হিন্দু ব্রাহ্মণ হয়েও কেন ইমাম হোসাইনকে ভালোবাসেন তারা
সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

হুসাইনি ব্রাহ্মণদের কয়েকজন সদস্য। ছবি: বিবিসি থেকে নেওয়া
ভারতে এমন একটি গোষ্ঠী রয়েছে যারা হিন্দু ধর্মের অনুসারী হয়েও মুসলিম ধর্মের অনেক বিষয় মেনে চলেন। কখনও কখনও জুমার নামাজও আদায় করেন। পূর্বপুরুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই রেওয়াজ মেনে চলে ওই গোষ্ঠীর মানুষেরা। ওই গোষ্ঠীর নাম হুসাইনি ব্রাহ্মণ। এই গোষ্ঠীর বর্তমানের প্রজন্মের অনেকের মধ্যেই কৃষ্ণ প্রেম যেমন আছে, তেমনি ইমাম হোসাইনের প্রতিও প্রেম রয়েছে। হিন্দু ধর্মের হয়েও মুসলিম ধর্মের প্রতি ভালোবাসা থেকে রোজার মাসে কয়েকটি রোজাও পালন করে থাকেন হোসাইনি হিন্দু ব্রাহ্মণরা।
হুসাইনি ব্রাহ্মণরা ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে এক বিরল সেতুবন্ধ রচনার কারণেই ভারতের সমাজজীবনে একটি অসাধারণ জায়গা অধিকার করে আছেন। এই গোষ্ঠীর মানুষ সংখ্যায় কম হতে পারেন, কিন্তু স্বকীয়তায় ও ধর্মীয় সম্প্রীতিতে এক উজ্জ্বল জনগোষ্ঠী! পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশ, ভারতের পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, কাশ্মীর, দিল্লি ও লখনৌর নানা প্রান্তে এখনো বেশ কয়েক হাজার হুসাইনি ব্রাহ্মণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করেন।
হুসাইনি ব্রাহ্মণদের কিছু মানুষ আরবে বসবাস করেন। এর পেছনেও রয়েছে কারবালার যুদ্ধের প্রভাব।
কোনো কোনো গবেষক জানাচ্ছেন, ‘‘আরব উপদ্বীপেও বেশ কিছু হুসাইনি ব্রাহ্মণ আছেন। ভারতে হুসাইনি ব্রাহ্মণরা তাদের জীবনচর্যায় হিন্দু ও মুসলিম – দুই ধর্মেরই কিছু কিছু রীতি রেওয়াজ, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালন করে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরের আশুরা পালনে মহররমের তাজিয়াতেও যোগ দেবেন তাদের অনেকেই।’’
কারবালার যুদ্ধে সহায়তা পাওয়ার আশায় ইমাম হুসাইন বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন ভারতীয় হিন্দু শাসক সমুদ্রগুপ্ত।
গবেষক ও ইতিহাসবিদের মতে, ‘‘হুসাইনি ব্রাহ্মণরা হলেন প্রাচীন ভারত ও ইসলামী বিশ্বের মধ্যে সম্পর্কের এক 'অতুলনীয় নিদর্শন'। স্বৈরাচারী ইয়াজিদ যখন ইমাম হোসাইনকে কারবালার প্রান্তরে তাকে সপরিবারে মেরে ফেলার চক্রান্ত করলেন, সে সময় তিনি বিশ্ব মানবতার উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছিলেন ‘হাল মিন নাসিরিন ইয়ানসুরনা!’ – যার অর্থ কেউ কি কোথাও আছে, যারা আমাদের সাহায্য করতে পারে? সেই ডাকে সাড়া দিলেন সুদূর ভারতের (হিন্দুস্তান) রাজা সমুদ্রগুপ্ত।’’
এ বিষয়ে গবেষক ও ইতিহাসবিদরাই বা কী বলছেন? আর আজ এত বছর বাদেও হুসেইনি ব্রাহ্মণরা কীভাবে ধরে রেখেছেন তাদের অতি গর্বের একটি ইসলামী পরম্পরা?
যা জানা যায়
ইউফ্রেটিস (ফোরাত) নদীর পানি আটকে দিয়ে ইয়াজিদের সেনারা ততক্ষণে ইমাম হোসাইন ও তার সঙ্গীদের মৃত্যুর পথ তৈরি করে ফেলেছিলেন। এদিকে রাজা সমুদ্রগুপ্ত তার বীর সৈন্যদের একটি দলকে কারবালায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন, ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন বীর যোদ্ধা রিহাব সিধ দত। রিহাব ছিলেন পাঞ্জাবের একজন মোহিয়াল ব্রাহ্মণ। কিন্তু দত ও তার সাহসী সেনারা যখন কারবালায় পৌঁছলেন, ততক্ষণে ইমাম হোসাইন শহীদ হয়েছেন।
বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলেন না রিহাব ও তার দলের সামরিক সদস্যরা। ক্ষোভে-দু:খে ভারত থেকে যাওয়া ওই সৈন্যরা স্থির করলেন নিজেদের তরবারি দিয়েই তারা নিজেদের শিরশ্ছেদ করবেন। কিন্তু ইমামের আরব অনুরাগীরা তাদের বোঝালেন, ‘‘এভাবে জীবন নষ্ট না করে তারা বরং জনাব-ই-মুখতারের বাহিনীতে যোগদান করুন এবং ইমামের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার লড়াইতে সামিল হোন।’’
ইয়াজিদের বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধ করে প্রাণোৎসর্গ করেছিলেন রিহাব দত ও তার বাহিনীর অনেকেই। যা ভারতীয়দের কাছে কারবালার লোকগাঁথার বেদনাদায়ক অংশ হয়ে গিয়েছিলো। পরে বাহিনীর যারা বেঁচে যান, তাদের কেউ কেউ সেখানেই রয়ে যান – কেউ আবার মাতৃভূমি ভারতে ফিরে আসেন।
কারবালার যে অংশটিতে এই বীর ব্রাহ্মণরা বসতি করেছিলেন সেটি পরিচিত ছিল 'আদ-দায়ার-উল-হিন্দিয়া' নামে।
সূত্র: বিবিসি
ঢাকা/লিপি