ট্রাম্পের সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত: মৃত্যু ঝুঁকিতে দেড় কোটি মানুষ
বছরে গড়ে ৭ লাখ শিশুর মৃত্যু ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিদেশি মানবিক সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ তহবিল কমানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিবিসি জানায়, দ্য ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই পদক্ষেপের ফলে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশই শিশু।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত মার্চ মাসে জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, ইউএসএআইডি’র ৮০ শতাংশেরও বেশি কর্মসূচি বাতিল করেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন।
ল্যানসেট প্রতিবেদনের সহ-লেখক ডেভিড রাসেলা এক বিবৃতিতে বলেছেন, “অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য, এর ফলে যে ধাক্কা আসবে তা বিশ্বব্যাপী মহামারি বা একটি বড় সশস্ত্র সংঘাতের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।”
তিনি আরো বলেন, “এই তহবিল হ্রাসের কারণে গত দুই দশকে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য খাতে অর্জিত অগ্রগতি হঠাৎ থেমে যেতে পারে, এমনকি তা উল্টে যেতে পারে।”
গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় মানবিক সহায়তা সম্মেলন হচ্ছে স্পেনের সেভিয়া শহরে। জাতিসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের বহু নেতারা। ঠিক এমন সময় এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো।
২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৩৩টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখিয়েছেন, ইউএসএআইডি’র সহায়তা ওই সময়ের মধ্যে ৯ কোটি ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে সহায়তা করেছে।
তারা আরো বলেন, চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৮৩ শতাংশ বাজেট ছাঁটাই যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু ঘটতে পারে।
এই মৃত্যুর মধ্যে ৪৫ লাখের বেশি শিশু থাকবে যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে—অর্থাৎ বছরে গড়ে ৭ লাখ শিশুর মৃত্যু ঘটতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসন, এর আগে ইলন মাস্কের নেতৃত্বে খরচ কমানোর উদ্যোগ হিসেবে ফেডারেল কর্মী সংখ্যা কমাতে কাজ করেছিল। প্রশাসনের দাবি, ইউএসএআইডি ‘উদারপন্থী প্রকল্পগুলোকে সহায়তা দিচ্ছে’।
এখন পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সহায়তা প্রদানকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে কাজ করেছে, যার বেশিরভাগই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে।
রুবিও বলছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে এখনও হাজারটা কর্মসূচি রয়েছে। যা কংগ্রেসের পরামর্শক্রমে ‘আরো কার্যকরভাবে’ পরিচালিত হবে। কিন্তু জাতিসংঘের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মতে, বাস্তব পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না।
গত মাসে, জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছিলেন, কেনিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে শত শত মানুষ ধীরে ধীরে অনাহারে মরছে, কারণ মার্কিন সহায়তা কমে যাওয়ায় খাদ্য সরবরাহ রেকর্ড পরিমাণে কমে গেছে।
ঢাকা/ইভা