ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মাইকেল মধুসূদনের ১৪৯তম প্রয়াণ দিবস আজ

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ২৯ জুন ২০২১   আপডেট: ১১:৪৮, ২৯ জুন ২০২১
মাইকেল মধুসূদনের ১৪৯তম প্রয়াণ দিবস আজ

যশোরে নিজের সমাধি লিপিতে তিনি নিজেই লিখে গেছেন তার পরিচয়- ‘দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব/ বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল! এ সমাধি স্থলে/ (জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি/বিরাম) মহীর পদে মহা নিদ্রাবৃত/দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন!’

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত’র ১৪৯তম প্রয়াণ দিবস আজ। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তার জন্ম যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি।

বাংলা সাহিত্যে তার সৃষ্টি অসাধারণ ও অতুলনীয়। তিনি বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। মধুসূদন ছিলেন আধুনিক বাংলা কাব্য সাহিত্যের জনক। সনাতন কাব্যধারাকে পাল্টিয়ে নতুন আঙ্গিকে বাংলা সাহিত্যে অমৃতধারা সৃষ্টি তার বিরল দৃষ্টান্ত।

বাবা রাজনারায়ণ দত্ত কলকাতায় ওকালতি করতেন। কৈশোরে কলকাতায় হিন্দু কলেজের সংস্কারমুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠেছিলেন মধুসূদন। হিন্দু কলেজের অধ্যক্ষ ডিরোজিওর সংস্কারমুক্ত মুক্তিবাদের দীক্ষা মধুসূদনকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছিল। এই কলেজে তিনি শেক্সপিয়র, মিল্টন, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, বায়রন ও শেলির লেখার সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। নিজ ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি বিশ্বসাহিত্য বিশেষ করে ইংরেজি সাহিত্যকে গ্রহণ করলেও প্রাচীন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে আত্মস্থ করেছিলেন নিবিড়ভাবে।

‘শর্মিষ্ঠা’ নাটকটি নাট্যকার মধুসূদনের এ প্রয়াসের প্রথম ফসল। শর্মিষ্ঠা নাটকের কাহিনী তিনি গ্রহণ করেছেন মহাভারতের আদিপর্ব থেকে। এ নাটকে আধুনিক চরিত্র রূপায়ণে তার সুকৌশলী মনোভাব তাকে সার্থক নাট্যকার হিসেবে এনে দিয়েছে দুর্লভ খ্যাতি ও কৃতিত্ব।

তিনি পদ্মাবতী (১৮৬০), একেই কি বলে সভ্যতা (১৮৬০), বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ (১৮৬০), কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১) এবং মায়া কাননের (১৮৭৪ মৃত্যুপরবর্তী প্রকাশিত) মতো অসাধারণ নাটক ও প্রহসনগুলো রচনা করেছিলেন।

মেঘনাদবধ কাব্য রামায়ণের পৌরাণিক কাহিনী থেকে সংগৃহীত হলেও প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সাহিত্যের ভাবনার সংমিশ্রণে মধুসূদনের এ এক অপরূপ সৃষ্টি। মেঘনাদবধ মহাকাব্যের অসাধারণ সাফল্যের মাধ্যমেই মধুসূদন কবি হিসেবে লাভ করেছেন ব্যাপক যশ ও খ্যাতি।

কবি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে শ্রী মধুসূদন থেকে মাইকেল মধুসূদন হয়েছিলেন। কবি থেকে হয়েছিলেন ব্যারিস্টার কিন্তু হতে পারেননি সুমহান ঐতিহ্যসমৃদ্ধ বাঙালি থেকে পররাজ্যগ্রাসী ইংরেজ। বাঙালিত্ব ছিল মধুসূদনের আমৃত্যু অহঙ্কার। শুধু তাই নয়, নিজেকে নিয়ে তার সেই সরস পরিহাসও সবিশেষ উল্লেখের অপেক্ষা রাখে ‘আমি শুধু বাঙালি নহি, আমি বাঙাল, আমার বাটি যশোহর।’

মাইকেলের ব্যক্তিগত জীবন ছিল নাটকীয় এবং বেদনাঘন। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে কলকাতায় কপর্দকশূন্য করুণ অবস্থায় মৃত্যু হয় এই মহাকবির। মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়।

ঢাকা/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়