ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আজও জনপ্রিয় ‘কিছুক্ষণ’র কাটলেট স্যুপ

মুজাহিদ বিল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৬, ৭ অক্টোবর ২০২৩  
আজও জনপ্রিয় ‘কিছুক্ষণ’র কাটলেট স্যুপ

বাহারি ও মুখরোচক খাবারের জন্য পুরোনো ঢাকার খ্যাতি রয়েছে। রাজধানীর এ অঞ্চলের মানুষের বিকেলের নাস্তায় এখনো পছন্দের তালিকায় রয়েছে  কাটলেট, স্যুপ, মোগলাইসহ নানা পদ। আর এই রেসিপির জন্য ‘কিছুক্ষণ’ রোস্তোরাঁর সুনাম রয়েছে। 

পুরোনো ঢাকার গেন্ডারিয়ার সতীশ সরকার রোড ধরে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে সবুজ রঙের একটি রেস্তোরাঁ। সেখানে বসেছে ভোজনরসিকদের আড্ডা। ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে পোহাতে হবে জটলার ভোগান্তি। ভিড় ঠেলে প্রবেশ করে প্রথমেই দেখবেন ডান পাশে ক্যাশ কাউন্টারের সামনেই তিনটি টেবিল সাজানো। দুটিতে চারটি করে চেয়ার এবং একটিতে মুখোমুখি বসতে পারবেন ৮ জন। কর্মচারীরা যে যার মতো খাবার পরিবেশন করতে ব্যস্ত। 

দোকানে প্রবেশের পর উপরে দেয়ালে তাকালে দেখতে পাবেন সারি সারি সাজানো বিখ্যাতজনের ছবি। মনে প্রশ্ন আসতে পারে ভুলে কোনো লাইব্রেরিতে ঢুকে পড়লাম না তো! 

এই প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় রেস্তোরাঁর বর্তমান কর্ণধার স্বপন চন্দ্র ঘোষের সঙ্গে। তিনি জানান, তার বাবা নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ ছিলেন সাহিত্যপ্রেমী মানুষ। বরাবরই তাকে টানতো কবিতা, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি। সঙ্গীত চর্চা করতেন। বাবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাস্বরূপ রেস্তোরাঁর দেয়ালজুড়ে স্বপন রেখেছেন সাহিত্যিকদের ছবি।

স্বপন চন্দ্র ঘোষের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৭৮ সালে নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ প্রতিষ্ঠা করেন এই রেস্তোরাঁ। তিনি বরিশালের ব্রজমোহন স্কুল থেকে পড়াশোনা করে পূর্বপুরুষের ব্যবসার দেখভাল করলেও এক সময় পাড়ি জমান ঢাকায়। পুরোনো  ঢাকার ফরাশগঞ্জের লালকুঠিতে থিয়েটারে কাজ করতেন নারায়ণ চন্দ্র। এরপর এই রেস্তোরাঁর ব্যবসায় নাম লেখান। কিন্তু খুব বেশিদিন এর দেখাশোনা করতে পারেননি তিনি। রোস্তোরাঁর সামনেই ট্রাক চাপায় প্রাণ হারান। 

‘কিছুক্ষণ’ রেস্তোরাঁয় নিয়মিত আড্ডা জমাতেন কবি সাহিত্যিকরা। এদের মধ্যে অন্যতম আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, কায়েস আহমেদ, ফকির আলমগীর, ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবসহ অনেকেই। এই রেস্তোরাঁর নামকরণ করেন সাহিত্যিক কায়েস আহমেদ। 

রেস্তোরাঁয় সবচেয়ে বেশি চাহিদা কাটলেট এবং স্যুপের। এ ছাড়াও পাওয়া যায় চিকেন ফ্রাই, মোগলাই পরোটা, আলুর চপ ইত্যাদি।

রেস্তোরাঁয় কাটলেটের সঙ্গে দেওয়া হয় সালাদ, বিট লবণ। পাশাপাশি প্রত্যেক টেবিলেই সাজানো থাকে কাঁচা মরিচের পানি যা খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে তোলে কয়েকগুণ। স্যুপে থাকে চিকেন ও আস্ত ডিম এবং অন্যান্য সিক্রেট মশলা। কাটলেটের রেসিপি জানাতে রাজি হননি রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ।

খাবারের দাম চপ ১০ টাকা, কাটলেট ২০ টাকা, মোগলাই পরোটা ৫০ টাকা, চিকেন ফ্রাই ৯০ টাকা, স্যুপ ৪০ টাকা। পুরোনো ঢাকার অনেকেই নিয়মিত খেতে আসেন এই রোস্তোরাঁয়। বিকেলের নাস্তা ২০-১০০ টাকার মধ্যে সেরে নেওয়ার জন্য এটি অনেকের পছন্দের জায়গা। 

রেস্তোরাঁর প্রথম বাবুর্চি ছিলেন বিমল ডি কস্তা। ১০ বছর ধরে এখানে কর্মরত থাকার পর মারা যান তিনি। এরপর থেকে কস্তার বানানো রেসিপিতেই চলছে রেস্তোরাঁটি। সকাল সাতটা থেকে দুপুর বারোটা এবং বিকেল পাঁচটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকে ভোজনরসিকদের প্রিয় এই রেস্তোরাঁ। 

মোহাম্মদপুর থেকে খেতে এসেছেন মিনহাজ আবেদীন। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, খাবারের অনেক প্রশংসা শুনে আজ এলাম। খাবার বেশ ভালো। কাটলেটটা দারুণ! এমন সময়ে ২০ টাকা দাম ভাবাই যায় না। তবে জায়গাটা আরেকটু বড় হলে ভালো হতো।

প্রায়ই কাজের সুবাদে গেন্ডারিয়া আসেন নারায়ণগঞ্জের ইমরান হোসাইন। তিনি বললেন, এদের খাবার সবই ভালো। আমি প্রায় কয়েক বছর ধরে এখানে খেতে আসি। চিকেন ফ্রাইটা ভালো হয় বেশি। দামটাও এখনো ঠিকঠাক আছে। 

স্বপন চন্দ্র ঘোষ বলেন, আমরা অনেকদিন থেকেই সুনামের সাথে ব্যবসা করে আসছি। বেচাকেনা ভালো হয়। খাবারের মান ধরে রাখতে সব সময় চেষ্টা করি আমরা। এটাই আমাদের খ্যাতির সহজ রহস্য। 

তারা//

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়