ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ফেসবুকে ফাঁদ পেতে ব্ল্যাকমেইল, অবশেষে ধরা ব্যাংক কর্মকর্তা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ৫ জুন ২০২৩  
ফেসবুকে ফাঁদ পেতে ব্ল্যাকমেইল, অবশেষে ধরা ব্যাংক কর্মকর্তা

সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার অভিযুক্ত মো. মনির হোসাইন

বাইরে বাঁশের বেড়া, টিনের ছাউনি; কিন্তু ভেতরে এসি, অ্যাটাচ বাথরুমসহ এলাহি আয়োজন। সেখানেই চলত অনৈতিক ও অসামাজিক কার্যকলাপ। এর নেপথ্যে ছিল মো. মনির হোসাইন নামের এক ব্যাংকার কর্মকর্তা। অবশেষে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সোমবার (৫ জুন) বিকেলে সিআইডি সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, সাইবার পুলিশ সেন্টার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলাদেশের সাইবার স্পেসে সংঘটিত যেকোনো অপরাধ নির্মূল ও প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে সাইবার পেট্রোলিং ও মনিটরিং করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। সাইবার পুলিশ সিআইডি‘র কাছে একটি অভিযোগ আসে, ‘এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপের এক নারী সদস্যকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। তদন্তে জানা যায়, ওই নারী সদস্যকে ফেসবুক গ্রুপের মডারেটর বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাকে গ্রুপে আরও ক্ষমতাবান করাসহ নানা সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখায় গ্রুপের অ্যাডমিন মনির হোসাইন। ওই নারী সদস্যের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া-দাওয়া করে মনির। বিভিন্ন ছলনা করে সখ্য গড়ে তোলে। একপর্যায়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে কৌশলে সে মূহুর্তের ছবি ও ভিডিও করে রাখে সে। পরে সেই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আরও একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করে মনির। এছাড়াও সে একাধিক নারী সদস্যদের সঙ্গে একই কৌশলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। 

অনৈতিক কাজের জন্য রাজধানীর বাড্ডায় গোপন হেরেমখানা তৈরি করে মনির। বাইরে বাঁশের বেড়া, টিনের ছাউনি। কিন্তু, ভেতরে এসি, উন্নত শয়নকক্ষ, অ্যাটাচ বাথরুম। আছে ইয়াবা সেবনের ব্যবস্থা। ছিল একাধিক গোপন ক্যামেরাও। মনির এই গোপন ক্যামেরা দিয়ে তার অনৈতিক কাজের ছবি-ভিডিও করত।  

সিআইডি আরও জানায়, গত ৪ জুন সন্ধ্যায় সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্টের একটি টিম ঢাকার রামপুরায় অভিযান চালিয়ে মনির হোসাইনকে গ্রেপ্তার করে। 

মনির ‘এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ’ গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে একাধিক নারীকে গ্রুপের মডারেটর বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ভিডিও কলে কথা বলে ও তার স্ক্রিন রেকর্ড করে রাখে। পরবর্তীতে সেই স্ক্রিন রেকর্ড ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে এবং কৌশলে তাও ভিডিও করে রাখে বা ছবি তুলে রাখে। পরবর্তীতে আবার সেই ছবি ও ভিডিও দিয়ে পুনরায় ব্ল্যাকমেইল করে প্রতিনিয়ত তাদের তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করে। ওই নারীকে জোর করে ছুরির ভয় দেখিয়ে পর্যন্ত ধর্ষণ করত মনির। তার স্বামী অফিসে চলে গেলে মনির কখনো কখনো সে ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে হানা দিত। অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হন সেই নারী। 

সিআইডির তদন্তে আরও জানা যায়, বিভিন্ন মেয়েকে নিজের কব্জায় নিয়ে টাকার বিনিমেয়ে ধনাঢ্য লোকদের কাছে পাঠাত মনির। সেই নারী সামান্য টাকা পেলেও মনির পেত সিংহভাগ। এভাবে সে মেয়েদের ওপর জুলুম এবং অত্যাচার করে আসছিল। কিন্তু, সিআইডির কাছে তাকে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হলো।

মাকসুদ/রফিক 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়