ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সূর্য ওঠার আগে খেতে হয় মানিক চানের পোলাও

মুজাহিদ বিল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৩, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৭:২৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
সূর্য ওঠার আগে খেতে হয় মানিক চানের পোলাও

পুরো রাজধানী যখন গভীর ঘুমে নীরব, নিস্তব্ধ তখন মিডফোর্ডের দিগুবাবু লেনে দুপুরের ব্যস্ততা। গলিতে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে মানুষের কোলাহল। কৌতূহলে এগিয়ে যেতেই দেখা গেল মানুষের জটলা। আরেকটু ঘনিষ্ঠ হতেই জানা গেল- প্রত্যেকেই পোলাও খেতে এসেছেন! 

অবাক হচ্ছেন? এই মধ্যরাতে পোলাও! কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এটিই হলো সেই মানিক চানের পোলাও। পুরনো ঢাকায় ‘মানিক চান’ একনামে বিখ্যাত। খাবারের জন্য চারশ বছর থেকে বিখ্যাত পুরান ঢাকা। মোগল আমলে এ দেশের খাদ্যসংস্কৃতিতে যোগ হয় নতুন মাত্রা। তারই স্বাদ মেটাতে রসনাপ্রিয়দের জন্য সাধারণ খাবারের দোকান খোলা থাকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। কিন্তু মানিক চান ব্যতিক্রম। মানিক চানের পোলাও খেতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে মধ্যরাতে। সকালে সূর্য ওঠার আগেই বিক্রি শেষ। 

বিস্মিত হচ্ছেন? তবে বলি, দিগুবাবু লেনে অস্থায়ীভাবে খাবার বিক্রি করেন মানিক চান। নেই বসার মতো দোকান কিংবা অন্যান্য সুবিধা। তবুও এই খাবারের চাহিদা আকাশচুম্বী এবং এতোটাই যে, মানিক চানের পোলাও খেতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে রাত ৩টার মধ্যে। এ সময় থেকে দেওয়া শুরু হয় খাবার নেওয়ার অগ্রীম টোকেন। সেই টোকেনের জন্য হয় লম্বা লাইন। টোকেন শেষ হয়ে গেলে খাবার না-খেয়েই সেদিনের মতো  ফিরতে হবে। 

প্রতিদিন ১২০-১৮০ জনের খাবার প্রস্তুত করেন মানিক চান। একেক দিন একেক আইটেম। শনিবার পাওয়া যায় খাসির ঝোল পোলাও, রোববার খাসি, আলুর ঝোল ও পোলাও, সোমবার মোরগ পোলাও, মঙ্গলবার খাসি, বুটের ডাল, বুধবার খাসির বিরিয়ানি, বৃহস্পতিবার মুরগির ভূনা খিচুড়ি। দাম ১৭০ টাকা। সঙ্গে লেবু মিললেও সালাদ পাওয়া যাবে না। 

মানিক চানের পোলাওয়ের বিক্রেতা মানিক চান স্বয়ং। ঢাকায় যারা শুরুর দিকে বিরিয়ানির ব্যবসা শুরু করেন তাদের মধ্যে মানিক চানের বাবা অন্যতম। প্রায় ৭০ বছর আগে শুরু হয় তাদের এই পারিবারিক ব্যবসা। এখন যা সামলাচ্ছেন মানিক চান নিজে। এক সময় সকাল ১০টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি হলেও বর্তমানে ভোরের আগেই অনেক সময় খাবার শেষ হয়ে যায়। 

অগ্রীম খাবারের জন্য বিকাশে সেন্ড মানি করেও বুকিং দিতে পারবেন, তবে সেই খাবার নেওয়ার জন্য আপনাকে টোকেন সংগ্রহ করতে হবে নির্ধারিত সময়ে। 

মানিক চানের পোলাও খেতে আসা শিহাব জানালেন, ফুড ব্যাংকে রিভিউ দেখে তিনি খেতে এসেছেন। এসে অনেকটাই হতাশ। কারণ রাতের ঘুম উপেক্ষা করে এসে দেখেন পরিবেশন ব্যবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তবে পোলাও তার চমৎকার লেগেছে বলে জানালেন। মাংস নিয়ে আপত্তির কথাও বললেন তিনি। 

মিরপুর থেকে বন্ধুদের নিয়ে এসেছেন এমন একদলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, খাবারের মান নিয়ে তারা হতাশ না-হলেও এভাবে রাত জেগে খাওয়ার ব্যাপারটি দু’একজনের ভালো লাগছে না। তাহলে এসেছেন কেন? প্রশ্ন রাখতেই বন্ধুদের মধ্যে একজন বললেন, ‘অনেক নাম শুনেছি। তাই এসেছি।’

কথা হলো মানিক চানের সঙ্গে। বললেন, ‘আমরা আমাদের খাবারের মান ধরে রেখেছি- তাই এত চাহিদা। সকালের আগে না আসলে খাবার পাবেন না। আমাদের পোলাওয়ের ঘ্রাণ এবং মাংস খুব সুস্বাদু- অন্য কোথাও পাবেন না।’

/তারা/ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়