ইরানের অর্থনৈতিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলা বিপজ্জনক: কাতারের প্রধানমন্ত্রী
কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান বিন জাসিম আল থানি।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান বিন জাসিম আল থানির সঙ্গে নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এইদে ফোনে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে কাতারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।
শুক্রবার (২০ জুন) ফোনালাপে শেখ মোহাম্মদ ইসরায়েলের বারবারের আগ্রাসন ও হামলার নিন্দা জানান। ইসরায়েলের এই হামলা শান্তি প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং অঞ্চলটিকে একটি বিস্তৃত যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ইরানে অর্থনৈতিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে ইসরায়েলের হামলা গভীর বিপদ তৈরি করছে এবং এর ফলে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিণতি দেখা দিতে পারে।
ইসরায়েলের হামলার শিকার তেহরানের আরেক হাসপাতাল: ইরান
তেহরানে আরেকটি হাসপাতাল ইসরায়েলের হাামলার শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার (২০ জুন) ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এটি ইরানের তৃতীয় হাসপাতাল, যা হামলার শিকার হয়েছে। ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রকেও বর্বরভাবে লক্ষ্যবস্তু করেছে শত্রু জায়নবাদীরা।”
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, “এই সাত দিনের কাপুরুষোচিত আগ্রাসনের মধ্যে ইসরায়েল ছয়টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সনদের লঙ্ঘন করেছে।”
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে পুতিন-জিনপিং ফোনালাপ
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং টেলিফোনে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং ইসরায়েলের কার্যক্রমকে জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন হিসেবে কঠোরভাবে নিন্দা জানিয়েছেন।
তুরস্কের সংবাদ সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুই নেতার মধ্যে টেলিফোনে কথা হয়েছে।
ক্রেমলিনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউরি উশাকভ বৈঠকের বিষয়ে বলেন, ফোনালাপের সময় উভয় নেতাই একই রকম দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেন এবং বলেন, এ সংকটের সমাধান সামরিক উপায়ে সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, “রাশিয়া ও চীন পুরোপুরি একমত যে, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন।”
পুতিন বলেন, প্রয়োজনে রাশিয়া এই সংঘাতে মধ্যস্থতার ভূমিকা নিতে প্রস্তুত। দুই নেতা সম্মত হন যে আগামী দিনে তাদের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো তথ্য ভাগাভাগি ও সমন্বয়ে কাজ করবে।
আলোচনায় আরো উঠে আসে সদ্যসমাপ্ত জি-৭ সম্মেলনের প্রসঙ্গ। উশাকভ জানান, উভয় নেতা সম্মেলনের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা লক্ষ করেছেন এবং সম্মেলনটিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জন্য ব্যর্থ মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেন।
চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার বক্তব্যে বলেন, যুদ্ধবিরতি এখন জরুরি এবং আন্তর্জাতিক বিরোধের সমাধানে বলপ্রয়োগ সঠিক পথ নয়।
জিনপিং আরো বলেন, “চীন সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় জোরদার করতে এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।”
দুই নেতা রাশিয়া-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনা করেন এবং আগামী ২ সেপ্টেম্বর চীনে পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অনুষ্ঠানে সম্মত হন।
ইরানে কৌশলগত মার্কিন অস্ত্রের ব্যবহার হবে বিপর্যয়কর: রাশিয়া
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের বিরুদ্ধে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে তা হবে একটি বিপর্যয়কর ঘটনা।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম জানায়, পেসকভ এমন কিছু সংবাদমাধ্যম সম্পর্কে মন্তব্য করছিলেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে আলোচনা চলছে।
কৌশলত পারমাণবিক অস্ত্র বলতে পেশকভ বুঝিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বাঙ্কার বাস্টার বোমা। এই বোমা মাটির ২০০ ফুট গভীরে গিয়ে আঘাত করে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষমত। ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় এই বোমা ফেলতে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েল। ট্রাম্পও বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন।
এদিকে, হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ইরান ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। ইসরায়েলের চলমান হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুক্ত হতে পারে; এমন ইঙ্গিতও মিলেছে।
রাশিয়া বারবার যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করছে, তারা যেন ইসরায়েলি হামলায় অংশ না নেয়। পেসকভ বলেছেন, “এই ধরনের হস্তক্ষেপ শুধু ওই অঞ্চলকে নয়, গোটা বিশ্বকে বিপজ্জনক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। এতে পারমাণবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি বেড়ে যাবে।”
রুশ কূটনীতিকরা স্পষ্ট করে বলছেন, মার্কিন পারমাণবিক হস্তক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের ভারসাম্য ধ্বংস করবে। সংঘাত যদি পারমাণবিক মাত্রায় পৌঁছায়, তার প্রতিক্রিয়া সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলে উদ্বেগ তীব্রতর হচ্ছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সিদ্ধান্তগুলোর ওপর এখন গোটা অঞ্চল তথা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে।
১৩ জুন ইসরায়েলে ইরানে ভয়াবহ হামলা চালায়। ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি দুয়ারে রয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে এই হামলা চালানো হলেও আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা বলছে, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারপরও ইসরায়েল হামলা অব্যাহত রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে এই হামলায় অংশ নিতে বারবার তাগিদ দিচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। পারমাণবিক সক্ষমতা গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বললেও নেতানিয়াহু আবার রেজিম চেঞ্চের কথাও বলছেন। তবে ইউরোপসহ বাকি বিশ্বের নেতারা এই যুদ্ধ চাচ্ছেন না।
ঢাকা/রাসেল