ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

হাসি মুখেই গলায় ফাঁসির দড়ি পরেছিলেন ক্ষুদিরাম

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ১১ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ১৩:৩২, ১১ আগস্ট ২০২৩
হাসি মুখেই গলায় ফাঁসির দড়ি পরেছিলেন ক্ষুদিরাম

একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি/হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী। /কলের বোমা তৈরি করে/দাঁড়িয়ে ছিলেম রাস্তার ধারে মাগো,/বড়লাটকে মারতে গিয়ে/মারলাম আরেক ইংলন্ডবাসী। /হাতে যদি থাকতো ছোরা/তোর ক্ষুদি কি পড়তো ধরা মাগো/রক্ত-মাংসে এক করিতাম/দেখতো জগতবাসী।

এই এক গানেই বিপ্লবী ক্ষুদিরামকে চেনা যায়।ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসির ১১৫ তম বার্ষিকী আজ।ক্ষুদিরাম সেদিন দৃঢ় পদক্ষেপে প্রফুল্ল চিত্তে ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে যান। 

ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন প্রথম বাঙালি বিপ্লবী যাকে ব্রিটিশ সরকার ফাঁসি দিয়েছিল। ক্ষুদিরাম ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন উৎখাত করার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট তার ফাঁসির নির্দেশ কার্যকর হয়।  ফাঁসির সময় তার বয়স ছিল ১৮। 

ক্ষুদিরামের ফাঁসির পর ১৯০৮ সালের ১২ আগস্ট অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের বর্ণনা ছিলো এ রকম:

‘মজঃফরপুর, ১১ আগস্ট অদ্য ভোর ছয় ঘটিকার সময় ক্ষুদিরামের ফাঁসি হইয়া গিয়াছে। ক্ষুদিরাম দৃঢ় পদক্ষেপে প্রফুল্ল চিত্তে ফাঁসির মঞ্চের দিকে অগ্রসর হয়। এমন কি তাহার মাথার ওর যখন টুপি টানিয়া দেওয়া হইল, তখনও সে হাসিতে ছিল। স্বদেশের জন্য মৃত্যুকে কিভাবে হাসিমুখে বরণ করতে হয় তা শিখিয়েছিল ক্ষুদিরাম বসু। আঠারো বছর বয়স যে কি সাহসী হয় তারও প্রমাণ ক্ষুদিরামের দৃঢ় মনোবল। ’

ক্ষুদিরাম বসুর জন্ম ১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর মেদেনীপুর জেলার হাবিবপুর গ্রামে। বাবা ত্রৈলক্যনাথ বসু এবং মা লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী। তিনকন্যা সন্তান জন্মের পর ক্ষুদিরাম ছিলেন চতুর্থ সন্তান। তার আগেই দুই ছেলে জন্মের পর মারা যায়। এ কারণে জন্মের পরই তিন মুঠ ক্ষুদের বিনিময়ে তাকে তার দিদির কাছে দেন বাবা-মা। এর থেকে তার নাম হয় ক্ষুদিরাম। 

ক্ষুদিরাম জীবন বাজি রেখে ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল বিহারে ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে বোমা মেরে ব্রিটিশ শাসক কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু যে গাড়িটিতে তাদের থাকার কথা ছিলো তারা সেদিন সে গাড়িটিতে ছিলেন না। তার বদলে মারা যান দুই ইংরেজ মহিলা। ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়েন ক্ষুদিরাম বসু ও আরেক বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী। প্রফুল্ল নিজের কাছে থাকা রিভলবার দিয়ে আত্মহত্যা করেন। বিচার হয় ক্ষুদিরামের। এতে তাঁর ফাঁসির রায় দেন বিচারক কর্নডফ। 

তিনি ক্ষুদিরামকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- ফাঁসিতে যে মরতে হবে সেটা বুঝেছো? জবাবে ক্ষুদিরাম বলেছিলেন, বুঝেছি। তার মুখের অবিচলিত হাসি হাসি ভাব দেখেই বিচারক প্রশ্নটি করেছিলেন।

/টিপু/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়