ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাতের ভূমিকা এবং ইসলামের বিধান

প্রকাশিত: ১৩:০৮, ৩১ মার্চ ২০২৩  
দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাতের ভূমিকা এবং ইসলামের বিধান

ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম একটি জাকাত। শরীয়তের দৃষ্টিকোণে যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদ তথা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর সমমূল্যের সম্পদ বা সঞ্চয়ের মালিক হন এবং তা এক বছর তার নিকট সঞ্চিত থাকে, তাহলে তার ওপর জাকাত আদায় করা ফরজ। 

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের প্রায় ৩২ জায়গায় জাকাত আদায়ের ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন। ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তি জাকাত। ইসলাম ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে জাকাত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম জাতিকে এক ভারসম্যমূলক অর্থনীতি উপহার দিয়েছেন। দারিদ্র বিমোচন ও ধনী-গরিবের মাঝে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে জাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। 

বছরের যে কোনো দিন জাকাত আদায় করা যায়। তবে অধিক সাওয়াব লাভের আশায় অধিকাংশ মুসলিম রমজান মাসে জাকাত প্রদান করেন। যারা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও জাকাত আদায় করেন না, মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারী প্রদান করেছেন।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো ও জাকাত আদায় করো এবং তোমরা নিজের জন্য যে নেকী অগ্রিম পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু করো, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তা প্রত্যক্ষ করেন। (সূরা বাকারা, আয়াত: ১১০)

মহান আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে আরো ইরশাদ করেন, আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না (জাকাত আদায় করে না), আপনি তাদের কঠোর আজাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সেদিন তা (জমাকৃত সম্পদ) জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশ দগ্ধ করা হবে, (সেদিন বলা হবে) এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং যা জমা করেছিলে এখন তা আস্বাদন করো। (সূরা তাওবাহ, আয়াত: ৩৪-৩৫)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। ১. এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। ২. নামজ কায়েম করা। ৩. জাকাত আদায় করা। ৪. হজ্জ করা। ৫. রমজান মাসে সিয়াম পালন করা। (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৮)

প্রিয় পাঠক! পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় ধনী-দরিদ্রের মাঝে বিরাট বৈষম্য দেখা যায়। পুঁজিপতিরা সমাজের সিংহ ভাগ মানুষকে শোষণ করে বিরাট সম্পদের মালিক হয়। অপর দিকে সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর লোকেরা বঞ্চিত ও সর্বহারা হয়। অথচ ইসলাম ধনীদের সম্পদে বঞ্চিতদের অধিকার প্রদান করেছে এবং জাকাত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধনীদের সম্পদ গরিবদের মাঝে সুষ্ঠু বন্টনের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে।

কিন্তু অতি দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো, সমাজের খুব কমসংখ্যক মানুষই সঠিকভাবে জাকাত প্রদান করে। অনেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি জাকাত আদায়ের ব্যাপারে বড়ই উদাসিন, আবার অনেকে জাকাত আদায় করলেও সমুদয় সম্পদ হিসাব করে সঠিকভাবে জাকাত প্রদান করেন না। যদি আমাদের সমাজের বিত্তশালী ও সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা সঠিক পন্থায় ও সুপরিকল্পিতভাবে জাকাত প্রদান করেন, তাহলে এ দেশের বিরাট বঞ্চিত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠি দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে এবং অদূর ভবিষ্যতে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।

লেখক: মুফাসসিরে কুরআন ও ইসলামী গবেষক

শাহেদ//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়