ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বান্দরবানে জামায়াতুল আনসারের ৯ সদস্য গ্রেপ্তার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪১, ১৩ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ১৩:৪৭, ১৩ মার্চ ২০২৩
বান্দরবানে জামায়াতুল আনসারের ৯ সদস্য গ্রেপ্তার

বান্দরবান থেকে জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

সোমবার (১৩ মার্চ) র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন জঙ্গি সংগঠনটির পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ কমান্ডার দিদার হোসেন ওরফে চম্পাই। বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’র ছত্রছায়ায় নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র এই সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয় বান্দরবানের টনকাবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে। এ সময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং থেকে জানানো হয়, এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ।

র‌্যাব জানায়, বান্দরবানের ওই এলাকায় রোববার মধ্যরাতে জঙ্গি অভিযানে নামে র‌্যাব। বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়া কয়েকজন তরুণের বিষয়ে খোঁজ করতে গিয়ে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনটির খোঁজ পাওয়ার পর গত বছরের অক্টোবর থেকে পাহাড়ে র‌্যাবের এই অভিযান চলছে। ওই সময় থেকে ধারাবাহিক অভিযানে বিভিন্ন সময়ে ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র অনেককে গ্রেপ্তার করেছে এই এলিট বাহিনী। পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ বা বম পার্টির সম্পৃক্ততা রয়েছে এই জঙ্গি সংগঠনটির সঙ্গে।

অব্যাহত অভিযানের মধ্যে গত ২৩ জানুয়ারি র‌্যাব জানায়, জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতাকে কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা থেকে তারা গ্রেপ্তার করে। পাহাড়ে-সমতলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তাড়া খেয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল জঙ্গিরা।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মো. দিদার হোসেন ওরফে মাসুম  ওরফে চাম্পাই, আলআমিন সর্দার  ওরফে আব্দুল্লাহ  ওরফে বাহাই,  সাইনুন  ওরফে রায়হান ওরফে হুজাইফা, তাহিয়াত চৌধুরী ওরফে পাভেল ওরফে হাফিজুল্লাহ, মো. লোকমান মিয়া, মো. ইমরান হোসেন ওরফে সাইতোয়াল, মো. আমির হোসেন, মো.আরিফুর রহমান ওরফে লাইলেং ও শামিম মিয়া ওরফে রমজান।

র‌্যাব আরও জানায়, তারা নিকটাত্মীয়, স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তি বা বন্ধুদের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে  সংগঠনে যোগদান করেন। বিভিন্ন সময়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের উপর নির্যাতন-নিপীড়নের ভিডিও দেখানো, রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন জ্ঞান প্রদান করার মাধ্যমে তাদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে উৎসাহী করে তুলতো। তথাকথিত হিজরতের প্রথমে তাদের সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের তত্বাবধানে রেখে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শারীরিক কসরত, জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও মনস্তাত্বিক জ্ঞান দিতো। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন সময় তাদের সমতল থেকে পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হতো। পার্বত্য অঞ্চলে তারা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র চালনা, অন্যান্য সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, বোমা তৈরি বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে চম্পাই পাহাড়ে প্রশিক্ষণের কমান্ডার ছিলেন।

বিভিন্ন সময় কেএনএফ এর নাথান বম, বাংচুং, রামমোয়, ডিকলিয়ান, পাহল এবং কাকুলীসহ অনেকেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আসতেন। প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র ও অন্যান্য রশদ তারা অর্থের বিনিময়ে কেএনএফ এর সদস্যদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতেন এবং কেএনএফ এর সদস্যরা বিভিন্ন সময় জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতেন।

পরবর্তীতে পার্বত্য অঞ্চলে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে তারা সংগঠনের আমীর মাহমুদের নির্দেশে এবং নিজেদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য রামজুদান থেকে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রথমে সাইজামপাড়া, মুন্নুয়াম পাড়া, রোয়াংছড়ি, পাইক্ষং পাড়া, তেলাং পাড়াসহ পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন।পরবর্তীতে পাইন্দূ খাল, ক্যাপলং পাড়া, দুর্নিবার পাড়া, রামধার পাড়া, ওয়াই জংশন হিল, ১৬ মাইল বাজার, ব্রিকফিন্ড বাজার এলাকা হয়ে গত ৩-৪ দিন ধরে টংকাবতী এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার হন। অভিযান চলাকালীন ঘটনাস্থল থেকে ৫/৬ জন জঙ্গি পালিয়ে যায়।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত চাম্পাই ২০১৮ স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হন। পরবর্তীতে সংগঠনের আমীর মাহমুদ এবং হানজালার মাধ্যমে সে সংগঠনে যোগদান করে এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির তত্বাবধানে থেকে জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন তাত্বিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংগঠনের আমীর মাহমুদের সাথে বান্দরবানের থানচী ও বাকলাইপাড়া হয়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য পাহাড়ে যান। পাহাড়ে আসার পর সে সব ধরনের অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণকালীন তার দক্ষতা ও আনুগত্যের জন্য তাকে আমীর মাহমুদের নির্দেশনায় পাহাড়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হলে তার নেতৃত্বে ৩২ জনের একটি দলে বিভক্ত হয়ে পার্বত্য অঞ্চলের সাইজামপাড়া, মুন্নুয়াম পাড়া, রোয়াংছড়ি, পাইক্ষং পাড়া, তেলাং পাড়াসহ পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন। 

/মাকসুদ/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়