কেয়ামত দেখছে গাজার বাসিন্দারা
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গত সপ্তাহে আনা আহত কর্মীর জন্য একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ গাজা শহরে প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র দলগুলোর মধ্যে ত্রাণ কনভয় থেকে শত শত মূল্যবান আটার বস্তা ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াইয়ে তিনি কিছুক্ষণ আগে আহত হয়েছিলেন। তার আসার এক ঘন্টার মধ্যেই অ্যাসল্ট রাইফেলধারী লোকেরা হাসপাতালে আক্রমণ করে। তারা চিকিৎসা কর্মীদের উপর হামলা চালায়, সরঞ্জাম ভাঙচুর করে এবং যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পরপরই অন্যান্য সশস্ত্র লোক এসে পৌঁছায় এবং হাসপাতাল প্রাঙ্গণে গুলিবর্ষণ শুরু করে।
হাসপাতালটিকে কিছুক্ষণ পরে আরো খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। গাজায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য আরেকটি বাহিনী পাঠায় যারা এই গুলিবর্ষণে যোগ দেয়। এখন একটি নতুন বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধ কেবল তখনই শেষ হয় যখন বিরোধী বন্দুকধারীরা পালিয়ে যায়।
গার্ডিয়ানের কাছে চিকিৎসা কর্মী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বর্ণনা করা এই ঘটনাটি প্রায় ২১ মাস ধরে চলা যুদ্ধের পর গাজায় নতুন সহিংসতা এবং নৈরাজ্যের এক ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি।
একজন মানবিক কর্মকর্তা বলেন, “(এই) দলগুলো যুদ্ধ করছে এবং ইসরায়েলি বিমান হামলা বা সেনারা মানুষকে গুলি করছে।হামাস এখনো সেখানেই আছে, অথচ মাইলের পর মাইল ধ্বংসস্তূপ রয়েছে যেখানে হতাশ মানুষ আগুনে রান্না করছে, তাঁবুতে বাস করছে এবং খুব ক্ষুধার্ত। এটি এক ধরণের সায়েন্স ফিকশন সিনেমার মতো।”
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এখনো পর্যন্ত, ইসরায়েলি আক্রমণে ৫৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। উপত্যকার ২৩ লাখ জনসংখ্যার বেশিরভাগই বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং গাজার বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আরো সশস্ত্র ব্যক্তিরা এই যুদ্ধে যোগ দিয়েছে এবং ইসরায়েলি আক্রমণ অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতা ও প্রভাবের জন্য তীব্র লড়াই তীব্রতর হয়েছে। এই সশস্ত্র ব্যক্তিদের একটি গোষ্ঠীর নাম হচ্ছে পপুলার ফোর্স। এটি ইসরায়েলে বাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। সাবেক দণ্ডপ্রাপ্ত চোরাকারবারী ইয়াসের আবু শাবাব এটি পরিচালনা করে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নিশ্চিত করেছেন যে, ইসরায়েল হামাসের বিরোধিতাকারী গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ করে।
ইসরায়েলি হামলায় গাজার শাসক দল হামাসের অনেক নেতা নিহত হয়েছে। হামলার কারণে হামাসের সদস্যদের লুকিয়ে থাকতে হয় বিভিন্ন স্থানে। এর ফলে গাজার ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোকে নিরাপত্তা দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আবার গাজার পুলিশ সদস্যদেরও হত্যা করছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর ফলে এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ নেই গাজায়। আর এই সুযোগটিকে ইসরায়েলের মদদে কাজে লাগাচ্ছে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া অপরাধীরা।
ঢাকা/শাহেদ