ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রোজার ফাজায়েল ও মাসায়েল

প্রকাশিত: ১১:৩১, ২৬ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ১১:৩২, ২৬ মার্চ ২০২৩
রোজার ফাজায়েল ও মাসায়েল

‘সওম’ শব্দটি আরবি। এর ফারসি প্রতিশব্দ রোজা। সওমের আভিধানিক অর্থ ‘বিরত থাকা’। শরিয়তের পরিভাষায়, মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টির অর্জনের মানসে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকাকে সওম বা রোজা বলে। 

কাম, ক্রোধ, মোহ, রিপু দমন, আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য্য ও খোদাভীতি অর্জনের নিমিত্তে রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। রোজা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম একটি এবং মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভের এক বিশেষ মাধ্যম। মহান রাব্বুল আলামিন রোজা পালনকারীদের অধিক ভালবাসেন; তাদের জন্য সন্তুষ্টির নিদর্শনস্বরূপ বিশেষ সুসংবাদ ও পুরস্কারের ঘোষণা করেছেন।

আরো পড়ুন:

প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, রোজা শুধু আমার জন্য, অতএব আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো। (সহীহ বুখারী)

বিখ্যাত হাদীসগ্রন্থ সহীহ বুখারী ও মুসলিমে উল্লেখ আছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা রাখবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

প্রিয়নবী (সা.) আরো ইরশাদ করেন, জান্নাতের আটটি দরজা আছে, তার মধ্যে একটির নাম হচ্ছে ‘রাইয়ান’। কেয়ামতের দিন ওই দরজা দিয়ে শুধু রোজাদাররা প্রবেশ করবে। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজাদাররা কোথায়? অতঃপর তারা (রোজাদাররা) ওই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করার পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে রোজাদার ব্যতীত অন্য কেউ সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম) অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, তাকে জান্নাতের বিশেষ পানীয় পান করানো হবে, ফলে সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি ও নাসায়ী)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না (অর্থাৎ কবুল করা হয়)। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। ২. রোজাদার ব্যক্তির ইফতারের সময়ের দোয়া। ৩. মজলুমের দোয়া। তাদের দোয়া মেঘমালার উপরে উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। তখন আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, আমার সম্মানের কসম! বিলম্বে হলেও অবশ্যই আমি তোমাকে সাহায্য করবো। (মুসনাদে আহমদ, তিরামিজি ও ইবনে মাজাহ)

প্রিয় পাঠক! রোজার পূর্ণ সওয়াব অর্জন এবং মহান প্রভুর সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য পেতে হলে শুধু পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকা যথেষ্ট নয়। বরং মিথ্যা, প্রতারণা, সুদ, ঘুষ, ঝগড়া-বিবাদসহ যাবতীয় অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং চোখ, কান, জিহ্বা ও হাত-পাসহ সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুনাহ মুক্ত রাখতে হবে। হাদীস শাস্ত্রের নির্ভরযোগ্যগ্রন্থ সহীহ মুসলিমে উল্লেখ আছে, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোজা রাখবে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও ঝগড়া বিবাদ থেকে বিরত থাকে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার প্রতি মারমুখী হয়, তবে সে যেন বলে ‘আমি রোজাদার’।

প্রিয়নবী (সা.) আরো বলেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা, অশ্লীল কর্মকাণ্ড ও জাহেলি আচরণ পরিত্যাগ করতে পারে না, তার পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন নেই। (সহীহ বুখারী) বিনা ওজরে রমজানের রোজা ভঙ্গ করা কবিরাহ গুনাহ এবং এর পরিণতি জাহান্নাম। রমজানুল মোবারকের একটি রোজা ভঙ্গ করে তার বিনিময়ে সারাজীবন রোজা রাখলেও ক্ষতিপূরণ আদায় হবে না। হযরত আব্দুল্লাহ ইবরে মাসউদ (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি অসুস্থতা ও সফর ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানের একটি রোজা ভঙ্গ করে, সে আজীবন রোজা রাখলেও ঐ রোজার ক্ষতিপূরণ আদায় হবে না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, সহীহ বুখারী)

পবিত্র রমজানুল মোবারকের রোজা পালনের সুবিধার্থে কিছু জরুরি ও আধুনিক চিকিৎসা সংক্রান্ত মাসআলা আপনাদের খেদমতে উপস্থাপন করছি:
১. রোজা অবস্থায় মুখে কোনো ঔষধ ব্যবহার করে তা গিলে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যাবে। যদিও তা কম হয়।
২. সালবুটামল বা ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তবে রোগী যদি অতি অসুস্থ হয়ে পড়ে; সে ক্ষেত্রে ইনহেলার ব্যবহারের মাধ্যমে রোজা ভাঙ্গতে পারবে এবং পরাবর্তিতে রোজার কাজা করতে হবে। তবে কাফ্ফারা লাগবে না।
৩. রোজা অবস্থায় এন্ডোস্কপি করালে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে কোনো নল বা পাইপের মাধ্যমে পেটের ভেতর ঔষধ প্রবেশ করালে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
৪. নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহার করে গিলে না ফেললে রোজা ভঙ্গ হবে না।
৫. কানে ড্রপ, ঔষধ, পানি বা তেল ইত্যাদি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হবে না।
৬. চোখে ড্রপ বা মলম ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে না। এটা হাদীস দ্বারা প্রমানিত; যদিও তার স্বাদ গলায় উপলব্ধি হয়।
৭. নাকে অক্সিজেন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
৮. নাকে ড্রপ বা পানি দিয়ে ভেতরে টেনে নিলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
৯. রোজা অবস্থায় রক্ত দিলে বা নিলে কোনো অবস্থাতেই রোজা ভঙ্গ হবে না।
১০. এনজিওগ্রাম করলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
১১. ইনসুলিন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
১২. ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না। 
১৩. রগে স্যালাইন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
১৪. সাপেজিটরি-ভোল্টালিন মলদ্বারে প্রবেশ করালে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
১৫. যোনিদ্বার বা প্রস্রাবের রাস্তায় ঔষধ প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হবে না।
১৬. বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের টিকা নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না। 

লেখক: মুফাসসিরে কুরআন ও ইসলামী গবেষক
    
 

তারা//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়