মাগফিরাতের শুরুতে নিজেকে ক্ষমার জন্য প্রস্তুত করুন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রমজান মাসের প্রথম দশদিন হলো রহমতের; দ্বিতীয় দশদিন হলো মাগফিরাতের; আর শেষ দশ বা নয় দিন হলো নাজাতের। (বায়হাকি শরিফ)
প্রসিদ্ধ এই হাদিসের বরাতে রমজানের ২য় দশককে আমরা মাগফিরাতের দশক হিসেবেই জানি। আমরা মাগফিরাতের দশকে প্রবেশ করেছি। এই দশক আমাদের জন্য আনন্দের। একইসঙ্গে আশঙ্কারও বটে। আমরা যদি এই দশকে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা অর্জন করতে পারি তাহলে আমরা সফল কাম হবো। আর যদি কোনো কারণে ক্ষমা অর্জনে ব্যর্থ হই তাহলে আমাদের মতো দুর্ভাগা আর কেউ হবে না।
হজরত কাব বিন আজরাহ (রা.) বলেন, একদা রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত সাহাবিদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা মিম্বরের কাছাকাছি হয়ে বসো। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) সবাই কাছাকাছি হয়ে বসলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলেন এবং বললেন ‘আমিন’। অতঃপর দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন এবং বললেন ‘আমিন’। একইভাবে তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখেও তিনি বললেন ‘আমিন’।
আলোচনা শেষে মিম্বর থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেমে আসলে কৌতূহলী হয়ে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনাকে তো আগে কখনো এমন করতে দেখিনি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যখন প্রথম সিঁড়িতে পা রাখি তখন জিবরাইল আলাইহিস সালাম উপস্থিত হয়ে বললেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েছে কিন্তু নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারেনি সে ধ্বংস হোক। তখন আমি বললাম ‘আমিন’।
অতঃপর যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখি, তখন জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, যার নিকট আপনার নাম পেশ করা হয়েছে কিন্তু সে আপনার প্রতি দরূদ পড়েনি সে ধ্বংস হোক। তখনও আমি বললাম ‘আমিন’।
সর্বশেষ যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখি, তখন জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা মাতার কাউকে তাদের বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছে, কিন্তু তাদের খেদমত, সেবা-যত্ন করে জান্নাতের মালিক হতে পারেনি সেও ধ্বংস হোক। তখনও আমি বললাম ‘আমিন’। (বায়হাকী: ১৫৭২)
অতএব মাগফিরাতের এই দশককে আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। যে কোনো মূল্যে আমাদের ক্ষমা অর্জন করতেই হবে। সেজন্য এই দশকের শুরুতেই মাগফিরাত অর্জনের প্রস্তুতি হিসেবে নিজের গুনাহের কথা স্মরণ করে সেগুলো থেকে ফিরে আসার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। কারণ মাগফিরাত প্রাপ্তির প্রধান শর্তই হলো, পূর্বের সব পাপাচার থেকে তওবা করা। তওবা করার মানে হলো, আগে যেসব গুনাহ করেছি তা আর করবো না মর্মে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়া, প্রতিজ্ঞা করা, অনুতপ্ত হওয়া এবং আল্লাহর কাছে বিনীত হয়ে ক্ষমা চাওয়া।
আমাদের জীবনে আমরা বহুমাত্রিক গুনাহ করি। অথচ যখন মোনাজাতে হাত তুলি তখন গড়ে সব গুনাহ থেকে ক্ষমা চাই। এবং মোনাজাত শেষ করে আবারো একই ধরণের গুনাহে লিপ্ত হই। ফলে গুনাহ মাফ হয় বলে প্রতিয়মান হয় না।
আল্লাহ তায়ালা যেহেতু আমাদের আরেকটি রমজান দিয়েছেন এবং আমরা রোজা পেয়েও ক্ষমা না পাওয়ার পরিণতি সম্পর্কে জানি সেজন্য এই রমজানে আমাদের গুনাহ মাফ করানোকেই প্রথম অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর গুনাহ মাফের জন্য কৃত পাপ থেকে সরে আসা বাধ্যতামূলক সেজন্য মাগফিরাতের এই দশকের শুরুতেই নিজের গুনাহের একটি তালিকা করতে পারি।
এখানে কথা হলো, আমাদের গুনাহের পরিমান এতো বেশি যে আমরা তার পরিমান হিসাব করতে পারবো না। তবে আমরা গুনাহের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে পারবো। সেই ক্ষেত্রগুলোর তালিকা করে সেগুলো থেকে কীভাবে সরে আসবো তার পরিকল্পনা করতে হবে।
যেমন ব্যক্তি জীবনে মিথ্যা বলা, বেপর্দা হওয়া, সুন্নাহ সম্মত জীবন যাপন না-করা ইত্যাদি গুনাহ থাকতে পারে। এগুলো থেকে সরে আসার জন্য পরিকল্পনা জরুরি। বিশেষ করে পর্দা করার মতো পরিবেশ তৈরি করা সহজসাধ্য কাজ নয়। আবার কারো জীবনে অর্থ উপার্জন করার মাধ্যম হালাল নাও থাকতে পারে। তার জন্য হালাল উপার্জনের পথে যাওয়া মুখের কথা না। সেজন্য প্রস্তুতি দরকার।
এই কারণেই বলা যে, আমাদের জীবনের গুনাহের খাতগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো থেকে ফিরে আসার পরিকল্পনা করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে।
আসুন! মাগফিরাতের এই সূচনালগ্নে নিজেদের মাগফিরাতের উপযোগী করে নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুন।
লেখক : ফেলো, সেন্টার ফর স্যোশাল থট
শাহেদ//