ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

একজন আলোকিত মানুষ

মামুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
একজন আলোকিত মানুষ

আলহাজ্ব চৌধুরী আব্দুল হাই

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : নাম আলহাজ্ব চৌধুরী আব্দুল হাই। তিনি একজন গুণীজন। হবিগঞ্জ-লাখাই আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্যকে ভুলতে পারবে না হবিগঞ্জবাসী। এই আলোকিত মানুষটি নিজ কর্মগুণে এখানে সবার মনে বিরাজিত রয়েছেন। এ আইনজীবী তার রাজনৈতিককালে গণ-মানুষের উপকারে বার বার এসেছেন। এ ধারাটি তার এখনো অব্যাহত রয়েছে।

 

তিনি ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। হবিগঞ্জ জেলা বারের সভাপতি ও সেক্রেটারি ছিলেন। রাজনীতি থেকে অবসরে গিয়েও  নানা সামাজিক সংগঠনে যোগদান করে তৃণমূলের পাশে রয়েছেন। লোকজনের নানা সমস্যায় ছুটে যাচ্ছেন। যার বিরুদ্ধে নেই কোনো অভিযোগ। হবিগঞ্জের প্রিয়মুখ চৌধুরী আব্দুল হাই।

 

তার জন্ম হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বড় বহুলা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৩৯ সালের ৯ মার্চ। পিতা মৃত চৌধুরী আব্দুল গণি  মাতা আছিয়া খাতুন চৌধুরী। তিনি বহুলা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বৃত্তিসহ তৃতীয় শ্রেণি পাশ করে হবিগঞ্জ মাধ্যমিক হাইস্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে বৃত্তিসহ ৬ষ্ঠ শ্রেণি পাশ করে হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৫৪ সালে সাধারণ ও অতিরিক্ত গণিতে লেটার মার্কসহ ১ম বিভাগে মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৫৬ সালে বৃন্দাবন কলেজ থেকে ১ম বিভাগে আই এ ও ১৯৫৮ সালে ২য় বিভাগে বিএ পাশ করেন। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ’তে কেউ ১ম বিভাগ পায়নি। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২য় বিভাগে তিনি আইন ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৩ সালে বার কাউন্সিলে ও হবিগঞ্জ এডভোকেট সমিতিতে এন রোলড হন।

 

জীবনভর তিনি দেওয়ানী আদালতে আইন ব্যবসা করেছেন। তিনি হবিগঞ্জ হাইস্কুল, জে কেএন্ড এইচ কে হাইস্কুল, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসহ বিভিন্ন ব্যাংকের লিগ্যাল এডভাইজারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৫ সালে তিনি রাজনীতিতে যোগদান করে ভাসানী ন্যাপের হবিগঞ্জ মহকুমার সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি মোজাফফ্র ন্যাপে যোগদান করে হবিগঞ্জে সভাপতি’র দায়িত্ব চালিয়ে যান। ১৯৮৬-৮৭ সালে ৮ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে হবিগঞ্জ-লাখাই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

 

এমপি থাকাকালে হবিগঞ্জ-লাখাই নির্বাচনী এলাকা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা প্রসঙ্গে  তিনি সংসদে দুই শতাধিক প্রশ্ন উত্থাপন করে গৌরবোজ্জল ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৬ সালে প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, বিভিন্ন অধিকার আদায় আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ এবং হবিগঞ্জবাসীর সুখ দুঃখের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। তিনি হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথে ট্রেন চালুর জন্য যুগান্তকারী ভূমিকা পালন বরেন। যার ফলে ২০০১ সালে এ পথে ট্রেন চালু হয়েছিল।

 

 

হবিগঞ্জ হাইস্কুল, জে কে এন্ড এইচ কে হাইস্কুল, হবিগঞ্জ মহিলা কলেজ, হবিগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছেন। যার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। তিনি ভ্রমণ করেছেন ভারত, থাইল্যান্ড, সোভিয়েত ইউয়িন ও আমেরিকায়। দুইবার তিনি পবিত্র হজ্ব পালন করেন। জেলা বারের সভাপতি ও সেক্রেটারী ছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। তিনি কবির কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটি ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সভাপতি’র দায়িত্ব পালন করছেন।

 

একান্ত আলাপকালে চৌধুরী আব্দুল হাই বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকসেনাদের হাতে তিনি তিনদিন বন্দি ছিলেন। সে সময় পাক সৈন্যরা তার ওপর অমানবিক নির্যাতন করে। এখনো তিনি এ স্মৃতি ভুলতে পারেননি।’

 

তিনি বলেন, ‘গণ-মানুষের সেবা করার মধ্যে তৃপ্তি রয়েছে। তাই আমৃত্যু সেবা করেই যাচ্ছি। লোকজনের সেবা করা নামের জন্য নয়। শুধু তাই নয়, কোনো প্রকার লাভের আশা করা যাবে না। এমপি ছিলাম। কোন লোভ করিনি।’

 

এ প্রিয় মানুষটি এখন পর্যন্ত আইনপেশায় যুক্ত থেকে তৃণমূল মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করছেন। তার সহযোগীতায় ন্যায় বিচার পাচ্ছেন নির্যাতিত অনেক মানুষ।    

 

 

 

রাইজিংবিডি/ হবিগঞ্জ/২৮ ডিসেম্বর ২০১৫/ মামুন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়