ঢাকা     শনিবার   ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২৩ ১৪৩১

হঠাৎ দেখি সুরেলা কণ্ঠের সাদা লেজ রবিন!

শামীম আলী চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১০, ৪ জুন ২০২১   আপডেট: ১২:২৮, ২৫ জুন ২০২১
হঠাৎ দেখি সুরেলা কণ্ঠের সাদা লেজ রবিন!

লেখক ছবিটি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে তুলেছেন

বার্ড ফটোগ্রাফারদের কাছে হবিগঞ্জ জেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান স্বর্গরাজ্য। আর এ কারণেই বারবার ছুটে যাই, মিশে যাই পাখিদের কলতানমূখর পরিবেশের সঙ্গে। সাতছড়ি বনে এক ঘণ্টার ট্রেইলের মাঝ পথে হাতের ডান দিকে বনের সরু রাস্তা ধরে কিছুটা পথ হাঁটলে একটি ছোট ডোবা দেখা যায়। ডোবাটিই গ্রীষ্মকালে নানা প্রজাতির দেশীয় ও পরিযায়ী পাখির কাছে পানির একমাত্র উৎস। ফলে সেখানে পাখিরা কখনো একা একা আবার কখনো জোড়া বেঁধে পানি পান ও গোসল করতে নামে।

অনেকে এই ডোবাটি ‘পূণ্যিপুকুর’ নামেও চেনেন। ২০১৭ সাল থেকে নিয়মিত এখানে পাখির ছবি তুলে আসছি। জায়গাটিতে ছোট প্রজাতির পরিযায়ী পাখির সংখ্যাই বেশি দেখা যায়। বিকাল ৫টার দিকে এদের আনাগোনা বেশি নজরে পড়ে। তখন আলোর স্বল্পতা থাকলেও বিভিন্ন প্রজাতি পাখির দেখা মেলে।

২০১৮ সালে পূন্যিপুকুরে নানা প্রজাতির পাখির ছবি তুলছিলাম। সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে কালো রঙের একটি পাখি উড়ে এসে ছোট একটি গাছের ডালে বসলো। দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল! আগে কখনো এই পাখি নজরে পড়েনি। একদিকে যেমন আলোর স্বল্পতা, অন্যদিকে নতুন পাখি দেখার সৌভাগ্য হলো। দুইয়ে মিলে চরম উত্তজেনা! ক্যামেরার আইএসও বাড়িয়ে অনবরত ক্লিক করলাম। বেশ কিছু ছবি তুললাম। হঠাৎ নজরে পড়লো পাখিটির লেজের পাশে সাদা রঙ। তখনই অনুমান করলাম নতুন একটি পাখি সংগ্রহে যোগ হলো। এতক্ষণ যে পাখিটির কথা বলছিলাম সেটি হলো সাদা লেজ রবিন।

আরো পড়ুন:

সাদা লেজ রবিন ১৬-১৮ সেমি দৈর্ঘ্যের ও ২৭-২৯ গ্রাম ওজনের Muscicapidae পরিবারের কালচে পোকা-শিকারী একটি ছোট পাখি। পুরুষ ও মেয়েপাখির চেহারায় ভিন্নতা রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষপাখির লেজের পাশে স্পষ্ট সাদা দাগ আছে। এ ছাড়া দেহ কালচে-নীল। কাপাল ও কাঁধ হালকা নীল রঙের। ঘাড়ে ছোট সাদা তিলা আছে। মেয়েপাখির পিঠের দিক জলপাই-বাদামি। দেহের নিচের অংশ বা পেটতল লালচে-বাদামি। কালো লেজের পাশে সাদা। উভয়ের চোখ বাদামি। ঠোঁট, পা ও পায়ের পাতা কালো।

সাদা লেজ রবিন সাধারণত আর্দ্রঘন পত্রবহুল বনের গাছের নিচে উৎপন্ন গুল্মলতা ও নদীর ধারে বাঁশবনে বিচরণ করে। এই প্রজাতির পাখি খুবই লাজুক স্বভাবের। মাটিতে বা মাটির কাছাকাছি ঘন উদ্ভিদে খাবার খুঁজে বেড়ায়। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকা ও রসালো ফল। সচরাচর এরা নিচু কণ্ঠে ডাকে। এদের কণ্ঠ খুব সুরেলা। মধুর সুরে গান করে। একা একা চলাফেরা করতে পছন্দ করে। মাঝে মাঝে জোড়া বেঁধে চলে। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। প্রজননকালে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ের আইলে ঘাসে বা পাথরে পাতা, শেওলা ও মূল দিয়ে বাটির মতো বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়েপাখিটি ৪-৫টি ডিম পাড়ে। নিজেরাই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোঁটায়। সংসারের যাবতীয় কাজ উভয়ে মিলে করে থাকে।

সাদা লেজ রবিন বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি। এরা মূলত ভারতের পাখি। সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে দেখা যায়। এ ছাড়াও ভুটান, নেপাল, চীন, তাইওয়ান, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের দেখা যায়। এরা বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এই প্রজাতির পাখি সংরক্ষিত।

 

হাসনাত/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়