ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে’

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০০, ২২ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১৩:৪১, ২২ অক্টোবর ২০২১
‘আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে’

জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু দুর্ঘটনা না আত্মহত্যা এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই কবির মৃত্যুকে আত্মহত্যা মানতে রাজি নন। প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যে, জীবনানন্দ দাশ যখন ট্রাম লাইন পার হচ্ছিলেন তখন তার হাতে ডাব ছিল। একজন মানুষ হাতে ডাব নিয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন না।

জীবনানন্দ দাশের প্রয়াণের ৬৭তম বার্ষিকী আজ। ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর তিনি কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে কবি কলকাতার বালিগঞ্জে ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

‘আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে-- এই বাংলায়/হয়তো মানুষ নয়-- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে,/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে / কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায়; / হয়তো বা হাঁস হ`ব--কিশোরীর--ঘুঙুর রহিবে লাল পায়, / সারা দিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধ ভরা জলে ভেসে ভেসে; / আবার আসিব আমি বাংলায় নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে।’

কবি জীবনানন্দ দাশ সশরীরে না এলেও কবিতার মধ্যদিয়ে তিনি আমাদের মাঝে এই বাংলায় ফিরে আসেন বারবার।

জীবনানন্দ দাশের মা কুসুমকুমারী দাশও ছিলেন প্রতিভবান। তাঁর সুপরিচিত কবিতা ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়ো হবে’ যা আজও সমাদৃত। জীবনানন্দের পিতা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত ছিলেন বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের শিক্ষক এবং ব্রাহ্মসমাজের মুখপত্র ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।

জীবনানন্দ দাশের জন্ম ১৮৯৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালে। ১৯১৯ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বি.এ. পাশ করেন। ওই বছরেই ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় তার প্রথম কবিতা ছাপা হয়। কবিতাটির নাম ছিল বর্ষ আবাহন। ১৯২৭ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ প্রকাশিত হয়।

১৯৩০ সালের ৯ মে তারিখে তিনি লাবণ্য দেবীর সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ে হয়েছিলো ঢাকায়। ১৯৩৫ সালে জীবনানন্দ তার পুরনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রজমোহন কলেজে ফিরে যান, যা তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। তিনি সেখানকার ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।

১৯৪৭ এর দেশভাগ পূর্ববর্তী সময়টিতে বাংলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিভৎসরূপে দেখা দেয়। দেশবিভাগের কিছু আগে তিনি বি.এম. কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে কলকাতায় চলে যান। পরে তিনি আর পূর্ববঙ্গে ফিরে যাননি।

১৯৫২ সালে তাঁর জনপ্রিয় কবিতার বই বনলতা সেন সিগনেট প্রেস কর্তৃক পরিবর্ধিত আকারে প্রকাশিত হয়। বইটি পাঠকানুকূল্য লাভ করে এবং নিখিল বঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলন-কর্তৃক ঘোষিত ‘রবীন্দ্র-স্মৃতি পুরস্কার’ জয় করে। ১৯৫৪ সালের মে মাসে প্রকাশিত হয় জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা। বইটি ১৯৫৫ সালে ভারত সরকারের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করে।

জীবদ্দশায় তাঁর ৭টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। জীবদ্দশায় তার একমাত্র পরিচয় ছিল কবি। মৃত্যুর পর তাঁর বিপুল পাণ্ডুলিপিরাশি উদ্ঘাটিত হয়েছে। তার মধ্যে উপন্যাসের সংখ্যা ১৪ এবং গল্পের সংখ্যা শতাধিক।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দের কবিতাকে বলেছেন ‘চিত্ররূপময়’। তিনি রবীন্দ্র পরবর্তী যুগের আধুনিক কবি। যার কবিতায় রয়েছে শুধুই মুগ্ধতা।

ঢাকা/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়