‘নীল শিসদামা’র কণ্ঠে বাঁশির সুর
শামীম আলী চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

লেখক ছবিটি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে তুলেছেন
পাখির সন্ধানে কয়েকদিন সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ছিলাম। সারাদিন বনে কাটিয়ে সন্ধ্যায় বন বিভাগের ডরমেটরিতে রাত কাটাতাম। সেদিন ভোর ৬টায় ঘুম ভেঙে গেল। টাওয়ারে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হওয়ার পর গাছের ডালে কালো রঙের একটি পাখি নজরে পড়লো। তখনও কুয়াশা কাটেনি।
পাখির পিঠের পাশে গাছের পাতা থাকায় মনে হলো দোয়েল জাতীয় পাখি। ছবি তোলার খুব একটা আগ্রহ হলো না। হঠাৎ পাখিটি উড়ে অন্য একটি ডালে বসলো। ঠোঁট হলুদ বর্ণের দেখে চমকে উঠলাম! পাখিটির ছবি তোলার জন্য কৌতূহল বেড়ে গেল। কারণ এমন পাখি আগে আমার নজরে পড়েনি। একদিকে নতুন পাখি, অন্যদিকে পর্যাপ্ত আলোর সংকট। ভালোভাবে ছবি তুলতে পারব কিনা বুঝতে পারছিলাম না। ওদিকে মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠেছে- ছবি তুলতেই হবে। শেষ পর্যন্ত ক্যামেরার কারিকুরি সম্পর্কে যতটা জানা ছিল সবগুলো কাজে লাগিয়ে অনেকগুলো ছবি তুললাম। নীল শিসদামার ছবি তুলতে পেরে খুব আনন্দ হয়েছিল সেদিন। এরপর ধীর পায়ে টাওয়ার অভিমুখে রওনা হলাম।
নীল শিসদামা ophonus গোত্রের ৩২-৩৬ সে.মি. দৈর্ঘ্যের আকার ভেদে ১৬২-১৭০ গ্রাম ওজনের উজ্জ্বল নীল পাখি। এরা সর্বভূক। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির নীল-কালো দেহে উজ্জ্বল রূপালী-নীল তিলের মতো ফোঁটা থাকে। কপাল, ডানার পাশে এবং লেজ উজ্জ্বল নীল। চোখ কালচে বাদামি। ঠোঁট হলদে-ধূসর। পা, পায়ের পাতা ও নখ কালো। তবে পায়ের তলা হলুদ। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ডানা ও লেজ নীল। বুকে ধূসর তিল বা ফোঁটা থাকলেও দেহে থাকে না।
নীল শিসদামা সাধারণত বন, বৃক্ষবহুল অঞ্চলে বিচরণ করে। শীতের সময় একা থাকে। পাহাড়ি জলধারার কাছে মাটিতে ঝরাপাতা উল্টে, নরম মাটি গর্ত করে ও অগভীর পানিতে ঠোঁকর মেরে এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে কেঁচো, শামুক, কাঁকড়া, ব্যাঙ, লার্ভা, পানির পোকা ও রসালো ফল। এরা সকালে ও শেষ বেলাতে বেশি কর্মচঞ্চল থাকে। যখন মাটিতে বসে তখন লেজ মেলে ধরে। ভয় পেলে তীক্ষ্ম স্বরে ডাকে। এরা বাঁশির সুরের মতো গান গায়।
এপ্রিল-আগস্ট মাসে প্রজননকালে ছেলেপাখি মেয়েপাখিকে আকর্ষণ করার জন্য বুক ফুলিয়ে লেজ মেলে ডানা প্রসারিত করে এলাকা রক্ষা করে। এরা জলধারার কাছে পাহাড়ে বা মাটির ফাটলে সবুজ শেওলার উপর ক্ষুদ্র মূল বিছিয়ে বাটির মতো বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়েপাখি ৩-৪টি ডিম পাড়ে।
নীল শিসদামা বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চীন, আফগানিস্তান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃত রয়েছে। নীল শিসদামা বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশ বণ্যপ্রণণী আইনে এই প্রজাতি সংরক্ষিত করা হয়নি।
বাংলা নাম: নীল শিসদামা
ইংরেজি নাম: Blue Whistling Thrush
বৈজ্ঞানিক নাম: ophonus caeruleus (Scolopi.1786)
হাসনাত/তারা
- ২ বছর আগে বন্য হাতির ধাওয়া খেয়ে পেলাম বুনো টুনির দেখা
- ২ বছর আগে পাখির নাম ‘রঙিলা দোয়েল’
- ২ বছর আগে বাচ্চা হারিয়ে মা দুধরাজ পাখির হাহাকার
- ২ বছর আগে পুকুর পাড়ে পেলাম ‘কালোবুক দামা’র দেখা
- ২ বছর আগে যেভাবে খুঁজে পেলাম ‘কালো বাজ’ পাখি
- ২ বছর আগে অনেক অপেক্ষার পর দেখা পেলাম নীল ফক্কির
- ২ বছর আগে সীমানা নির্ধারণ করে বাস করে জল মোরগ
- ২ বছর আগে হঠাৎ দেখি সুরেলা কণ্ঠের সাদা লেজ রবিন!
- ২ বছর আগে প্রজননকালে গান গায় ‘লালডানা কোকিল’
- ২ বছর আগে উড়ন্ত পোকা ধরায় পটু নীলগলা চুটকি
- ২ বছর আগে ডুপ্লেক্স বাসা বানায় ছোট নীলচটক পাখি
- ২ বছর আগে মহাবিপন্ন পাখি ‘বন বাচকো’
- ২ বছর আগে গৃহপালিত হাঁসের পূর্বপুরুষ নীলশির হাঁস
- ২ বছর আগে বিপদ দেখলেই শুয়ে পড়ে শাবাজ ট্রিটি
- ২ বছর আগে টুপি মাথায় ‘মৌলবি হাঁস’
- ২ বছর আগে সুরের পাখি সিঁদুরে-হলুদ মৌটুসী
- ২ বছর আগে দেখতে সবুজ বাঁশ ঘুঘু
- ২ বছর আগে বাইক্কা বিলের জলময়ূর
- ২ বছর আগে নগরে পাকড়া খঞ্জন
- ২ বছর আগে পাখির নাম হট্টিমা
- ২ বছর আগে লালচে কাঠঠোকরার লুকোচুরি
- ২ বছর আগে প্রথম দেখাতেই পাপিয়ার প্রেমে পড়েছিলাম
- ২ বছর আগে অনেক কষ্টে পেলাম সাদা-কোমর মুনিয়ার দেখা
- ২ বছর আগে হঠাৎ পেলাম নীলপরির দেখা
আরো পড়ুন