সবারই স্লোগান তখন রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই
টিপু || রাইজিংবিডি.কম
ভাষার মাস
শাহ মতিন টিপু : ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২। ভাষা শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় দিন। প্রবল দেশাত্মবোধে আবেগ ও উদ্দীপনায় জেগে উঠেছে সর্বস্তরের মানুষ। সবার বুকেই সেদিন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি। সবারই স্লোগান তখন রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল-হোস্টেলের ছাত্রদের মধ্যে তখন আলোচনার বিষয় নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতা ও সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন। নাজিমুদ্দিনের ওপর সবার ক্ষোভ প্রকাশ পেতে থাকে।
সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকার-বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদেরও আগ্রহ ছিল যথেষ্ট। রাষ্ট্রভাষার মতো একটি বিষয় রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক দু`দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই রাজনৈতিক নেতা অনেকেরই লক্ষ্য ছিল ভাষা আন্দোলনের মঞ্চটিতে আধিপত্য বজায় রাখা।
সংগ্রাম পরিষদ গঠনের কর্মীসভায় রাষ্ট্রভাষার দাবি ছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ছিল নিরাপত্তা বন্দীদের মুক্তি। শেখ মুজিবুর রহমান, মহিউদ্দিন আহমদ প্রমুখ নেতা তখন ঢাকা জেলে বন্দী। তাছাড়া বন্দী বাম ঘরানার অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতাকর্মী। হয়তো তাই ভাষা আন্দোলনের মিছিলে মিছিলে `রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই`র পরের সেøাগানই ছিল `রাজবন্দীদের মুক্তি চাই`। যা ভাষা সংগ্রামীদের গভীর রাজনৈতিক সচেতনতার পরিচায়ক। আর সামাজিক অন্তর্দৃষ্টি ধরা পড়েছিল `সর্বস্তরে বাংলা চালু`র শ্লোগানে।
ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক তার স্মৃতি কথনে লেখেন, ‘নীলক্ষেত ব্যারাকে থাকার সুবাদে ওই ব্যারাকের বাসিন্দাদের একজনের মুখে শুনি ভাষা নিয়ে তাদের বিক্ষোভ, সভা, মিছিল ইত্যাদির কথা। কারণ যদিও সামান্য, তবুও গুরুত্বপূর্ণ। সাতচল্লিশের শেষে পাক সরকারের ছাপা এনভেলাপ, মানিঅর্ডার ফরম ইত্যাদিতে উর্দু ও ইংরেজি লেখার পাশে বাংলা লেখা না থাকায় তাদের ক্ষোভ। ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে ব্যারাক প্রাঙ্গণে সভা, বক্তৃতা এবং মিছিল ও শ্লোগানে `রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই` `উর্দুর সঙ্গে বিরোধ নাই`। ওরা সরকারি কর্মচারী, তবু সাহস করে পাকিস্তানি উন্মাদনার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গ্রহণ করার জন্য দাবি জানিয়েছিলেন।’
খাজা নাজিমুদ্দিনের উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণার প্রতিবাদে চারদিকেই প্রতিবাদের আবহ। সংগঠিত হতে থাকে বাংলা ভাষা প্রেমি ছাত্র ও তারুণ্য।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫/টিপু/রুহুল
রাইজিংবিডি.কম