ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘আমি এখানেই থাকব এবং এখানেই মরব’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৫, ৯ আগস্ট ২০২৫  
‘আমি এখানেই থাকব এবং এখানেই মরব’

বারবার বাস্তুচ্যুত। তাঁবু শিবিরে অথবা তাদের ঘরের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তারা বসবাস করতে বাধ্য। তারা ক্ষুধার্ত এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম থেকে বঞ্চিত।

যুদ্ধের ২২ মাস পর ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সিদ্ধান্তের পর প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি আরেকটি বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এই ধরনের আক্রমণ তাদের ভূখণ্ডের দক্ষিণে সরে যেতে এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করতে বাধ্য করবে।

 ৫৫ বছর বয়সী মা উম্মে ইব্রাহিম বানাত মূলত উত্তর গাজার বাসিন্দা। তিনি ইতিমধ্যে চারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। 

বানাত বলেন, “আজ সকালে গাজা শহর থেকে সরিয়ে নেওয়ার খবর শোনার পর আমি উদ্বিগ্ন এবং ভীত বোধ করছি। আমরা শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে কোথায় যাব? আমি কসম দিয়ে বলছি, আমরা বাস্তুচ্যুতি, অনাহার এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তাড়িয়ে দেওয়ায় ক্লান্ত। এখন আমরা জীবন্ত লাশ।”

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় শুক্রবার জানিয়েছে, নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা শহর দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। ইসরায়েলি চ্যানেল ১২ অনুসারে, এই পরিকল্পনার অর্থ হবে ভূখণ্ডে স্থল সেনা পাঠানো, হাজার হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা, ভূখণ্ডে খাদ্য সরবরাহের প্রচেষ্টাকে আরো ব্যাহত করা এবং গাজা শহর ও অন্যান্য অঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে উপত্যকার দক্ষিণ অংশে সরে যেতে বাধ্য করা।

বানাতের মেয়ে মরিয়ম তার স্বামী এবং সন্তানদের সাথে নিহত হয়েছেন।

তিনি বলেন, “গাজা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে - তারা আর কী করতে পারে? আমরা আমাদের যৌবনের সেরাটা হারিয়েছি; আমাদের অঞ্চল স্থল, সমুদ্র এবং আকাশ দিয়ে ঘেরা একটি বিশাল কারাগার; ধ্বংস অসহনীয় হয়ে উঠেছে; রোগ ছড়িয়ে পড়ছে, যতদূর চোখ যায় ততদূর তাঁবু ছড়িয়ে আছে, পানি দূষিত, পাগলের মতো দাম, হাসপাতাল ধ্বংসস্তূপ, আমাদের জীবন একেবারে করুণ! তারা আর কী চায়?”

যদিও গাজা শহরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা এখনো কোনো উচ্ছেদের আদেশ পাননি, তবুও অনেকেই ইতিমধ্যেই আবারো চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার ছুটছেন দক্ষিণে বসবাসের জন্য একটি নিরাপদ জায়গা খুঁজে পাওয়ার আশায়।

চার সন্তানের জনক এবং গাজার রিমাল পাড়ার বাসিন্দা ৩৫ বছর বয়সী আবু নাসের মুশতাহা বলেন, “যদি আমাদের উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হয়, তাহলে আমি সবকিছু ছেড়ে চলে যাব এবং আমার পরিবার ও সন্তানদের জন্য ভয়ে চলে যাব। থাকার খরচ অনেক বেশি হবে। আমি ইতিমধ্যেই অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছি; যুদ্ধের শুরুতে ইসরায়েলি দখলদাররা প্রতিবেশী একটি বাড়িতে বোমা হামলা চালালে আমার মা নিহত হন।”

তবে ৪৭ বছর বয়সী ইব্রাহিম আবু আল-হুসনি বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি যুদ্ধের সময় তার ২৩ বছর বয়সী বড় ছেলেকে হারিয়েছিলেন।

ইবাহিম বলেন, “এটা আমাদের ভূমি যেখানে আমরা শৈশব থেকে বেড়ে উঠেছি এবং আমরা এটা সহজে ছেড়ে দেব না।আমি এই শহর ছেড়ে যাব না। আমি এখানেই থাকব এবং আমি এখানেই মরব।”

ঢাকা/শাহেদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়