হারিয়ে যাচ্ছে কলমি লতা ও মাইক ফুল
মোসলেম উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম
গাছগুলো দেখতে অনেকটা লতার মতো। আর ফুলগুলো একেবারেই মাইকের মতো। আজ থেকে দুই যুগ আগে গ্রামের দস্যি ছেলেমেয়েরা এই ফুল নিয়ে খেলতো, বিশেষ করে মেয়েরা কানে গুঁজে সেজে ঘুরে বেড়াতো। হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার অতিপরিচিত কলমি লতা ও তার ফুল। সেদিন সন্ধ্যায় চোখে পড়ল দিনাজপুরের হিলির সাতনি সড়কের পাশে সেই চিরচেনারূপে বেড়ে ওঠা কলমি লতা।
গ্রামগঞ্জ আর শহরের আনাচে-কানাচে জন্মাতো এই লতা ও ফুল। মানুষের চারপাশে জড়িয়ে থাকতো। বিভিন্ন মাচান, ফসল রক্ষার বেড়াসহ বাড়ির উঠান ঘেরার কাজে আগের দিনের মানুষ ব্যবহার করতো। জ্বালানি কাজেও প্রয়োজন ছিল অপরিসীম। এগাছ ছিল অমর, ডাল থেকে কুশি বের হতো। জন্ম নিতো একটি লতা থেকে একাধিক লতা।
কলমি লতার মাইক ফুল ছিল এক সময়ের সৌন্দর্যের প্রতীক। ছিল তার ব্যক্তিগত সুভাষ, যে সুভাষ ছড়িয়ে পড়তো চারপাশ। শিশু-কিশোররা খেলতো এই মাইক ফুল দিয়ে, আবার প্রিয় মানুষের চুলের খোঁপায় পরিয়ে দিতো কলমি লতার মাইক ফুল।
আধুনিক যুগে বিভিন্ন প্রজাতির সুগন্ধি ফুলের আবির্ভাবে মূল্যহীন হয়ে গেছে সেই মাইক ফুল। ভোর থেকে ফুটতে শুরু করে, আর তা ধরে রাখে দুপুর পর্যন্ত। নিজে ফোটে ও সৌরভ ছড়িয়ে দেয় সৌন্দর্য পিপাসুদের মাঝে।
কথা হয় সাতনি বাজারের ৮০ বছর বয়সী আফজাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন তো আর আগের মতো চোখেই পড়ে না কলমি লতা। আমাদের সময় প্রায় সব কাজেই এই লতার প্রয়োজন হতো। এখন তো ইট, পাথর, সিমেন্ট, বালু আর রডের ব্যবহার হচ্ছে। তখন আমরা কলমি লতা দিয়ে সব কাজ করতাম।’
স্থানীয় বাসিন্দা মনজেল হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলায় আমরা এই লতা দিয়ে ডাংগুলি খেলতাম। আবার তার মাইক ফুল দিয়ে ছেলেমেয়েরা মিলে এক সঙ্গে খেলাধুলা করতাম।’
রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া বৃদ্ধা মরিয়ম বেগমের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হামার তো জ্বাল দেওয়াসহ ব্যাবাক কাজই কলমি লতা দিয়ে করে আইছু। ছোল-পোলক হারা এই কলমি লতা ভাঙে শাসন করেছু।’
জালালপুর গ্রামের কৃষক আকরাম হোসেন বলেন, ‘অ্যালাতো এখন দেখাই যায় না। হারা গরিব মানুষ, ইটা দিয়ে তো আর বাড়ির উঠান ঘিড়বা পারতু না। তাই কলমি লতা দিয়ে কাজ করছুনু। অ্যালার কদর তো আর কেউ করে না।’
দিনাজপুর/মাহি
আরো পড়ুন