মাগফিরাতের জন্য মানুষের প্রতি দয়া করুন এবং দান করুন
মাগফিরাতের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে আমরা চলে এসেছি। আল্লাহ তায়ালার দয়া ও অনুগ্রহের বিপরীতে আমরা যে পাপ করেছি তার ক্ষমা কোনো যৌক্তিক বিবেচনায় হবে না। বরং এখানে ক্ষমাপ্রাপ্তির একমাত্র উপায় হলো আল্লাহ তায়ালার দয়া ও রহমত। আল্লাহ তায়ালার দয়া ও রহম পাওয়ার কিছু উপায় আল্লাহ স্বয়ং এবং তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে দিয়েছেন।
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বরাতে বর্ণনা করেন, ‘রহমান দয়াশীলদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা জমিনবাসীদের প্রতি দয়া করো, আসমানের অধিবাসী তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (সহি আবু দাউদ, তিরমিজি)
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি সদয় নয়, আল্লাহও তার প্রতি সদয় নন।’ (সহি বুখারি ও মুসলিম)
জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে না, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেন না। (বুখারিও মুসলিম)
উপরোক্ত হাদিসগুলোর বার্তা খুব পরিষ্কার। আমরা যদি আল্লাহর কাছ থেকে রহম ও দয়া চাই তাহলে আমাদেরও মানুষের প্রতি দয়াশীল হতে হবে। দয়াশীল হওয়ার অর্থ কেবল দান-সদকা করা নয় বরং দয়া বহুমাত্রিক। কেউ কোনো অপরাধ করলে দয়ার্দ্র হওয়া যায়, কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে দয়ার্দ্র হওয়া যায়, অধীনস্তদের প্রতি দয়ার্দ্র হওয়া যায়। দয়া ও রহম করার ক্ষেত্র বলে শেষ করা যাবে না এবং নির্দিষ্টও করা যাবে না। দয়া যেমন মানুষের প্রতি তেমনি অন্য জীবের প্রতিও করা যায়। এই ব্যাপারে সার কথা হলো, নিজেকে দয়াশীল হিসেবে গড়ে তুলুন। সবার সাথে সদয় আচরণ করুন। তাহলে আমরা আল্লাহর কাছ থেকেও দয়া ও রহম আশা করতে পারব।
দানের ব্যাপারে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এতো বেশি উৎসাহিত করা হয়েছে যার ইয়াত্তা নেই। যেমন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা দান প্রকাশ্যে করো, তবে তা উত্তম; আর যদি তা গোপনে করো এবং অভাবীদের দাও, তবে তা তোমাদের জন্য শ্রেয়। এর মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের মন্দগুলো মোচন করে দেবেন। তোমরা যা করো, আল্লাহ তা অবগত আছেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৭১)।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘খেজুরের এক টুকরা দিয়ে হলেও (দান করে) নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৫১২)
তিনি বলেছেন, ‘সদকা গুনাহকে সেভাবে মিটিয়ে দেয়, যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ২২১৩৩)
হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয় গোপন সদকা রবের ক্রোধ প্রশমিত করে।’ (তাবারানি, হাদিস : ১০১৮; তারগিব, হাদিস : ৮৮৮)
এরকম বহু হাদিস ও আয়াত উল্লেখ করা যাবে যেখানে দান করতে বলা হয়েছে। দানের অনেক ফজিলত রয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, দান করলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করার কথা বলেছেন। দান আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত করে, জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে এবং গুনাহ মিটিয়ে দেয়।
মাগফিরাতের এই দশকে আমরা যখন মহান আল্লাহর রহম, দয়া ও ক্ষমার প্রার্থী তখন আমাদের মানুষের প্রতি দয়াশীল হতে হবে এবং দান-সদকার মাধ্যমে ক্ষমাপ্রাপ্তির পটভূমি নির্মাণ করতে হবে। দান করার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, এই দান যেন লোক দেখানো না হয়। বিশেষ করে দান করার পরে দানগ্রহীতাকে খোঁটা দেওয়া অনেক বড় অপরাধ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘হে মুমিনগণ! খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-সদকা সেই ব্যক্তির মতো নষ্ট করো না, যে নিজের সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে না। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত এরকম, যেমন এক মসৃণ পাথরের উপরে মাটি জমে আছে, অতঃপর তাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ে এবং তা সেই মাটিকে ধুয়ে নিয়ে যায় এবং সেটিকে পুনরায় মসৃণ পাথর বানিয়ে দেয়। এরুপ লোক যা উপার্জন করে, তার কিছুমাত্র তারা হস্তগত করতে পারে না। আর আল্লাহ এরুপ কাফেরদের হেদায়াতপ্রাপ্ত করেন না।’ সূরা বাকারা (২) : ২৬৪
আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, তিন শ্রেণীর লোকের সঙ্গে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন কথা বলবেন না। খোঁটাদানকারী; সে যা কিছু দান সদকা করে পরক্ষণেই তার খোঁটা দেয়। আর যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে তার পণ্য বিক্রি করে এবং যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে চলে বা পরিধান করে। (মুসলিম, হাদিস নং: ২০২)
অতএব কোনো অবস্থাতেই দান করে খোঁটা দেওয়া যাবে না। খোঁটা দেওয়া মানে তাকে দানের কথা বলে ছোট করাই নয়, বরং দানগ্রহীতার ওপরে প্রভাব বিস্তার করা, তাকে সামাজিকভাবে অধস্তন বানিয়ে রাখা, তার সাথে ‘বড়ভাই সুলভ’ আচরণ করাও খোঁটা দেয়ার শামিল।
তাই আসুন, মাগফিরাতের এই শেষ দিকে নিজেদের ক্ষমাপ্রাপ্তির জন্য বেশি বেশি দান করি। যার যতটুকু সম্ভব সে ততটাই দান করব এবং এর বিনিময়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব। আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা মানুষকে দয়া করা ও দান করার বদৌলাতে আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।
শাহেদ/তারা