গাজায় যুদ্ধের ১০০ দিন, বিশ্বজুড়ে চলছে বিক্ষোভ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম
ফাইল ছবি
ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অভিযানের ১০০তম দিন পূর্ণ হলো আজ। এর মধ্যে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩,৮৪৩ জন এবং ইসরায়েলি ১,৩০০ জন। আর বিশ্বের নানা প্রান্তে এই যুদ্ধের বিরোধিতা করে পথে পথে চলছে প্রতিবাদ। একইসাথে এসব বিক্ষোভে অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হচ্ছে।
প্রায় ৭৫ বছর আগে শুরু হওয়া দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে গত বছরের ৭ অক্টোবর সীমান্ত ভেঙে ইসরায়েলে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছিল হামাস। সেই হামলার প্রতিশোধ নিতে ওইদিন থেকেই গাজায় আকাশপথে অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। পরে স্থল অভিযানে নামে দখলদার বাহিনীর হাজার হাজার সৈন্য।
টানা ছয় সপ্তাহ সংঘর্ষের পর গত ২৪ নভেম্বর সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় হামাস ও ইসরায়েল। প্রথমে ৪ দিন বিরতি দিয়ে বন্দী বিনিময় চুক্তি হলেও পরে তা দুই দফায় আরও ৩ দিন বাড়ানো হয়। সাময়িক বিরতির সময় ইসরায়েল থেকে জিম্মি হওয়া বন্দিদের মধ্যে বেশকিছু জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের চেয়ে তিনগুণ বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের কারাগার থেকে ছাড়া পায়। পরে যুদ্ধবিরতি শেষে ফের ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অভিযান শুরু করে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, গত ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া দখলদার বাহিনীর হামলায় ১০০ দিনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৩ হাজার ৮৪৩ জন ফিলিস্তিনি। যাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। আর এই সময়ে আহত হয়েছেন ৬০ হাজার ৩১৭ জন। পাশাপাশি নিখোঁজ রয়েছেন কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, হামলার ঘটনায় তারা বিভিন্ন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে থাকতে পারেন।
যুদ্ধের শততম দিনে গাজার রাফাহ কুয়েতি হাসপাতালের চিকিৎসক সুহাইব আল-হামস সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই ১০০ দিন কীভাবে কেটে গেল? গাজাবাসী এই সময়গুলো তিক্ততার সঙ্গে, শহীদদের সঙ্গে, আহতদের নিয়ে সময় পার করেছে। তারা বেদনা, নিষ্ঠুরতা এবং দুঃখের দৃশ্য নিয়ে পার করেছে।’ তার ভাষ্যে, ‘শুধু বাড়িঘরই নয়, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলেরও ধ্বংস প্রত্যক্ষ করেছি। ইসরায়েল বোমা হামলা করেছে হাসপাতাল, রাস্তা, মেডিক্যাল দল বা অ্যাম্বুলেন্স সবকিছুর ওপর। তারা কোনোকিছু বাদ দেয়নি।’
এদিকে, যুদ্ধের ১০০তম দিনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের অভিযান কেউ বন্ধ করতে পারবে না।’ শনিবার (১৩ জানুয়ারি) এক প্রেস কনফারেন্সে তিনি বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলকে বিজয় অর্জনে কেউ বাধা দিতে পারবে না। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের যা করা প্রয়োজন, তা করবো।’
কয়েক ডজন এনজিওর সহযোগিতায় মালয়েশিয়ার ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে। সেখানে গাজায় চলমান নৃশংসতার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের ভূমি দখলের ইতিহাস সম্পর্কেও জানানো হচ্ছে।
এদিকে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় মার্কিন দূতাবাসের বাইরেও হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। সেখানে তারা ফিলিস্তিনের পতাকা সাথে নিয়ে 'ইসরায়েল বয়কট করো' এবং 'এখনই যুদ্ধবিরতি করো' ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ছিলেন।
আর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে বিক্ষোভকারীরা মার্কিন কনস্যুলেটের বাইরে জড়ো হয়েছিল। সেখান থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক ফাহমিদা মিলার জানান, ভিড়ের মধ্যে অনেকেই গাজায় যুদ্ধের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছে। কেননা দেশটি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলকে হাজার হাজার টন সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে; যা ফিলিস্তিনি জনগণের উপর বোমাবর্ষণে ব্যবহার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিচার আদলতে দক্ষিণ আফ্রিকার মামলার কারণে এই প্রতিবাদ আরও জোরদার হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি।
জোহানেসবার্গে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া রোশান দাদো বলেন, ‘গাজার জন্য যুদ্ধবিরতি এবং পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে থাকব।’
একইসাথে লন্ডন, প্যারিস, ভিয়েনা, বার্লিন, আম্মান এবং ওয়াশিংটন ডিসিসহ বিশ্বের বহু দেশের রাজধানীতে বড় বড় বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বহু মানুষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে দেখা যায়।
এদিকে লন্ডনে মিছিলে অংশ নেওয়া প্যালেস্টাইন ইয়ুথ মুভমেন্টের সদস্য জিনাইন হোরানি জানান, বিক্ষোভকারীরা গাজায় অবিচারের জন্য ক্ষুব্ধ এবং ফিলিস্তিনি অধিকারের জন্য প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আল জাজিরাকে জিনাইন বলেন, ‘সকলের অনুভূতি রাগ এবং হতাশা এক। গত ৭ অক্টোবর থেকে আমরা প্রতি সপ্তাহে রাজপথে নামছি।’
জিনাইন আরও বলেন, ‘ব্রিটিশ জনগণ গাজায় যুদ্ধবিরতিকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করছে। কিন্তু দেশটির রাজনীতিবিদরা গণহত্যাকে অর্থায়ন ও সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন। শেষ পর্যন্ত আমরা জানি যে, ঘটনাগুলি বিশাল পরিকল্পনার অংশ। ন্যায়বিচারের দীর্ঘ যাত্রায় আমরাই জয়ী হবো। ফিলিস্তিন মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তায় নামতে থাকব, চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখব।’
/ফয়সাল
আরো পড়ুন