ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পর্দার ‘ভাত দে’ যখন জীবনের চিত্রনাট্য!

রায়হান হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪১, ২৮ নভেম্বর ২০২২  
পর্দার ‘ভাত দে’ যখন জীবনের চিত্রনাট্য!

১৯৮৪ সালের মুক্তি পাওয়া ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত আমজাদ হোসেনের কালজয়ী সিনেমা ‘ভাত দে’ কে না দেখেছেন? বাংলা চলচ্চিত্রে জীবন-ঘনিষ্ঠ এমন সিনেমা খুব কমই নির্মিত হয়েছে। ছবিটি যারা দেখেছেন, অজান্তেই অঝোরে চোখের পানি ছেড়েছেন। পুরো সিনেমাতে আশির দশকে গ্রামাঞ্চলের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। 

সিনেমায় জরি চরিত্রে অভিনয় করা শাবানা মানুষের সামনে থেকে দৌড়ে গিয়ে ছিনিয়ে আনছেন ভাতের থালা। শাবানার ‘ক্ষুধার উন্মাদনা’ পুরো সিনেমার বলিষ্ঠ চরিত্র। বিংশ শতাব্দীতেও সমাজের এক শ্রেণী এখনও দুমুঠো ভাতের জন্য ‘ভাত দে’ সিনেমার জরির মতই সংগ্রামে আছেন। 

এমনই একজন রফিক মিয়া। পেশায় রিকশাচালক। রাজধানীর হাজারীবাগের একটি বস্তিতে থাকেন। সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছেন ১৫ বছর হয়ে গেলো। গ্রামে বাবার যে সম্পত্তি ছিল, সব নদী খেয়ে ফেলেছে। আট বার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছেন।

টিসিবির ট্রাকের সামনে চাল নেওয়ার সময় রফিক মিয়ার সঙ্গে দেখা হয় এই প্রতিবেদকের। জানান, চার সন্তান ও মা-কে নিয়ে ৭ জনের সংসার তার। সারাদিন রিকশা চালিয়ে মহাজনের টাকা দিয়ে ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। রফিক মিয়া বলেন, ‘এখন মানুষ রিকশায় কম ওঠে। কারণ মানুষের হাতে আগের মত টাকা নেই। ফলে এখন আমাদের ভাড়াও কমে গিয়েছে। এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে আমাদের এখন দুমুঠো ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকাই বড় যুদ্ধ।’

কথা বলার সময়ই রফিক মিয়ার চোখের কোনে পানি জমে। ভারী হয়ে আসে স্বর। গলা ধরে আসা কণ্ঠে বলেন, ‘পরিবারের ৭ জনের তিন বেলা খেতে হলে চার কেজি চাল লাগে। আমি রিকশা চালিয়ে যা পাই, সেটা দিয়ে দোকানে চাল কিনতে পারি না। তাহলে অন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য কীভাবে কিনবো? তাই ভরসা টিসিবির গাড়ি। এক দিন যদি এই গাড়ি না আসে, তাহলে সেদিন আমার ঘরে চুলায় আগুন দেওয়ার মত উপায় থাকে না।’

‘বাধ্য হয়ে ছোট ছোট ছেলেদের কাজে দিয়েছি। আমাদের প্রায় প্রতিদিনের খাবার-ই আলু ভর্তা আর ডাল। এক জায়গায় টিসিবির গাড়ির চাল না পেলে অন্যখানে খুঁজি। মাঝে মাঝে ভোরে কাওরান বাজার যাই। সেখানে গাড়ির নিচে পড়ে থাকা সবজি কুড়িয়ে বাসায় নিয়ে আসি।’ 

সমাজের একটি শ্রেণী আমিষ থেকে দিনকে দিন বঞ্চিত হচ্ছেন, সেটাও ফুটে ওঠে রফিক মিয়ার গল্পে। তিনি বলেন, ‘আমাদেরও ভালো খেতে-পরতে মনে চাই। মুরগির দোকানে গিয়ে দাম শুনে চলে আসি। সন্তানদের ঈদে ভালো পোশাক কিনে দিতে পারি না। সামর্থ্য নেই। মাঝেমধ্যে মনে হয়, এই পৃথিবীতে আমাদের বাঁচার অধিকার নেই।’ 

তবে রফিক মিয়া সরকারকেও ধন্যবাদ জানান। বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের আগে আমাদের এত সমস্যা ছিল না। তখন অত্যন্ত তিন বেলা খেতে পারতাম। এখন আমাদের কোনও অসুখ হলে সুস্থতার জন্য যে ওষুধ খাব, সেই অবস্থা নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্নয়ের মানুষেরা ভালো নেই। তবে সরকারকে ধন্যবাদ, আমাদের কথা চিন্তা করে টিসিবির ট্রাক সেল চালু রেখেছে। এটার জন্য কিছুটা হলেও খেতে পারছি।’

ঢাকা/এনএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়