ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে কি সুবিধা পেয়েছিল ভারত?
বন্যার কারণ দেখিয়ে বুধবার ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দিয়েছে ভারত। ১৯৯৩ সালের পর প্রথমবারের মতো এই প্রকল্পের বাঁধ খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায়ও বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। বাঁধ খুলে দেওয়া স্বস্তিতে নেই ত্রিপুরা কর্তৃপক্ষও। কারণ, বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে ত্রিপুরার বন্যা পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে। সমভূমিতে নদীর পানি ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। যেই সুফল পাওয়ার জন্য এই বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল সেই সুফল কি আদতে পেয়েছিল ত্রিপুরা? আসুন জেনে নেই সেই প্রশ্নের উত্তর।
ডুম্বুর ড্যাম বা বাঁধ ১৯৭৪ সালে ত্রিপুরার তীর্থমুখে নির্মিত হয়েছিল। এই এলাকাটি তীর্থস্থান হিসাবে ব্যবহৃত হতো। বর্তমান ডুম্বুর হ্রদ থেকে তিন কিলোমিটার দূরে এই বাঁধটি নির্মিত হয়েছিল। ৪৪টি দ্বীপসহ মনোরম হ্রদটি একসময় ১২ হাজার পরিবার এবং ২৭ হাজার আদিবাসী টিপরাসা কৃষকের ধান ক্ষেত ছিল।
এই রাইমা উপত্যকার উর্বর জমিতে ১২ হাজার আদিবাসী পরিবার বাস করতো। এখানেই মিলিত হয়েছে রাইমা-সাইমা (সারমা) নদী। আর এই উপত্যকা তৈরি করেছিল গোমতি নদী।
১৯৭৪ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেস রাইমা উপত্যকার আদিবাসীদের সম্পর্কে বাস্তবতা এবং ফলাফলের কোনো হিসাব না করেই উর্বর জমিতে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। বাঁধের কারণে ২৭ হাজার আদিবাসী টিপরাস তাদের ঘরবাড়ি হারায়। তাদের সব জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়।
ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি ১৯৭৬ সালে চালু করা হয়েছিল। এর দুটি ইউনিটের ১০ মেগাওয়াট উৎপাদন করার ক্ষমতা রয়েছে। ১৯৮৪ সালে স্ট্যান্ডবাই হিসাবে পাঁচ মেগাওয়াটের একটি তৃতীয় ইউনিট নির্মাণ করা হয়েছিল।
জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি প্রত্যাশিত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়েছে। গত পাঁচ বছরে, প্রকল্পটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কারণ হ্রদের ভারী পলির কারণে আশেপাশের দুটি পাহাড়ি শ্রেণি থেকে ব্যাপক মাটি ক্ষয়ের কারণে প্রচুর পরিমাণে বন উজাড় হয়েছে। প্রকল্পে ১৫ মেগাওয়াট উৎপাদন করার কথা ছিল। বাস্তবে এটি ২ থেকে ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। প্রতি বছর দীর্ঘ শুষ্ক মৌসুমে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। কারণ হ্রদের পানির স্তর কমে যায় এবং টারবাইনগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত পানি পায় না।
প্রকল্পের অযৌক্তিকতা বিবেচনা করে রাজ্য সরকার শেষ পর্যন্ত ২০১২ সালে টি পরিত্যাগ করার এবং ডম্বুর হ্রদের ৪৪টি দ্বীপের পাশাপাশি আদিবাসী গ্রামের কাছাকাছি জমিগুলোকে পর্যটন স্পটে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সূত্র: টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া
ঢাকা/শাহেদ