমক দিলে কেমন করে শিখব সব?/ বলবে সবাই মুখ্য ছেলে, বলবে আমায় গো গর্দভ!’  কিংবা ‘ষোলা আনাই মিছে’ ছড়ার ‘খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে/ বাবু দেখেন, নৌকাখানি ডুবলো বুঝি দুলে!/ মাঝিরে কন, একি আপদ! ওরে ও ভাই মাঝি/ ডুবলো নাকি নৌকা এবার? মরব নাকি আজি?/ মাঝি শুধায়, সাঁতার জানো? - মাথা নাড়েন বাবু/ মূর্খ মাঝি বলে, মশাই, এখন কেন কাবু?/ বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে/ তোমার দেখি জীবন খানা ষোল আনাই মিছে!’ কিংবা ‘চলে হনহন/ ছোটে পনপন/ ঘোরে বনবন/ কাজে ঠনঠন’ -এমন অনেক অনেক ছড়া আমাদের অনেকেরই জানা।

কেবল ছড়াই নয়, সুকুমার রায় অনেক গুণের মানুষ। তিনি শিশুসাহিত্যিক, রম্যলেখক, নাট্যকার এবং কার্টুনিস্ট। আনন্দ কুড়ানোর উপাদানই ছিল তার লেখার বৈশিষ্ট। নিজের লেখায় কালি-কলমের আঁচড়ে চমৎকার সব কার্টুন ও ড্রয়িং ছিল তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো।

সুকুমার রায়ের বাবা ছিলেন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, আবার পুত্র সত্যজিৎ রায়ও খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার । সত্যজিৎ রায় লেখালেখিতে পিতার মতই অলংকরণে  সিদ্ধহস্ত ছিলেন। সত্যজিৎ তার লেখা ‘ফেলুদা’ ও ‘প্রফেসর শঙ্কু’ সিরিজের প্রায় সবকটি বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলংকরণ নিজেই করেছিলেন। পিতার মতো তারও আঁকার মাধ্যম ছিল কালি-কলম।

পিতা উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন একাধারে শিশুতোষ গল্প ও জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক, চিত্রশিল্পী, সুরকার ও শৌখিন জ্যোতির্বিদ। উপেন্দ্রকিশোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি সুকুমারকে সরাসরি প্রভাবিত করেছিলেন। এ ছাড়াও রায় পরিবারের সাথে জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রমুখের সম্পর্ক ছিল।

১৮৯৫ সালে মাত্র আট বছর বয়সে সুকুমারের প্রথম কবিতা 'নদী' প্রকাশিত হয় ‘মুকুল’ পত্রিকায়। এরপর ন'বছর বয়সে ‘টিক্ টিক্ টং’ লেখেন ইংরেজি শিশুপাঠ ÔHickory, Dickory, DockÕ -এর অনুবাদ হিসাবে। তার একটি ননসেন্স ছড়া এ রকম- ‘মাসী গো মাসী পাচ্ছে হাসি/ নিম গাছেতে হচ্ছে সিম,/ হাতির মাথায় ব্যাঙের বাসা/কাগের বাসায় বগের ডিম।’

সুকুমার রায়ের স্বল্পস্থায়ী জীবনে তার প্রতিভার শ্রেষ্ঠ বিকাশ লক্ষ করা যায়। ‘সন্দেশ’ এর সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে তার লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ আজও বাংলা শিশুসাহিত্যে মাইলফলক হয়ে আছে। তার বহুমুখী প্রতিভার অনন্য প্রকাশ তার অসাধারণ ননসেন্স ছড়াগুলোতে। তার প্রথম ও একমাত্র ননসেন্স ছড়ার বই আবোল তাবোল শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, বরং বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে নিজস্ব জায়গার দাবিদার।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়