ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কোথায় হারালো রুমাল

এস এম জাহিদ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪০, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১২:৪৮, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
কোথায় হারালো রুমাল

রুমাল। ছবি: ইন্টারনেট

‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন 
‘বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালোবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এরকম আতরের গন্ধ হবে!’

রুমাল। শুধু এক টুকরো কাপড় নয় এর থেকে বেশি কিছু। এখনও আছে, এ কথা বলা যাচ্ছে না তবে একটা সময় ছিল। বিশেষ করে এতে যখন প্রেমের আকুতি বা স্মৃতিচিহ্ন ফুটে উঠতো। রুমালের বুক জুড়ে রঙিন সুতোই বোনা হতো কত কথা। অল্প দুইচার কথায় কত স্মৃতি, ভালোবাসা, বিরহী প্রাণের আকুলতা প্রকাশ পেত। কখনো স্নেহ, ভালোবাসার কথামালার পাশে শোভা পেত ফুল, লতা, পাতার মোটিফ। নিখুঁত সেলাই আর আঁকাবাঁকা অক্ষরে দূরের মানুষকে সব সময় মনে করিয়ে দিতো প্রিয় মানুষের কথা।

আরো পড়ুন:

হাতের কাজে পারদর্শী ছিলেন এই ব-দ্বীপের বেশিরভাগ নারী। তারা নিবিড় মনোযোগ ও মনোবেদনার স্পর্শ মেখে সেলাইয়ের কাজ করতেন। ছোট্ট এক টুকরো কাপড়ে প্রিয়জনকে উদ্দেশ্য করে অনেকেই লিখতেন, ‘ভুলনা আমায়’ কিংবা ‘গাছটি সবুজ ফুলটি লাল তোমার আমার ভালোবাসা থাকবে চিরকাল’ এরকম অনেক কথা।

প্রেম নিবেদনের জন্য নিজের নামের প্রথম অক্ষরের সঙ্গে যোগ করে দিতেন প্রিয়জনের নামের প্রথম অক্ষর। আবার বোন তার ভাইকে রুমাল দিতেন। সেই রুমালে থাকতো স্নেহময় ভালোবাসার প্রকাশ। পাখি মোটিফটি বেশ জনপ্রিয় ছিল। বিশেষ করে টিয়া আর ময়ূর। যেকোনো দুইটি পাখি এঁকে লেখা থাকত ‘শুভেচ্ছা’। তিন, চার দশক আগে যারা তরুণ ছিলেন তাদের অনেকেই হাতে সেলাই করা রুমাল ব্যবহার করেছেন। সংগ্রহপ্রিয় কারো কারো কাছে হয়তো মিলে যাবে একটি রুমাল।

রুমাল ব্যবহারের প্রচলন করেছিল রোমানরা। তারা ঘাম মুছতে এবং মুখ ঢেকে রাখার কাজে এই টুকরো কাপড়টি ব্যবহার করত। বাংলাদেশেও এর ব্যবহার ব্যতিক্রম নয়। প্রয়োজন আর ফ্যাশনের আলঙ্কারিক অনুসঙ্গ এটি। হালকা বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে, টুপির বিকল্প হিসেবে অথবা সলজ্জ বরের মুখ ঢাকতে কত কাজেই না ব্যবহার হতো। রুমাল দিয়ে বর আর কনের মাঝে শাড়ির আঁচলের সাথে চিরবন্ধনে আবদ্ধ করে দিত কনে পক্ষ। নিত্যব্যবহার্য এই রুমাল আজ বিলুপ্তির পথে, অথচ একটা সময় সবার পকেটে পকেটে থাকতো।

গল্প, কবিতা, সাহিত্য, গানে সরব উপস্থিতি ছিল রুমালের। সিনেমার দৃশ্যে দেখা যেত নায়িকার হাত, পা কোথাও কেটে গেলে নায়ক তার গলায় বাঁধা রুমালটি নায়িকার রক্তাক্ত স্থানে বেঁধে দিতেন। রুমালের ব্যবহার যেহেতু নেই, সেসব দৃশ্য এখন অবান্তর। শোনা যেত, রুমাল দিলে নাকি ঝগড়া হয়, সেটাও কতটা সত্য কে জানে! জানি না এখনও এই হেমন্ত বা শীতের মিষ্টি রোদ পোহাতে পোহাতে কোনো নারী তার প্রিয়জনকে দেবে বলে রুমালের বুকে হৃদয়ের কথা ফুটিয়ে তোলে কিনা! আগের দিনের মতো বরেরা এখন সলজ্জ নয়। নিজের বিয়ের নাচেও তাদের অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।

রুমাল শব্দটি ল্যাটিন, অথচ এই শব্দের আবেদন বাঙালি সংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। রুমাল এখন মনে হয় কেউ ব্যবহার করে না। অনেক কিছুই তো হারিয়ে গেছে হয়তো সেই তালিকায় রুমালও যুক্ত হয়েছে। বরুনারা আছে কিন্তু বরুনারা এখন সুগন্ধি রুমাল হারিয়ে ফেলেছে। ব্যবহারের দিক থেকে রুমালের জায়গা দখল করেছে টিস্যু পেপার। বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, রুমালের থেকে টিস্যু জীবাণু পরিষ্কার করতে অনেক বেশি কার্যকর। কিন্তু তাতে কি রুমালের আত্মিক আবেদন পরিমাপ করা যায়।

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়