ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

হিরার খনি পেয়েও ভাগ্য খোলেনি তাদের

ফিচার ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ৪ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১১:৪৫, ৪ জানুয়ারি ২০২৪
হিরার খনি পেয়েও ভাগ্য খোলেনি তাদের

মহামূল্যবান পাথর হচ্ছে হিরা। একটু খানি হিরা পেলে একজন ব্যক্তির ভাগ্য বদলে যেতে পারে। অথচ হিরার খনি পেয়েও ভালো না থাকার বাস্তবিক গল্প তৈরি হয়েছে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য। শাসন যখন শোষণে পরিণত হয় এর ব্যতিক্রম কি করে ঘটবে বলুন!

আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। এর এক দিকে অতলান্তিক মহাসাগর, অন্যদিকে ভারত মহাসাগর এবং এক দিকে কুমেরু বা দক্ষিণ মহাসাগর। দারিদ্র, বৈষম্য, অশিক্ষা আর রাজনৈতিক অব্যবস্থা দেশটিকে কুরে কুরে খাচ্ছে। দেশটির অতীত ইতিহাস-ব্রিটিশরা বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে দক্ষিণ আফ্রিকাকে মুক্তি দিয়েছে। 

১৮৬৬-৬৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম হিরে আবিষ্কৃত হয়। এর আগে ইউরোপীয় বণিকদের দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার বিশ্রামের জায়গা ছিল এই দেশ। 

দক্ষিণ আফ্রিকার হিরাতে সেখানকার সাধারণ মানুষ, আদি বাসিন্দাদের কোনো অধিকার ছিল না। বিদেশিরাই হিরার খনি কাজে লাগিয়ে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলে। কারখানায় ব্যবহার করা হয় স্থানীয়দের শ্রম। তবে তারা উপযুক্ত পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হয়।

একাধিক বিদেশি সংস্থা দক্ষিণ আফ্রিকার হিরা শিল্পের দখল নিয়ে ফেলেছিল। তারা নামমাত্র পারিশ্রমিকে স্থানীয়দের দিয়ে কাজ করিয়ে নিত। এভাবে একসময় বিশ্বের ৯০ শতাংশ হিরের জোগানদার হয়ে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকা।

দিন গেছে আর দক্ষিণ আফ্রিকার আদিবাসীদের উপর বিদেশি শক্তির অত্যাচার বেড়েছে। হিরা পাচারের সন্দেহে তাদেরকে নানাভাবে অত্যাচার, অপমান করা হয়েছে। এমন হয়েছে যে উলঙ্গ করে তল্লাশি চালানো থেকে শুরু করে বেধড়ক মারধর পর্যন্ত করেছে। এই সময় থেকেই সাদা এবং কালো চামড়ার বিভেদ, বৈষম্য বেড়ে গিয়েছিলওই দেশটিতে।

১৯১০ সালে অবশেষে ‘ইউনিয়ন অফ সাউথ আফ্রিকা’হিসেবে পরিচিতি পায় দেশটি। এর কয়েক বছর পরে একটি আইন পাশ হয়, যেখানে জানিয়ে দেওয়া হয়, কৃষ্ণাঙ্গেরা সেই দেশে কোনো সম্পত্তির অধিকারী হতে পারবেন না। সমাজকে গায়ের রঙের ভিত্তিতে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়— কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত।

কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গের বিভেদের সূত্রপাত হয়েছিল হিরাকে কেন্দ্র করে। ১৯৯৪ সালে বিদেশি শক্তিকে সরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্ষমতায় আসে আফ্রিকান ন্যাশানাল কংগ্রেস (এএনসি)।  তবুও সমস্যা কিছু কমেনি। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় বেকারত্বের হার ৩৫ শতাংশেরও বেশি। দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ তরুণ কর্মহীন। ঘরে ঘরে চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রাখা হয়।

বাড়িতে দিনে কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকরা দেশটিকে শোষণ করে চলেছেন আজও। একবাক্যে বলা যায় হিরার দেশ হয়েও তার ঔজ্জ্বল্য নেই দক্ষিণ আফ্রিকায়।

/স্বরলিপি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়