ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

হালাল রুজি মাগফিরাতের পূর্বশর্ত

মাওলানা শেখ ফজলুল করীম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ৬ এপ্রিল ২০২৩   আপডেট: ১৬:২৩, ৬ এপ্রিল ২০২৩
হালাল রুজি মাগফিরাতের পূর্বশর্ত

মাগফিরাতের দশকের আজ চতুর্থ দিন। ক্ষমার মহাসুযোগ দ্রুত চলে যাচ্ছে। এই সুযোগ নিতে হলে ক্ষমাপ্রাপ্তির পূর্বশর্তগুলো পূরণ করতে হবে।  

এ মর্মে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন। তিনি মুমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসুলদেরকে।’

আরো পড়ুন:

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী থেকে আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদের রুজি হিসেবে দান করেছি।’

অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলি-ধুসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছে- হে আমার প্রভু! হে আমার প্রভু! অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে?’ (সহি মুসলিম, হাদিস নং- ১০১৫)

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে: ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একদিন এ আয়াতটি তেলাওয়াত করা হলো- ‘হে মানবমণ্ডলী! পৃথিরীর হালাল ও পবিত্র বস্তুসামগ্রী ভক্ষণ কর।’ তখন সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যেন আমার দু’আ কবুল হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সা‘দ, তোমার পানাহারকে হালাল কর, তবে তোমার দু’আ কবুল হবে।’ (ইমাম তাবারানী, মু‘জামুল আওসাত, খ. ৬, পৃ. ৩১০)

এসব বর্ণনা থেকে ষ্পষ্ট যে, কারো আয়-উপার্জন যদি হারাম থাকে তাহলে তার জন্য ক্ষমা পাওয়ার সম্ভবনা নাই বললেই চলে।

সেজন্য আজকের এই দিনে আপনি আপনার আয়-উপার্জন বিশ্লেষণ করে দেখুন। যারা চাকরি করেন, তাদের আয়ের মধ্যে ঘুষ, অনিয়ম আছে কিনা দেখতে হবে। এখন ঘুষ অনেক সহজবোধ্য হয়ে গেছে। ‘স্পিডমানি, খরচ, খুশি করা, চা-পানির খরচ, হাদিয়া’ ইত্যাদি নামে অভিহিত করে ঘুষকে হালকা করে দেওয়া হয়েছে। অথচ সবগুলোই অপরাধ। আপনি অফিসে যে কাজ করার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন সেই কাজ করার জন্য অতিরিক্ত কোনো টাকা বা সুবিধা দাবি করাই ঘুষ- যা সম্পূর্ণ হারাম।

এমনিভাবে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, তাদের ক্ষেত্রে হালাল উপার্জন আরো জটিল। ব্যবসার পুঁজি সংগ্রহ করতে গিয়ে সুদের সাথে জড়িত হয়ে যাওয়া, পণ্যের মান নিয়ে মিথ্যা বলা, মিথ্যা বলে বিজ্ঞাপন দেওয়া, ওজনে কম দেওয়া, ভালো মালের মধ্যে খারাপ মাল মিশিয়ে দেওয়া, অতিরিক্ত দাম রাখা সবই অবৈধ। এসব থেকে যা আয় হবে তা খেয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে সেই ক্ষমা পাওয়ার কোনো সুযোগ নাই।

এর বাইরে প্রতারণা করা, সুদের সাথে সম্পৃক্ত থাকা, সুদের ব্যবসা করা, চুরি, ডাকাতি,  কারো সম্পত্তি জোর করে ভোগদখল করা, চাপ দিয়ে কম দামে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করার মতো অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষমাপ্রাপ্তি আরো দুরহ।

তবে হতাশ হওয়ার কিছু নাই। আপনি যদি সত্যিই ক্ষমা পেতে চান তাহলে এখনই হারাম উপার্জন থেকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিন এবং সেজন্য প্রচেষ্টা শুরু করুন। এখানে প্রচেষ্টার মাত্রা হবে , কোনমতো বেঁচে থাকার মতো উপার্জন হলেই হারাম উপার্জন বাদ দিতে হবে। এখনকার সমাজে মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় হলেই সে গ্রামে থেকে মানবেতর জীবনযাপন করে হলেও বেঁচে থাকতে পারবে। সত্যিকারের ক্ষমা পেতে হলে এতোটুকু আয় হলেই হারাম উপার্জন থেকে সরে আসতে হবে।
বাচ্চারা পড়াশোনা করে, আপনি উন্নত জীবন যাপন করেছেন এখন হালাল টাকায় সেই পরিমান উন্নত জীবনযাপনের নিশ্চয়তা হলে আপনি হারাম উপার্জন ছাড়বেন বলে চিন্তা করলে সেটাকে প্রচেষ্টা বলা যাবে না।

বিষয়টা কঠিন। কিন্তু আপনার পরকালীন জীবনের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ। অতএব, আজকেই সিদ্ধান্ত নিন, তা যত কঠিনই হোক না কেন।
 

শাহেদ//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়