টুপি মাথায় ‘মৌলবি হাঁস’
শামীম আলী চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

লেখক ছবিগুলো টাঙ্গুয়ার হাওর ও ভরতপুর থেকে তুলেছেন
পাখি নিয়ে যারা পড়াশোনা করেন, গবেষণা করেন, এমনকি বার্ড ফটোগ্রাফারদের কাছে এই পাখি Red-crested Pochard নামে পরিচিত। তবে অঞ্চলভেদে পাখিটির মৌলবি হাঁস, বজ্রমুড়ি হাঁস, রাঙ্গামুড়ি হাঁস বা রাঙ্গাঝুঁটি হাঁস নামেও পরিচিতি রয়েছে। পাখিটির মাথা অনেকটা টুপির মতো দেখতে বলে আমাদের দেশে ‘মৌলবি হাঁস’ নামেই পাখিটি বেশি পরিচিত।
হাঁস জাতীয় এই পাখির সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় রাজশাহীর পদ্মার চরে। বেশ কয়েক প্রজাতি হাঁসের সঙ্গে মাথায় লালটুপি পরা এই হাঁস যে কারো নজর কেড়ে নেবে। তবে সেবার রাজশাহীতে ছবি তুলতে পারিনি। পরে ২০২০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভারতের রাজস্থান রাজ্যের ভরতপুর জেলার কেওলাদিও ন্যাশনাল পার্কে খুব কাছ থেকে পাখিটির দেখা পাই। একসঙ্গে অনেকগুলো মৌলবি হাঁসের দেখা পাওয়ায় মন আনন্দে ভরে ওঠে। সময় নিয়ে জলার ধারে বসে ছবি তুলতে পেরেছিলাম তখন। মৌলবি হাঁসা ও হাঁসির জলকেলি ও পানিতে সাঁতার কেটে খাবার খোঁজার দৃশ্য দেখার মতো! সর্বশেষ ২০২০ সালের ৯ মার্চ মৌলবি হাঁসের সঙ্গে আবারো দেখা হয় টাঙ্গুয়ার হাওরে।
মৌলবি হাঁস Anatidae গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত ৫৪ সে.মি. দৈর্ঘ্যের এবং ৯৮০ গ্রাম ওজনের মাঝারি আকারের হাঁস। ছেলে ও মেয়ে হাঁসের চেহারায় ভিন্নতা আছে। প্রজননকালে ছেলে হাঁসের গোল মাথা মরচে কমলা। ঘাড় কালো। বুক ও পেট কালো। ডানা সাদা ডোরা। ওড়ার সময় ডানার পালকে সাদা রঙ দেখা যায়। এদের ঠোঁট উজ্জ্বল লাল। চোখ লাল। পা ও পায়ের পাতা কালো হয়। মেয়ে পাখির ঘাড় বাদামি। গাল সাদা। পিঠ বাদামি ও চোখ এবং ঠোঁট বাদামি। মেয়ে হাঁসের বাদামি ঠোঁটের সামনের অংশ পিত বর্ণের।
এরা মিঠা পানির হাওর, বিল, বড় জলাশয় ও নদীতে বিচরণ করে। সাধারণত বড় ঝাঁকে থাকে। পানিতে সাঁতার দিয়ে বা অল্প পানিতে গলা ডুবিয়ে আহার খায়। লাতা-পাতা, মুকুল, কচিকা, জলজ উদ্ভিদ, আগাছা বীজ, জলজ পোকামাকড়, ছোট ছোট শামুক জাতীয় প্রাণী ও ব্যাঙাচি এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে। এরা দ্রুত গতিতে উড়তে পারে। শত্রু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পানির উপর থেকে উড়ে পালাতে পারে। এদের গলার স্বর কর্কশ। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। প্রজননকালে জলাশয়ের পাশে ঘাসের স্তূপ দিয়ে তার উপর পালক বিছিয়ে বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়ে হাঁসপাখি ৮-১২টি ডিম পাড়ে।
মৌলবি হাঁস বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি। রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের হাওরে শীতকালে দেখা যায়। এ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড ও ইন্দোচীনে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
বাংলা নাম: মৌলবি হাঁস, বজ্রমুড়ি হাঁস, রাঙ্গামুড়ি হাঁস বা রাঙ্গাঝুঁটি হাঁস।
বৈজ্ঞানিক নাম: Netta rufina (Pallas, 1773)
ঢাকা/তারা
- ৭ মাস আগে বন্য হাতির ধাওয়া খেয়ে পেলাম বুনো টুনির দেখা
- ৮ মাস আগে পাখির নাম ‘রঙিলা দোয়েল’
- ৮ মাস আগে বাচ্চা হারিয়ে মা দুধরাজ পাখির হাহাকার
- ৮ মাস আগে পুকুর পাড়ে পেলাম ‘কালোবুক দামা’র দেখা
- ৯ মাস আগে যেভাবে খুঁজে পেলাম ‘কালো বাজ’ পাখি
- ৯ মাস আগে অনেক অপেক্ষার পর দেখা পেলাম নীল ফক্কির
- ৯ মাস আগে সীমানা নির্ধারণ করে বাস করে জল মোরগ
- ৯ মাস আগে হঠাৎ দেখি সুরেলা কণ্ঠের সাদা লেজ রবিন!
- ৯ মাস আগে প্রজননকালে গান গায় ‘লালডানা কোকিল’
- ৯ মাস আগে উড়ন্ত পোকা ধরায় পটু নীলগলা চুটকি
- ১১ মাস আগে ডুপ্লেক্স বাসা বানায় ছোট নীলচটক পাখি
- ১ বছর আগে মহাবিপন্ন পাখি ‘বন বাচকো’
- ২ বছর আগে ‘নীল শিসদামা’র কণ্ঠে বাঁশির সুর
- ২ বছর আগে গৃহপালিত হাঁসের পূর্বপুরুষ নীলশির হাঁস
- ২ বছর আগে বিপদ দেখলেই শুয়ে পড়ে শাবাজ ট্রিটি
- ২ বছর আগে সুরের পাখি সিঁদুরে-হলুদ মৌটুসী
- ২ বছর আগে দেখতে সবুজ বাঁশ ঘুঘু
- ২ বছর আগে বাইক্কা বিলের জলময়ূর
- ২ বছর আগে নগরে পাকড়া খঞ্জন
- ২ বছর আগে পাখির নাম হট্টিমা
- ২ বছর আগে লালচে কাঠঠোকরার লুকোচুরি
- ২ বছর আগে প্রথম দেখাতেই পাপিয়ার প্রেমে পড়েছিলাম
- ২ বছর আগে অনেক কষ্টে পেলাম সাদা-কোমর মুনিয়ার দেখা
- ২ বছর আগে হঠাৎ পেলাম নীলপরির দেখা
আরো পড়ুন