ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

জেলেনস্কি এবার ট্রাম্পের কথা শুনেছেন বেশি, বলেছেন কম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৫, ১৯ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ১৩:১৪, ১৯ আগস্ট ২০২৫
জেলেনস্কি এবার ট্রাম্পের কথা শুনেছেন বেশি, বলেছেন কম

যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির এবারের বৈঠকের পরিবেশ গত ফেব্রুয়ারির চেয়ে অনেকটাই আলাদা ছিল। আগের বৈঠকে দুই নেতার মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছিল, যার ফলে বৈঠকটি ভেস্তে গিয়েছিল। তবে এবার পরিবেশ ছিল অনেকটাই সৌহার্দ্যপূর্ণ।

গতকাল সোমবারের বৈঠকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, আলোচনা যেন কোনোভাবে ভেস্তে না যায়, তা নিশ্চিত করতে ইউক্রেনীয় পক্ষ বিশেষ সতর্ক ছিল। ফেব্রুয়ারির মতো এবারের বৈঠকের আগেও ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে মত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, কোনো ধরনের তর্কে জড়িত না হওয়ার জন্য জেলেনস্কিকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে মনে হচ্ছিল।

আরো পড়ুন:

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে কলারযুক্ত স্যুট পরেছিলেন জেলেনিস্ক। এর আগে স্যুট না পরার জন্য ভর্ৎসনার শিকার হয়েছিলেন তিনি। এবার ট্রাম্প জেলেনস্কির পোশাকের প্রশংসা করেন।

ফেব্রুয়ারির বৈঠকে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ না দেওয়ায় জেলেনস্কিকে অকৃতজ্ঞ বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। গতকালের বৈঠকে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এদিন দেওয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের প্রথম ১০ সেকেন্ডেই জেলেনস্কি চারবার ‘ধন্যবাদ’ শব্দটি উচ্চারণ করেন। এটি বৈঠকের আয়োজকদের বেশ খুশি করেছে। 

বিবিসি আরো জানিয়েছে, সোমবার হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের সময় জেলেনস্কি খুব কম কথা বলেছেন- অথবা হয়তো তিনি বলতে আগ্রহী ছিলেন না এই ভয়ে যে, ট্রাম্প যা শুনতে চান তার থেকে তার বলার কথা আলাদা। 

বৈঠক শেষে ট্রাম্প, জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতারা যখন সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হন, তখন তাদের মধ্যে মত পার্থক্য স্পষ্ট হয়।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ উভয়েই বলেন, “ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত।” কিন্তু ট্রাম্প বলেন, “আরো স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার আগে এটি প্রয়োজনীয় নয়।”

জেলেনস্কি এই বিষয়ে স্পষ্টতই নীরব ছিলেন।

সোমবারের রুদ্ধদ্বার আলোচনায় ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং জেলেনস্কি ও পুতিনের মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তায় কী ধরনের গ্যারান্টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, অথবা পুতিনের সাথে একই কক্ষে জেলেনস্কির মুখোমুখি বৈঠক কীভাবে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সাহায্য করবে, সে সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

তবে বৈঠক শেষে জেলেনস্কি নিরাপত্তা নিশ্চয়তাকে ‘যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি প্রয়োজনীয় সূচনা বিন্দু’ হিসেবে অভিহিত করেন। 

হোয়াইট হাউজে সোমবারের আলোচনা বিষয়বস্তু তুলে ধরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ই আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল। যুদ্ধ বন্ধের জন্য এটা প্রয়োজনীয় ‘সূচনা বিন্দু’ হবে।”

যেসব দেশ ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে বলে জানান জেলেনস্কি।

তিনি বলেন, “নিরাপত্তার নিশ্চয়তার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে ৯০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র চুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর মধ্যে থাকবে মার্কিন অস্ত্র যা ইউক্রেনের কাছে নেই, যার মধ্যে রয়েছে বিমান ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী ব্যবস্থা এবং অন্যান্য জিনিস যা আমি প্রকাশ করব না।”

জেলেনস্কি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনীয় ড্রোন কিনবে। এ পদক্ষেপ ইউক্রেনের চালকবিহীন বিমানের উৎপাদনের জন্য অর্থায়নে সহায়তা করবে।

বৈঠকে যদিও কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি, তবে জেলেনস্কির দাবি, আগামী ১০ দিনের মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি হতে পারে।

ইউক্রেনীয় নেতা অবশ্য পুতিনের সঙ্গে তার সম্ভাব্য বৈঠকের বিষয়ে কথা বলতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। সাংবাদিকদের জেলেনস্কি বলেন, তিনি তার রাশিয়ান প্রতিপক্ষের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত এবং যদি মস্কো রাজি হয়, তাহলে ট্রাম্প আলোচনায় যোগ দিতে পারেন।

পুতিন এখনও পর্যন্ত জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের বিরোধিতা করে আসছেন।

বিবিসি বলছে, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা সংবাদমাধ্যমের সামনে একটি বিষয় তুলে ধরতে অনিচ্ছুক বলে মনে হয়েছিল, তা হলো রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে ইউক্রেনের সম্ভাব্য আঞ্চলিক ছাড়।

জেলেনস্কি সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে তিনি ট্রাম্পকে ইউক্রেনের মানচিত্র দেখিয়ে জোর দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া গত ১,০০০ দিনে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের ১ শতাংশেরও কম দখল করতে সক্ষম হয়েছে। জেলেনস্কি বলেন, এটি হোয়াইট হাউজের জন্য একটি নতুন খবর ছিল। যা স্পষ্টতই ট্রাম্পের মেজাজ পরিবর্তন করতে সাহায্য করেছে।

তিনি আরো বলেন, ওভাল অফিসের মানচিত্রে রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চল হিসেবে যা দেখানো হয়েছে, তা তিনি প্রত্যাখান করেছেন। 

বিবিসি বলছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে তার সর্বশেষ হোয়াইট হাউজের বৈঠক দিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত বলে মনে হয়েছে। তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠককে ‘উষ্ণ’ বলে অভিহিত করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়